পলাশ পাত্র, তেহট্ট: দুদিনে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটল নদিয়া তেহট্টে। একজনের গলাকাটা দেহ উদ্ধার হয়েছে শুক্রবার বিকেলে। অন্য দুজনের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়েছে শনিবার সকালে। শুক্রবারের মৃত ব্যক্তির সঙ্গে শনিবারের উদ্ধার হওয়া দেহ দুটির একজনের পরিচয় রয়েছে। দুজনেই সম্পর্কে দাদা ও ভাই। প্রথমজনের নাম কলিমুদ্দিন শেখ (৬৫)। আদতে গরুর ব্যবসায়ী কলিমুদ্দিন এখন আর ব্যবসা করতেন না। মূলত চাষ আবাদের কাজ করতেন। দ্বিতীয়জন তাঁর ভাই আজিম শেখ (৪৫)। যিনি চুলের ব্যবসা করতেন। যখন ব্যবসার কাজ থাকত না, তখন ইটভাঁটায় কাজ করতেন। দুজনেরই বাড়ি চাপড়া থানার বেতবেড়িয়া পশ্চিম পাড়ায়। শুক্রবার তাঁরা একসঙ্গে গরু কিনতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে পোষার জন্যই গরু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কলিমুদ্দিন। তারপর ভাইকে নিয়ে গরুর হাটে যান। বিকেল হয়ে গেলেও ফিরে আসেননি। সন্ধ্যাবেলায় তেহট্টর বেতাই কড়ুইগাছির এক কলাবাগান থেকে গলাকাট দেহ উদ্ধার হয় কলিমুদ্দিনের। যদিও ভাই আজিম শেখের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
[জমি বিবাদের জের, পেটে লোহার রড ঢুকিয়ে খুন যুবক]
রাত কাটতে না কাটতেই আজিম শেখের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হল তেহট্টর ছাতিনার মিস্ত্রি পাড়া আমবাগান থেকে। তবে আজিম শেখ একা নয়, পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির দেহও উদ্ধার করল ঘটনাস্থল থেকে। আজিম শেখকে শনাক্ত করা গেলেও অন্যজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। দুদিনে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
এই প্রসঙ্গে কলিমুদ্দিনের ছেলে মোবারক সাহেব জানিয়েছেন, ‘আব্বা আগে গরুর ব্যবসা করতেন। এখন করেন না। আমাদের ঘর করার জন্য গত বছর পোষা গরু ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। বাড়িতে আমার ছেলে ছাড়াও সবাই দুধ খায়। পোষার জন্যই গরু কেনার কথা ঠিক হয়। আমার ভাইজির নতুন বিয়ে হয়েছে। নতুন জামাইকে খাওয়ানোর জন্য সকালে আব্বা বাজার করেন। বাড়িতে বলে যান তাড়াতাড়ি ফিরবেন। কিন্তু তাঁকে কেন খুন করা হল, বলতে পারব না। তাঁর কোনও শত্রু ছিল না। শুক্রবার সকাল নটায় বের হয়েছিলেন কাকার সঙ্গে। আমি মাঠে থাকায় আমার সঙ্গে দেখাও হয়নি। মা জানায়, আব্বা গরু কিনতে বেরিয়েছেন। দুপুর তিনটের সময় ফোন করলে আব্বার মোবাইলে সুইচ অফ পাই। পরে আব্বার খুন হওয়ার কথা জানতে পারি। আব্বার কাছে ২৫-৩০ হাজার টাকা ছিল।’
পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, দাদা ও ভাই চাপড়ার শিবিরে গরু কিনতে গিয়েছিলেন। একসময় গরুর ব্যবসায়ী ছিলেন কলিমুদ্দিন সেখ। তবে এখন আর আগের মতো ব্যবসা করতেন না। মাঝে মধ্যে গরু বিক্রি করতেন। এরই মধ্যে বাড়িতেও গরুর প্রতিপালন চলছিল। বাড়িতে বর্তমানে দুটো বাছুর রয়েছে। প্রায় একবছর আগে প্রয়োজনে বাড়িতে থাকা গরু ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেও এই খুন হতে পারে। তবে সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
[জলসা ঘিরে বিবাদ, আরামবাগে খুন তৃণমূলকর্মী]
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, শিবির এলাকায় গরু কিনতে গিয়েছিলেন দুজনে। দুজনে মোটরবাইকে তেহট্ট থেকে শ্যামনগরের দিকে গিয়েছিলেন। এখানেই কড়ুইগাছিতে জনবসতিহীন কলাবাগানের পেছনে কলিমুদ্দিনকে গলা কেটে খুন করা হয়। খুনের পর একটি মোটরবাইকে দুজন, আর একটিতে একজন বেরিয়ে যায়। অন্যজন পায়ে হেঁটে গ্রাম ছাড়ে। সংশ্লিষ্ট কলাবাগন এলাকা থেকে ১৪ কিলোমিটার আগে একটি জায়গায় এদিনের গুলিবিদ্ধ দেহ দুটি উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাস্থল কৃষ্ণনগর করিমপুর রোড থেকে সাতশো মিটার দূরে ছাতিনার এই এলাকা। দুজনের মুখে ও গলায় গুলি করা হয়েছে। ফাঁকা এলাকায় আজিম শেখকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। আজিম শেখের সঙ্গে দ্বিতীয় ব্যক্তির দেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য তৈরি হয়েছে। প্রায় একসঙ্গে তিনজন ঠিক কী কারণে খুন হলেন তা তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্তে জানা গিয়েছে, গরুর কেনা বেচায় বেশকিছু দেনাও ছিল কলিমুদ্দিনের।দেনার পরিমাণ প্রায় পাঁচ থেকে সাত লক্ষ টাকা। পাওনা টাকা আদায় অথবা পুরনো শত্রুতার জেরে খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।