দীপঙ্কর মণ্ডল: লকডাউনে বাড়িতে আটকে স্কুলপড়ুয়ারা। মিড-ডে মিলের চাল, আলু বিলি জারি রেখেছে রাজ্য সরকার। কিছু জায়গায় স্কুল শিক্ষকরা মুড়ি, বিস্কুট, সাবানের মত সামগ্রী কিনে বিলি করছেন। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা খুশি। সমাজের সর্বস্তরের মানুষরা শিক্ষকদের এই ভূমিকা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু সরকারি আধিকারিকদের তা না-পসন্দ। আর তাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের শোকজ করা হয়েছে। চাল, আলুর বাইরে পড়ুয়াদের জন্য কেন বাড়তি জিনিস দেওয়া হল তার কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। এই বেনজির কাণ্ডে হতবাক শিক্ষামহল।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমগাছিয়া লালবাহাদুর এফপি স্কুল। মিড-ডে মিলের চাল ও আলুর সঙ্গে এখানে বাড়তি বিস্কুট, সাবান এবং মুড়ি কিনে দেন শিক্ষকরা। বিষ্ণুপুর-১ নম্বর সার্কেলের এসআই টিচার ইনচার্জকে শোকজ করেছেন। সোমবারের মধ্যে সেই চিঠির জবাব তলব করেছে জেলা স্কুলশিক্ষা দপ্তর। নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা সমিতি ঘটনার নিন্দা করে সরকারকে মানবিক হতে আবেদন করেছে। সংগঠনের সভাপতি দেবাশিস দত্ত জানিয়েছেন, “সরকারি আধিকারিকদের দাবি বরাদ্দের বাইরে কিছু দিলে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হতে পারে। যে স্কুলে শুধু চাল, আলু দেওয়া হবে না সেখানে ক্ষোভ দেখা দিতে পারে। এই যুক্তির পরও আমরা শোকজ করা অনুচিত বলে মনে করছি।”
[আরও পড়ুন : পরাস্ত করোনা, জীবনের মুকুটে নয়া পালক নিয়ে বাড়ি ফিরলেন দুই প্রবীণ]
শুক্রবার পাঠানো চিঠিটি পরেদিন সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়েছে। বিষ্ণুপুর ছাড়াও আরও কিছু স্কুলে একই কাণ্ড ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ভর্ৎসনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষকরা। নিন্দার ঝড় সর্বত্র। শিক্ষকরা বলছেন, “আমরা অনেক সময় ছাত্রছাত্রীদের খাতা, পেন কিনে দেই। তা করলেও কী শোকজ করা হবে?” করোনা সতর্কতার অন্যতম অঙ্গ হিসাবে চিকিৎসকরা বারবার হাত ধোওয়ার কথা বলেছেন। স্কুলের শিশুদের এই বিষয়ে বেশি করে সতর্ক করা হয়েছে। শিক্ষকদের বক্তব্য, “যাঁরা দিনমজুরি করেন লকডাউনে তাঁদের কাজ নেই। এই কারণে সরকারি চাল, আলুর পাশাপাশি আমরা সাবান, মুড়ি ও বিস্কুট কিনে দিচ্ছি। কিন্তু তা যে বেআইনি হতে পারে তা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।”
[আরও পড়ুন : বারাকপুরে একদিনে করোনা আক্রান্ত ৩, ‘রেড জোন’-এর পরিস্থিতি উদ্বেগজনকই]
প্রথম ধাপে স্কুল পড়ুয়াদের এক মাসের রেশন হিসাবে দু’কেজি করে আলু ও চাল দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে দেড় মাসের হিসাবে তা তিন কেজি করে বিলি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পড়ুয়াদের অভিভাবকদের হাতে এই খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকে চাল বাদে প্রতিটি মিলের জন্য বরাদ্দ থাকে ৪.৪৮ টাকা। উচ্চ প্রাথমিকে চাল বাদে এই বরাদ্দ ৬.৭১ টাকা। মাসে চারটি রবিবার ও অন্য ছুটি ধরলে ন্যূনতম কুড়িটি মিল পাওয়ার কথা সবার। শিক্ষকদের একটি অংশের প্রশ্ন, সবচেয়ে কম ধরলে প্রাথমিকে প্রতিটি শিশুর একমাসে বরাদ্দ ৯০ টাকা। তাদের দেওয়া হল দু’কেজি আলু। যার দাম মেরেকেটে ৪০ টাকা। বাকি ৫০ টাকা কোথায় গেল? পূর্ব মেদিনীপুরের শিক্ষক তরুনাভ দাসের প্রশ্ন, লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী মিড-ডে মিল পায়। তাদের জন্য বরাদ্দ টাকা অন্য খাতে খরচ হচ্ছে না তো?