Advertisement
Advertisement

Breaking News

লকডাউনে বন্ধ মায়ের বাৎসরিক, সঞ্চিত অর্থ দিয়ে দুস্থদের রেশন কিনে দিলেন ছেলেমেয়েরা

দেড়শো পরিবারকে রেশন দান করেন পাঁচ ভাই ওচার বোন।

Son and daughter donated money of their mother's death anniversary
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:April 16, 2020 9:40 pm
  • Updated:April 16, 2020 9:40 pm

বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের কারণে বন্ধ সমস্ত রকম সামাজিক অনুষ্ঠান। সেই সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে পড়ে শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানও। কারণ সেখানেও হয় লোকের জমায়েত। লকডাউন চলাকালীন বৃহস্পতিবার ছিল একটি পরিবারের মায়ের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ কাজ। যদিও লকডাউনের মধ্যে সেই কাজ করা বেশ দুঃসাধ্য। বিশেষ করে, চারদিকে যখন গরীব-দুঃস্থ মানুষেরা তাদের খাদ্য সংস্থান করা নিয়ে রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। ঠিক তখন ওই পরিবারের পাঁচ ভাই, চার বোন এবং বাকিরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে মায়ের বাৎসরিক শ্রাদ্ধকাজের খরচ বাঁচিয়ে সেই টাকা দিয়ে দুস্থ-গরিব মানুষদের হাতে তুলে দিলেন খাদ্য সামগ্রী। মাতৃহারা ওই ভাই-বোনদের একটাই বিশ্বাস, ‘দেশের এই রকম কঠিন পরিস্থিতিতে দুস্থ মানুষদের হাতে কিছু খাদ্যসামগ্রী তুলে দিলে শান্তি পাবে মায়ের আত্মা।’

নদিয়ার কোতোয়ালি থানার রুইপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামপুর কলোনির বাসিন্দা সমর পাল ও তার দুই দাদা মিলে বৃহস্পতিবার এভাবেই সারলেন মায়ের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ কাজ। ঠিক এক বছর আগে সমর বাবুদের মা শান্তিপ্রভা পাল পঁচাশি বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। সমর পালরা পাঁচ ভাই এবং চার বোন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দুজন থাকেন দূরে। সমরবাবুর এক দাদা কর্মসূত্রে থাকেন অরুণাচল প্রদেশে আর এক দাদা থাকেন দমদমে। মায়ের বাৎসরিক কাজে লকডাউনের কারণে ওই দু’জন আসতে পারেননি। এছাড়া, সমরবাবুর চার দিদির মধ্যে বিবাহসূত্রে দুই দিদি থাকেন কলকাতায়, এক দিদি থাকেন কালনায় আর এক দিদি থাকেন সমর বাবুর বাড়ির কাছেই। এক দিদি বাৎসরিক কাজে আসতে পারলেও আসতে পারেননি তিন দিদি।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: লকডাউনের মধ্যে মদের হোম ডেলিভারি! ভুয়ো বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়াচ্ছেন আসানসোলবাসী ]

সমরবাবু পেশায় একজন ছোট ব্যবসায়ী। সেই সঙ্গে তিনি আবার রুইপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের একজন পঞ্চায়েত সদস্যও। ওই পঞ্চায়েতের তিনি একজন শিক্ষা সঞ্চালক। তিনি ও তাঁর ভাই-বোনেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মায়ের বাৎসরিক কাজ হিন্দু শাস্ত্রের নিয়ম রক্ষার্থে ন্যূনতম যতটুকু না করলে নয়, ততটুকুই করা হবে। বাৎসরিক শ্রাদ্ধ কাজের সময় নিমন্ত্রণ করে মানুষকে খাওয়ানোর একটা প্রথা চালু রয়েছে, এই দুঃসময়ে তা মানবেন না তাঁরা

Advertisement

সমর পাল জানিয়েছেন, ‘যে দাদা এবং দিদিরা মায়ের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ কাজে যোগ দিতে পারেননি। তাঁদের সঙ্গে আমাদের টেলিফোনে কথা হয়েছে। সকলে মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, মায়ের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ কাজের খরচ বাঁচিয়ে আমরা দুস্থদের কাছে পৌঁছে দেব সামান্য কিছু খাদ্য সামগ্রী। আমাদের সকলের বিশ্বাস, আমাদের এই সিদ্ধান্তে আমাদের পরলোকগত মায়ের আত্মার শান্তি পাবে।’ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চাল, ডাল, সরষের তেল, সোয়াবিন, লবণ, সাবান, আলু প্যাকেট বন্দি করে সমর সমর পাল এবং তার দুই দাদা তা তুলে দিয়েছেন দরিদ্র মানুষদের হাতে। তাঁদের বাড়ির আশেপাশের এলাকার তো বটেই, দূরের বেশ কয়েকজন মানুষের হাতেও তাঁরা খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট তুলে দেন। মায়ের বাৎসরিকের টাকায় প্রায় দেড়শো জনের অন্ন সংস্থান করেন সমরবাবু ও তাঁর ভাইবোনেরা।

ছবি- সঞ্জিত ঘোষ

[ আরও পড়ুন: মন্দিরে বিয়ে সেরে স্কুটিতে শ্বশুরবাড়ি গেলেন বধূ, অনুষ্ঠানের টাকা দিলেন ত্রাণ তহবিলে ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ