স্টাফ রিপোর্টার: ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত বহু। নিখোঁজ আরও অনেকে। পাশাপাশি দুই বাঙ্কে ছিলেন। সন্ধে সাতটা নাগাদ সজোরে এক ঝাঁকুনি। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা শৈলেন রায়ের কথায়, যেন ঝালমুড়ি মাখার মতো কেউ নাড়িয়ে দিল ট্রেনের বগিটা। পাশের মানুষটা সেই যে হারিয়ে গিয়েছে, শনিবার রাত পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
জলপাইগুড়ির বাসিন্দা শৈলেন রায়-তরুণ রায় সম্পর্কে জামাইবাবু আর শ্যালক। করমণ্ডলে যাচ্ছিলেন চেন্নাইয়ে। জামাইবাবু শৈলেন রায়ের খোঁজ মিললেও নিখোঁজ তরুণ রায়। ছেলের চিন্তায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছেন মা। তরুণবাবুর মতো অনেকেই এখনও নিরুদ্দেশ। আশঙ্কা একটাই। অসংখ্য দেহ রেলের চাকায় পিষে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। মুখের মাংস বেরিয়ে এমনই অবস্থা সেদিকে তাকানো যায় না। নিখোঁজরা তার মধ্যে, বিশ্বাস করতে চান না বাড়ির লোক। শেষ আশাটুকু আঁকড়ে রয়েছেন তাঁরা। হয়তো খোঁজ পাওয়া যাবে প্রিয়জনের।
করমণ্ডল-হামসফরের সংঘর্ষে আহত হাজার ছাড়িয়েছে। ওড়িশার চার হাসপাতালে আপাতত চিকিৎসা চলছে তাঁদের। গোপালপুর, ভদ্রক, বালেশ্বর বাহানাগা হাসপাতালে ছবি হাতে ঘুরছেন অসংখ্য মানুষ। কাতর অনুনয়, ‘‘একটু দেখুন না। কোত্থাও খুঁজে পাচ্ছি না।’’ বালেশ্বরের সোরো সরকারি হাসপাতালে রাত আটটা পর্যন্ত ২৩টি নিথর দেহ এসেছে। তার মধ্যে আটটি দেহ চেনাই দায়। যাঁরা এখনও খুঁজে পাননি প্রিয়জনকে, দু’চোখ ভরা জল নিয়ে মৃতদেহের মুখের চাদর তুলেছেন। সংঘর্ষের তাণ্ডবে মৃতদেহগুলোর মুখের যা অবস্থা, মানুষ বলে চেনাই দায়। নাকের জায়গায় স্রেফ একটা গর্ত। দু’চোখ, কপাল থেকে কেউ যেন মাংস খুবলে নিয়েছে।
এর মধ্যেই কারও কপাল মন্দের ভাল। দাহ করার জন্য প্রিয়জনের দেহটুকু পেয়েছেন। সুমন-জয়ন্তরা পাঁচ বন্ধু মিলে করমণ্ডলে চেন্নাই যাচ্ছিলেন। ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর অন্ধকার ঘেঁটে একে অপরকে খুঁজে পেলেও নিখোঁজ ছিলেন সুমন। খোঁজ খোঁজ খোঁজ। শেষে এই সোরো হাসপাতালে হাতের জড়ুল দেখে সুমনের নিথর দেহ মেলে। এখনও অসংখ্য মালিকানাহীন দেহ পড়ে আছে। এনডিআরএফ কর্মীরাও জানেন, সে দেহ পুড়িয়ে দিতে হবে তাঁদেরই। দুই ট্রেনের সংঘর্ষে মানুষগুলির মণ্ড পাকিয়ে এমনই অবস্থা চেনার উপায় নেই। নিয়ম অনুযায়ী বাহাত্তর ঘণ্টা থাকবে এনডিআরএফ হেফাজতে। তারপর…।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.