Advertisement
Advertisement

Breaking News

Slogan and wall painting

‘চিনের চেয়ারম্যান…’ থেকে ‘খেলা হবে’, নির্বাচনী স্লোগান ও দেওয়াল লিখনের রঙিন ইতিহাস

'স্লোগানে স্লোগানে ঢাকা দেয়ালে দেয়ালে'... বঙ্গভূমের চিরকালীন ছবি।

Slogan and wall painting carry tradition on election in Bengal
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:March 20, 2024 8:20 pm
  • Updated:March 20, 2024 8:20 pm

বিশ্বদীপ দে: বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। আর তারই সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনও দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে। ভোটযুদ্ধের দামামা বেজে গিয়েছে। এই অবস্থায় অঙ্গ, বঙ্গের সঙ্গে দিব্যি মিলে যায় ভোটরঙ্গ। এও তো বাঙালির এক আপন ঐতিহ্য। গোটা দেশের নিরিখে বাংলাতেই বোধহয় সবচেয়ে আশ্চর্য সব স্লোগান, দেওয়াল লিখনের জন্ম হয়েছে। ভাবলে অবাক লাগে, গোটা ভারতে আর কোথাওই অবশিষ্ট নেই দেওয়াল লিখনের চল। কিন্তু বাংলায় আজও রয়েছে। যেমন ছিল স্বাধীনতা-পরবর্তী বঙ্গভূমেও। সেই সঙ্গে রয়েছে স্লোগান।

নেতামন্ত্রীদের ভোট-আকাঙ্ক্ষাকে হাসির চাবুকে রাঙা করে তুলে ‘দাদাঠাকুর’ শরৎচন্দ্র পণ্ডিত লিখেছিলেন, ”ভোট দিয়ে যা/ আয় ভোটার আয়। মাছ কুটলে মুড়ো দিব/ গাই বিয়োলে দুধ দিব, দুধ খেতে বাটি দিব।” ইত্যাদি। শেষে এসে মোক্ষম ধাক্কা, ”কোনও কাজে লাগব না/ যাদুর কপালে আমার ভোট দিয়ে যা।” চেনা ছড়াকেই কেবল নয়, সেই সময়ের ‘হিট’ গানের লাইনকেও পালটে তিনি করেছিলেন, ”আমি ভোটের লাগিয়া ভিখারি সাজিনু/ ফিরিনু গো দ্বারে দ্বারে।” কত বছর আগের লেখা! কিন্তু আজও অনতিক্রম্য। ভোটের বাজারে এর আবেদন কখনও ফিকে হবে না।

Advertisement

[আরও পড়ুন: পুরনিয়োগ মামলায় আপাতত ED-CBI নয়, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘সুপ্রিম’ স্থগিতাদেশ]

Political parody

Advertisement

এই যে প্যারডি গানের ব্যবহার করা, এটা পরবর্তী সময়ে দারুণ ভাবে কাজে লাগায় সিপিআই। ১৯৫৭-৫৮ সালেপান্নালাল ভট্টাচার্যের কণ্ঠস্বরে শ্যামাসংগীত ‘আমার সাধ না মিটিল’-কে পালটে দিয়ে তারা তৈরি করেছিল এক অনন্য লিরিক্স- ”আমার সাধ না মিটিল/ ফাঁড়া না কাটিল/ মেয়াদ ফুরায়ে যায় মা।/ জনমের শোধ ডাকি গো/ মা তোরে/ এবার জেতাবি আয় মা।” এটা কোনও বিক্ষিপ্ত উদাহরণ নয় মোটেই। সেযুগে এমন প্যারডি ভূরি ভূরি রয়েছে। বিশিষ্ট যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও লেখক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উঠে সেই সব পুরনো সময়ের ইতিবৃত্ত।

[আরও পড়ুন: ‘কুণাল ঘোষকে প্রণাম, ভবিষ্যদ্বাণী মিলেছে’, ‘সুপ্রিম’ রায়ে বললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়]

West Bengal Assembly Elections: Left front using catchy tagline to attract voters

কিন্তু দেওয়াল লিখন? সেটা তখনও শুরু হয়নি। কাগজে লিখে পোস্টার বানানো কিংবা দরমার গায়ে কাগজ সেঁটে তাতে লিখে তা বিভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে দেওয়া হত। তাহলে দেওয়াল লিখন শুরু হল কবে? দেবাশিসবাবুর কথায়, ”আজ যেভাবে দেওয়াল লিখন ছড়িয়ে পড়েছে, তা মূলত শুরু হয় ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্ট রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে। একে দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছিল নকশালরা।”

আর নকশাল আমল বললেই চলকে ওঠে উত্তাল সত্তর। দেওয়ালে দেওয়ালে ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ কিংবা ‘তোমার নাম, আমার নাম, ভিয়েতনাম ভিয়েতনাম’। শেষোক্ত পঙক্তিটি সম্পর্কে শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন এটা দেওয়াল লিখন নয়, ‘দেওয়াল কবিতা’। নতুন সহস্রাব্দে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সেই স্লোগানকেই নতুন করে তুলেছিলেন। ‘তোমার নাম আমার নাম নন্দীগ্রাম’।

তবে সবক্ষেত্রেই যে এমন সব কাব্যের ছোঁয়া থাকত তা তো নয়। বরং উলটোটা। ওই নকশাল আমলেই সিদ্ধার্থশংকর রায়ের কংগ্রেস (আই)-এর দেওয়াল লিখনেই যে ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছিল তা চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো। ‘চিনের চেয়ারম্যান তোদের বাপ, ইন্দিরা গান্ধী আমাদের মা।’ ছয়ের দশকের জনপ্রিয় কংগ্রেস নেতা অতুল্য ঘোষের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাঁর সেই আংশিক দৃষ্টিহীনতাকে ব্যঙ্গ করে ছড়া বাঁধা হয়েছিল, ‘জলের শত্রু কচুরিপানা, দেশের শত্রু অতুল্য কানা।’ এই ভাষাই বুঝিয়ে দেয় আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াতে বহু ক্ষেত্রেই কোন হীন স্তরে পৌঁছে যেত বিষয়টা। ইদানীং যে ভোটের গান, স্লোগানের ভাষায় বৈচিত্র বেড়েছে তা মেনে নিলেন দেবাশিসবাবু। এপ্রসঙ্গে ২০২১ সালের বাংলার ভোটের সময়টার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। সিপিএমের (CPM) ‘টুম্পা’, তৃণমূলের (TMC) ‘খেলা হবে’র মুচকি সরসতা নিয়ে নিয়ে চায়ের কাপে তুফান উঠেছিল।

সময় বদলায়। ভোট আসে। চলেও যায়। এক ভোটের স্লোগান অন্য ভোটে গিয়ে ‘বাসি’। চোখের সামনে জেগে থাকা দেওয়াল লিখন মুছে গিয়ে অন্য ভাষ্য ফুটে ওঠে। সত্যি কি ভোটারদের মধ্যে বিরাট প্রভাব ফেলে এই সব ভোটরঙ্গ? বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোটের হিসেব অনেক জটিল। নানা ফ্যাক্টর সেখানে জালের মতো ছড়িয়ে থাকে। নিছক চোখ ধাঁধানো কোনও স্লোগান কিংবা মুচকি কার্টুনের সপাট মোচড় ভোট ব্যাংকে প্রভাব ফেলে না। তবে এর বিনোদন মূল্যকে অস্বীকার করারও উপায় নেই। তাছাড়া এর মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়াও সহজ। সেটাকেই কাজে লাগায় দলগুলি। তৈরি হতে থাকে নিত্যনতুন সব গান। দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা হয়ে যায় কত অদ্ভুত সব স্লোগান। প্রতিটি নির্বাচনের স্মৃতির সঙ্গে যা মিশে যায় ওতপ্রোত ভাবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ