বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: সমাজের অনেক মানুষের কাছেই পরিযায়ী শ্রমিকরা হয়ে উঠেছেন ‘ভিলেন’। অনেকেই বলছেন, ভিনরাজ্য থেকে বাড়ির এলাকায় চলে আসার পর তাঁরা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও সরকারি বিধিনিষেধ মানছেন না। তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে অনেকটাই। কয়েকদিন আগে সাংসদ মহুয়া মৈত্র পরিযায়ী শ্রমিকদের স্কুলে রাখার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সওয়াল করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী জেলা প্রশাসনের লোকজন। একাধিক স্কুল এখন কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। আসছে বাধাও। কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলার প্রতিবাদে কোথাও কোথাও স্থানীয়রা দেখাচ্ছেন বিক্ষোভ। করছেন পথ অবরোধও। প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, তাহলে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপদে রাখার জন্য কোয়ারেন্টাইন সেন্টার কোথায় করা হবে? এমন পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এগিয়ে এল নদিয়ার শান্তিপুরের গোপালপুর পুরাতন মসজিদ কমিটি।
মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের রাখার জন্য তাঁরা ছেড়ে দিয়েছেন নিজেদের মসজিদের একাংশ। এক পাশে ছোট্ট জায়গাতে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে নমাজ পড়া হচ্ছে। বাকি অংশে তৈরি হয়েছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। তাঁদের জন্য রয়েছে আলাদা শৌচাগার। রয়েছে আলো এবং পাখার ব্যবস্থাও। মসজিদ কমিটির সভাপতি রহমত আলি বলেন, “আগে তো মানুষ বাঁচবে। মানুষ বাঁচলে তবেই তো ধর্মপালন হবে।সংসারের প্রয়োজনে আমাদের এলাকার ছেলেরা ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিল। তাঁরাই এখন সমস্যার সম্মুখীন। তাঁদেরকে নিরাপদে রাখার জন্য আমরা মসজিদের একাংশকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করার অনুমতি দিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: সংক্রমণের আশঙ্কায় বাড়িতে হয়নি জায়গা, শ্মশানেই ঠাঁই মহারাষ্ট্র ফেরত দুই ভাইয়ের]
ওই মসজিদে কামালউদ্দিন শেখ নমাজও পড়েন আবার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের দেখভালও করেন। তিনি বলেন, “ওরা তো আমাদেরই কারও না কারও ঘরের সন্তান। মসজিদের একাংশে আমরা নমাজ অবশ্যই পড়ছি। তবে পাশাপাশি ওদের দেখভাল করছি। সংসারের চাপে বাড়িঘরের মায়া ছেড়ে তাঁদের ভিনরাজ্যে গিয়ে থাকতে হয়। সেই টাকাতেই কিন্তু পেট ভরে সংসারের লোকজনের।লকডাউনে কষ্ট সহ্য করে তাঁরা ফিরছেন। সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় তাঁদের হোম কোয়ারেন্টাইন অথবা সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অথচ তাঁদেরই থাকতে কষ্ট হলে ভাল লাগে না।” মহারাষ্ট্র থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিক সাজ্জাদ আলি বলেন, “দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এখন নিশ্চিন্তে আছি। সরকারি যাবতীয় বিধিনিষেধ পালন করব।