Advertisement
Advertisement
Madhyamik 2024

ক্যানসার কেড়েছে ডান হাত, মাত্র দুমাসেই বাঁ হাতে লেখা অভ্যাস করে মাধ্যমিকে নদিয়ার পড়ুয়া

এই অদম্য জেদকে কুর্নিশ জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে সকলেই।

Student learns writing with left hand, sits for Madhyamik 2024 after cancer in Nadia। Sangbad Pratidin

ডান হাতে চলে যেতেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই শুরু করে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শুভজিৎ বিশ্বাস

Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:February 6, 2024 4:23 pm
  • Updated:February 6, 2024 5:35 pm  

সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: কথায় বলে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। মনের জোর শারীরিক অক্ষমতাকেও যে হার মানায় তা আরও একবার প্রমাণ করে দেখাল শান্তিপুর হরিপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শুভজিৎ বিশ্বাস। ক্যানসারের কারণে ডান হাত হারিয়ে বাঁ হাত দিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে সে। ডান হাতে চলে যেতেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই শুরু করে এই পড়ুয়া । বাঁ হাতে লেখা অভ্যাস গড়ে ওঠে মাত্র দুমাসে।  

পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয় শুভজিতের। বাবা ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস আগে ছিলেন হস্তচালিত তাঁতি। বর্তমানে তাঁতের অবস্থা শোচনীয় হওয়ার কারণে তিনি এখন ঢালাইয়ের নির্মাণ কর্মী হিসেবে কাজ করেন কলকাতায়। মা শিখা বিশ্বাস অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। দুই দিদি বৈবাহিক সূত্রে থাকেন অন্যত্র। তাই বাধ্য হয়েই পার্শ্ববর্তী মাসির বাড়ি রেখা বিশ্বাসের বাড়িতে ঠাঁই হয় শুভজিতের। মামা অরিজিৎ বিশ্বাস জানান, “দীর্ঘ দুই বছর ধরে শুভজিৎকে চিকিৎসা করানোর কারণে ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে কলকাতায় থেকেই কাজ করেন দিদি-জামাইবাবু। তাঁদের সামান্য একটি ভাঙাচোরা ঘর-সহ বাড়ি ছাড়া সহায় সম্বল আর কিছুই নেই। তবে আমরা আছি, শুভজিতের পাশে। ঈশ্বরের প্রতি ওর অগাধ বিশ্বাস। সফল ও হবেই।”

Advertisement

আরও বসন্তে ‘শরৎ’ কোলে সিউড়ি থেকে স্পেনে পাড়ি, ‘ঈশ্বরের উপহার’, বলছে স্পেনের দম্পতি

শুভজিতের মাসি শিখা বিশ্বাস জানিয়েছেন, “আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে একটি সাইকেল দুর্ঘটনায় আঘাত প্রায় শুভজিৎ। ওই ক্ষতস্থানেই ক্যানসার হয়ে গিয়ে শুভজিৎ ভর্তি হয় কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে। এর পর পরিস্থিতি খারাপ দেখে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বেঙ্গালুরুতে। তবে শত চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি তার ডান হাত। পচন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ার ফলে কৃষ্ণনগরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে তার ডান হাত কেটে বাদ দেওয়া হয় গত ডিসেম্বর মাসে।”

এর পরেই শুরু হয় শুভজিতের আসল লড়াই। তার কারণ হাতের অস্ত্রপচারের আগে পর্যন্ত সে অন্যান্যদের মতো স্বাভাবিকভাবেই ডান হাত দিয়ে পরীক্ষা দিত। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে অস্ত্রপচার করে তার ডান হাত কেটে বাদ দেওয়া হয়। টেস্ট পরীক্ষা সে দিতে পারিনি সদ্য অস্ত্রপচারের কারণে। ডান হাত চলে যাওয়ার পর থেকেই চিন্তিত হয়ে ওঠে শুভজিতের পরিবার। তবে দমে যাইনি শুভজিৎ। যখন মাত্র দুমাস বাকি ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার, তখন থেকে শুরু হয় বাঁ হাত দিয়ে লেখার অভ্যাস।

প্রথমদিকে লিখতে অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে ডান হাতের মতোই সাবলীলভাবে বাঁ হাত দিয়ে লিখতে শুরু করে সে। ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও আর পাঁচটা স্বাভাবিক পরীক্ষার্থীর মতোই এখন সে পরীক্ষা দিচ্ছে, তবে বাঁ হাত দিয়ে। তার এই অদম্য জেদকে কুর্নিশ জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে সকলেই। শুধু তাই নয় তার হাতের লেখা এবং গতি দেখে তাজ্জব শুভজিতের স্কুল হরিপুর বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা-সহ তার পরীক্ষাকেন্দ্র নৃসিংহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষকরাও।

দেখুন ভিডিও:

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement