ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: পৌষমেলার মাঠ থেকে দোকান তোলা নিয়ে ফের ধুন্ধুমার পরিস্থিতি শান্তিনিকেতনে। রবিবার দুপুরে বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে দোকানগুলি খোলার পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে সমস্ত সামগ্রী বেআইনিভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগে ফেটে পড়লেন ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে নাবালক পড়ুয়াদেরও দোকান তোলার কাজে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগও উঠেছে। সবমিলিয়ে, পৌষমেলা শেষ হওয়ার দিন দুই পরও অশান্তি অব্যাহত।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে এবছর কমানো হয়েছিল পৌষমেলার সময়সীমা। ৬ দিনের বদলে চারদিন মেলা হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তারপরও ৪৮ ঘণ্টা দোকানিদের সময় দেওয়া হয়েছিল, দোকানগুলি খুলে মেলার মাঠ পরিষ্কারের জন্য। সেইমতো ২৪ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেলা চলেছে। ২৮ এবং ২৯ তারিখ মাঠ সাফাই হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা গিয়েছে, ২৭ তারিখের পরও মেলা চলেছে রমরমিয়ে। ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকরা, কেনাবেচা চলেছে পুরোদমে। বিশেষত শালপট্টির ব্যবসায়ীরা দোকান তুলতে উদাসীন বলে অভিযোগ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের।
[আরও পড়ুন: সস্ত্রীক গঙ্গাসাগর ভ্রমণে রাজ্যপাল, পুজো দিলেন কপিল মুনির আশ্রমে]
তবে রবিবার বিশ্বভারতীর দোকান তোলার অভিযানে কার্যত নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইল পৌষমেলা চত্বর। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ কর্মী এবং বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে মেলার মাঠে যান। দোকান ভেঙেচুরে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির আরও অভিযোগ, ভেঙে ফেলা দোকানগুলি থেকে কয়েক লক্ষ টাকার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায় নিরাপত্তারক্ষীরা। পুলিশ প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে যে কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে তাঁরা পুলিশে অভিযোগ জানাতে চলেছেন। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিং বলেন, ”বিশ্বভারতীর উপাচার্যের নেতৃত্বে মেলা তোলার নামে যে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গিয়েছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি।”
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও আছে। মেলা থেকে দোকান তোলার কাজে এদিন স্কুলের পোশাক পরা পড়ুয়াদের কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ একাংশের। তাঁদের দাবি, মেলায় প্রথমে স্কুল পড়ুয়াদেরই এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পিছনের দিকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বলয়ে ছিলেন উপাচার্য নিজে। এখন প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে স্কুলপড়ুয়াদের এই কাজে ব্যবহার করল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের বক্তব্য, ”ওরা এখানে পড়াশোনা করতে এসেছে। মেলা তোলা ওদের কাজ নয়। কিন্তু পড়ুয়াদের যেভাবে ব্যবহার করা হল, তা দুর্ভাগ্যজনক।”