Advertisement
Advertisement

Breaking News

আলুতে দেদারে মিশছে বিষাক্ত রং, বুঝবেন কীভাবে?

বেছে-দেখে কিনুন।

Potatos are painted with artificial colours, people cheated
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 5, 2017 1:06 pm
  • Updated:September 20, 2019 7:35 pm

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: চন্দ্রমুখী, জ্যোতি আলু বলে যা কিনছেন তা কি আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত?  মোটেই তা নয়। কারণ আলুতেও রঙের মোড়কে বিষ মেশাচ্ছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। শুধুই প্যাকেটজাত বা কেনা খাবারে নয়, কাঁচা শাকসবজিও আর নিরাপদ নয়। পচা, বাসি আনাজ রঙ করে তাকে টাটকা বলে বিক্রি করে চালানোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দিব্যি চলছে এই কারবার। রাসায়নিক মিশ্রিত সেইসব রং মানবশরীরে গিয়ে ক্ষতি সাধন করছে। বিভিন্ন রোগ ছড়াচ্ছে। এমনকী দীর্ঘদিন ধরে সেইসব রং ও রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যুর সম্ভাবনাও থাকে ।

[বাজারে গিয়ে রংচঙে মাছ পছন্দ? আপনিই কিন্তু জালে পড়ছেন!]

Advertisement

সবজির মধ্যে অনেকেরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে আলু। আলু ছাড়া বোধহয় গৃহস্থের হেঁসেল চলে না। সাধারণ বাড়ি থেকে অট্টালিকা, সব ঘরেই আলু ছাড়া তরকারি হয় না। যদি না কারও মধুমেহ বা ডায়াবেটিস থাকে। রান্নার অন্যতম উপাদান হলেও সেই আলুও আর নিরাপদ নয়। বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আলুতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক রঙ মিশ্রণের কারবারের সন্ধান মিলেছে।

Advertisement

মোটা মাইনের ফাঁদ, ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে কৈশোর কাটছে ক্রীতদাস হয়ে ]

IMG_7758

[ সিঁধেল চোররাও হাত পাকিয়েছে সাইবার ক্রাইমে, হয়রান শিল্পাঞ্চলের পুলিশ ]

বাজারে ভাল দেখে বেশি দাম দিয়ে আলু কিনে অনেক সময়ই কিন্তু ঠকতে হচ্ছে ক্রেতাদের। অনেকসময় পচা আলুতে সেইসব রাসায়নিক মিশ্রিত করে রঙটাই একেবারে টাটকা আলুর মতো করে দেওয়া হচ্ছে। ‘ফ্রেশ’ ভেবে সেই আলু কিনে আসলে কিন্তু একজন ক্রেতা না জেনেই বিষ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজে সেই বিষ অজান্তে খেয়েও নিচ্ছেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের তা খাইয়ে ফেলছেন। দীর্ঘদিন ধরে সে সব রাসায়নিক শরীরে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই সব রাসায়নিক পেটে যাওয়ার ফলে চর্মরোগের সম্ভাবনা বাড়ে। আবার পেটের রোগের প্রকোপও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের রাসায়নিক প্রবেশ করার ফলে ক্যানসারের মতো মারণ রোগেরও সম্ভাবনা থাকে।

ভালবাসা ‘ছিনতাই’ করে অপরাধে হাত পাকাচ্ছে আগামীর ক্রিমিনালরা ]

প্রশাসন ওইসব অসাধু কারবারিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে বা নিচ্ছে তা না ভেবে, ক্রেতাকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আলু কেনার আগে হাতে নিয়ে ভালভাবে পরীক্ষা করে নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রংমিশ্রিত আলু হাতে নিয়ে একটু ঘষলেই বোঝা যাবে তাতে রং মেশানো রয়েছে কি না। রংমিশ্রিত থাকলে তা না কেনারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আবার কেউ হয়তো বুঝতে পারলে না রংমিশ্রিত কি না, তাহলে আলু কেনার পর বাড়িতে এনে ভালভাবে জলে ধুয়ে নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রয়োজনে আলু শোধন করে নিতেও বলছেন তাঁরা।

 এক ফোনেই বাড়িতে রান্নার গ্যাস, প্রতিবার ঠকে যাচ্ছেন না তো? ]

প্রশাসনেরও প্রয়োজন রয়েছে এইসব অসাধু কারবারিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার। সম্প্রতি কালনা মহকুমায় এই অসাধু কারবারের চক্রের সন্ধান মিলেছে। কালনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয় প্রশাসনের তরফে। খাদ্য বিপণন দপ্তর, নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির তরফে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গুদামে হানা দিয়ে কর্তারা দেখেন বস্তা থেকে আলু বের করে তাতে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক মিশ্রিত করা হচ্ছে। তারপর তা ফের বস্তাবন্দি করা হচ্ছে। সেই বস্তা পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন বাজারে। মূলত গুণগত মান খারাপ থাকা আলুতেই রাসায়নিক মিশ্রিত করার প্রবণতা রয়েছে।

রসগোল্লার পর এবার স্বীকৃতি চাই ফুলবাড়ির লালমোহন, বেলাকোবার চমচমের ]

গত মাসের শুরুতে শুড়ে কালনার একটি গুদামে হানা দিয়েছিলেন নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সম্পাদক শুভ্রাংশু সিংহরায়, অন্যতম কর্তা সুমিত দত্ত প্রমুখ। সেই গুদাম থেকে একশো বস্তারও বেশি নিষিদ্ধ রং বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যা আলুতে মেশানো হত। একইভাবে কালনাতেও হানা দিয়ে প্রশাসনের কর্তারা প্রচুর রং ও আলু বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। কালনার মহকুমা শাসক নীতিন সিংহানিয়া সবজি, ফল-সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীতে ভেজাল বা বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার রুখতে অভিযান চালান। বিভিন্ন জায়গায় অভিযানে শাক-সবজি ও ফলে নিষিদ্ধ রাসায়নিক রং ব্যবহারের অভিযোগে কয়েকজন অসাধু কারবারিকে ধরা হয়। মোটা অঙ্কের জরিমানাও করা হয়।

জিআই ট্যাগ পেতে চলেছে মহিষাদলের বিখ্যাত গয়না বড়ি ]

potato1

বর্ধমানেও একইভাবে অভিযানে ফল ও সবজিতে রাসায়নিক ও মোমের পালিশ করার ঘটনা সামনে এসেছিল। কিন্তু এই ধরনের অভিযান নিয়মিত না হওয়ার ফলে অসাধু কারবারিরা ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। ফলে কাঁচা শাক-সবজি বা ফলে নিষিদ্ধ রাসায়নিক ব্যবহার করার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। সাধারণ ক্রেতারা সচেতন নন ততটা, ফলে অজান্তে নিত্যদিন টাটকা সবজি বা আলু খেতে গিয়ে বিষ ঢুকিয়ে ফেলছেন শরীরে।

[ চোর-ডাকাত নয়, এক ছাগলের কীর্তিতেই জেরবার পুলিশকর্মীরা ]

বিশেষজ্ঞদের মতে এই সব অসাধু কারবার রুখতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। তার জন্য লাগাতার সচেতনতার প্রচার প্রয়োজন। অসাধু কারবারিদের রুখতে নিয়মিত অভিযান প্রয়োজন বাজারগুলিতে। পাশাপাশি অসাধু কারবারিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়াও প্রয়োজন। না হলে কাঁচা সবজি থেকেই জরা-ব্যাধি ধরতে শুরু করবে অচিরেই। বেশি দেরি হয়ে গেলে বড় ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

সততাই মূলধন, ৪৩ হাজার টাকা পেয়েও ফেরালেন এই চা-বিক্রেতা ]

প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ মিলিতভাবে এই সব অসাধু কারবার বন্ধে উদ্যোগ নিলে তবেই রোখা যাবে খাবারে বা সবজিতে নিষিদ্ধ রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতা। না হলে হয়তো খুব বেশি দেরি নেই, রোগে আক্রান্ত হবেন কোনও নিকট জন। হয়তো শরীরে বাসা বেঁধে থাকা সেই রোগ নীরবে এমন পর্যায়ে চলে যাবে তখন আর কিছুই বোধহয় আর করার থাকবে না। তাই আগে থেকে সচেতন হয়ে আলু কিনতে হবে বাজারে। পরখ করে না কিনলে অজান্তেই বড় ক্ষতির শিকার হতে হবে।

ছবি: মুকলেসুর রহমান

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ