নন্দন দত্ত, সিউড়িঃ নতুন বছরের প্রথম দিনের গুরুত্ব তারাপীঠে এবার একটু আলাদা। পয়লা বৈশাখেই তারা মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠার দু’শো বছর পূর্তি হচ্ছে। বিশেষ এই দিনে প্রতিবছরের মত এবারও দু’বার মায়ের ভোগ নিবেদন হবে। এদিকে শনি-রবি দু’দিন পরপর ছুটি হওয়ায় শনিবার থেকেই তারাপীঠে রয়েছে ভক্ত ও পর্যটকদের ভিড়।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মা তারার পুজো দিয়ে অনেকে বছর শুরু করেন। সে জন্য পয়লা বৈশাখের দিন তারাপীঠে ভক্তদের ঢল নামে। ব্যবসায়ীরা হালখাতার জন্য নতুন খাতা মায়ের চরণে স্পর্শ করে পুজো দিতে ভিড় জমান। এবার পয়লা বৈশাখ রবিবার, অর্থাৎ ছুটির দিন। আবার সকাল থেকেই অমাবস্যা তিথি। তাই শনিবার থেকেই তারাপীঠে পর্যটকদের আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। অমাবস্যা তিথিতে মায়ের কাছে পুজো অর্পণ করলে মোক্ষলাভ হয় বলে ভক্তদের বিশ্বাস। তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, রবিবার ভোরে মায়ের স্নানের পর রাজবেশে সাজিয়ে পুজো ও মঙ্গলারতি করা হবে। সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকেই সকল ভক্তদের জন্য গর্ভগৃহ খুলে দেওয়া হবে। এদিন সকাল ৭.৫৯ মিনিটের পর অমাবস্যা তিথি শুরু হচ্ছে। থাকছে সোমবার সকাল ৭.২৩ মিনিট পর্যন্ত। তারাপীঠে প্রতি অমাবস্যা তিথিতে ভক্ত ও সাধু-সন্তদের সমাগম ঘটে। এবার পয়লা বৈশাখের দিন অমাবস্যা তিথি শুরু হওয়ায় ভিড় কয়েকগুণ বাড়বে।
[নতুন বছরের ভূরিভোজ শুরু হোক ইলিশ দিয়ে]
তারাময়বাবু বলেন, পুণ্যার্থীদের কাছে এবার সুবর্ণ সুযোগ। একদিকে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। অন্যদিকে অমাবস্যা তিথি। প্রতিবছর বিশেষ দিনে মাকে দু’বার ভোগ নিবেদন করা হয়। এবার অমাবস্যার তিথি হওয়ায় মহাযোগ পড়েছে। তাই আতপ অন্ন, পোলাও, পঞ্চব্যঞ্জন, মাছ, বলির মাংস, মিষ্টি, ফল ও কারণ দিয়ে মায়ের মধ্যাহ্ন ভোগ নিবেদন করা হবে। সন্ধ্যারতী ও মায়ের পুজোর পর রাতে খিচুরি ভোগ নিবেদন করা হবে। এদিকে ইতিহাস অনুযায়ী রবিবারই মায়ের বর্তমান মন্দিরের দু’শো বছর পূর্ণ হবে। মন্দিরের প্রবীণ সেবাইত প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজা রামজীবন চৌধুরি বর্তমান মন্দিরের স্থলে মন্দির তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। ১৭০১ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে রামচন্দ্র মন্দির সম্পূর্ণ করে মহাশ্মশান থেকে মায়ের ব্রহ্মময়ী শিলামূর্তি নব নির্মিত মন্দিরে স্থাপন করেন। বহু বছর পর ১২২৫ বঙ্গাব্দে ভগ্নপায় সেই মন্দিরে মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায় নতুন মন্দির নির্মাণ করে দেন। বর্তমান মন্দিরটি সেই মল্লারপুরের জমিদারের তৈরি। পয়লা বৈশাখেই সেই মন্দিরের দু’শো বছর পূর্ণ হল। মন্দির কমিটির সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, পয়লা বৈশাখের দিন প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটবে তাই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওইদিন মন্দিরের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের তরফেও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ছবি-সুশান্ত পাল
[১০০ বছর পর অন্ধকার বাঙালির হালখাতায়, চিন্তায় ব্যবসায়ীরা]