সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কোথাও তাসের আড্ডা। কোথাও আবার ওষুধ দোকান গুলিতে একেবারে ঠাসাঠাসি হয়ে কেনাকাটা। সেই সঙ্গে রামনবমীতে হনুমান মন্দিরগুলিতে সোশ্যাল ডিসটেন্সিং ছাড়াই উপচে পড়া ভিড়। বাসন্তী পুজোর মহানবমীতে আরতির সময় প্রায় একই ছবি। না আছে নিরাপদ দূরত্ব। না আছে মুখে মাস্ক। দেখে বোঝার উপায় নেই করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন চলছে।
বৃহস্পতিবার সকাল দশটা। শহর পুরুলিয়ার দেশবন্ধু রোডের একটি তেলেভাজার দোকান হাঁ করে খোলা। রামনবমীতে মতিচুর লাড্ডুর সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে চপ, সিঙ্গাড়া, নিমকি, সেউ সবকিছুই। এই বিষয়ে প্রশ্ন করতেই দোকান মালিকের সটান জবাব, “আমার দোকান তো মিষ্টির। এই যে লাড্ডু বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে মুখ নোনতা করতে তো একটু আধুটি নিমকি, সিঙ্গারা চাই- তাই না?” কিন্তু মিষ্টি দোকান খোলার তো নিয়ম রয়েছে বেলা বারোটা থেকে। তাহলে দশটাতেই ঝাঁপ উঠিয়ে দিয়েছেন কেন? দোকান না খুললে খাব কি?
বেলা সাড়ে দশটা। পুরুলিয়া শহরের অলঙ্গিডাঙার হনুমান মন্দির। মন্দিরের প্রবেশ পথ থেকেই লম্বা করে বৃত্ত আঁকা। সেই বৃত্ত মন্দির কর্তৃপক্ষ নিরাপদ দূরত্বে থাকার বার্তা দিচ্ছে। কিন্তু তা শুনলে তো! বজরংবলীর মূর্তির কাছে ভক্তরা যেন আছড়ে পড়ছেন। পুরোহিতরা বারবার সচেতন করলেও ডোন্ট কেয়ার ভক্তদের। কিছুতেই বুঝতে চাইছেন না সামাজিক মেলামেশাতেই করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নেই। সেইজন্যই লকডাউন।
বেলা সাড়ে এগারোটা। শহর পুরুলিয়ার সরকার পাড়া দুর্গা মন্দির। সেভাবে প্যান্ডেল হয়নি ঠিকই। বাসন্তী পুজোর জৌলুসও নেই। কিন্তু আরতির সময় কচিকাঁচারা যেভাবে ঠাসাঠাসি হয়ে কাঁসর, ঘন্টা বাজিয়ে গেল তা দেখে বোঝার উপায় নেই সরকার নিরাপদ দূরত্বে থাকার বার্তা দিচ্ছে।
প্রায় একই ছবি ঝালদা পুর শহরে। ঘড়ির কাঁটায় বিকাল তিনটা। এই পুর শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের গড়কুলিতে পরিত্যক্ত খাটালে বসেছে তাসের আসর। যেন ওই বিস্তীর্ণ এলাকায় এক, দুটি করে তাসের আটটি আখড়া বসেছে! ঠাসাঠাসি হয়ে যেভাবে চলছে তাসের আড্ডা তাতে দেখে বোঝার উপায় নেই করোনার মারণ থাবায় হু হু করে বাড়ছে ইউরোপ, আমেরিকায় মৃত্যুর সংখ্যা। মনে হচ্ছে বনধের মতো ছুটির দিনের হৈ-হুল্লোড়।
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া প্রান্তিক পুরুলিয়ায় হোম কোয়ারান্টাইন ১৮,১৭৬। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইন ২৮৬। আইসোলেশন চার। এই অবস্থায় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন এই জেলাকে করোনা মুক্ত করতে দিনরাত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। পুরুলিয়ার গ্রামই বেড়া দিয়ে আটকে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ লিখে দিয়েছিল। কিন্তু শহর এলাকায় ঠিক উলটো ছবি। পুলিশ পথে নেমে কখনও ‘দাবাং’-এর ভূমিকায়। কখনও আবার করজোড়ে বোঝাচ্ছেন বাড়িতে যান। বাজারে নয়। দেশকে নিরাপদে রাখতে সরকারের লকডাউন চলছে। কিন্তু পুরুলিয়া আছে পুরুলিয়াতেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.