ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: দেশে বিশ্বভারতী একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সপ্তাহে তিন দিন ছুটি থাকে। এক একটি ভবনে এক একদিন ছুটি। সারা সপ্তাহ কার্যত ছুটির মেজাজেই কাটে কর্মী, অধ্যাপক এবং আধিকারিকদের। আর এই ছুটির ফাঁদে পড়ে ভুগতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। প্রায় লাটে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা এবং কাজকর্ম। যা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও কাজকর্মের পরিবেশ ফেরাতে পুরনো ছুটির পদ্ধতিতে পরিবর্তন হল। পরপর দু’দিন ছুটি ফিরিয়ে আনল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নিয়ামক কমিটি ‘কর্মসমিতি’।
[পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও বিয়ে, থানায় ফুলশয্যা নবদম্পতির]
২০১৮ সালের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার ছুটি থাকবে। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সংগঠন ও ছাত্রছাত্রীরা। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্ম ধর্মে দীক্ষালাভ করেছিলেন। তাই এই দিনটি শান্তিনিকেতনের কাছে অতি পবিত্র দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস ছুটি থাকত। পরবর্তীতে বুধবার পূর্ণদিবস ছুটির পাশাপাশি মঙ্গলবার অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এই দুটি দিন ছুটি থাকত। কিন্তু সুশান্ত দত্তগুপ্ত উপাচার্য হতেই সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের বিষয়টি সামনে এনে ছুটির দিন বদল হয়। বুধ ও রবিবার ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কয়েকটি ভবনের দাবি মতো সুশান্তবাবু ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্ত নেন এবং সঙ্গীতভবন, কলা ভবন, পাঠভবন এবং রবীন্দ্র ভবনে বুধ ও বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিন ছুটি থাকত। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটা অংশ কলকাতা—সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে ক্লাস করতেন, মূলত তাঁদের সুবিধা দিতেই সুশান্তবাবু এই পরিবর্তন করেছিলেন। আর এই ছুটির ফাঁদে পড়ে পড়াশোনা লাটে ওঠার পাশপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজকর্মের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছিল। এমনও হয়েছে সোমবার বা মঙ্গলবার কোনও ছুটি থাকলে অনেক অধ্যাপক বা কর্মী রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছুটি ভোগ করতেন।
[সততাই মূলধন, ৪৩ হাজার টাকা পেয়েও ফেরালেন এই চা-বিক্রেতা]
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি নোটিফিকেশন করে জানিয়েছে গত ২৮ নভেম্বর কর্মসমিতির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী ২০১৮ সালের ১জানুযারি থেকে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি থাকবে। এই বিষয়ে বিশ্বভারতীর অধ্যাপকসভার সম্পাদক গৌতম সাহা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক দিনে একাধিক ভবন বন্ধ থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বাইরের মানুষের কাছে একটি বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল পড়াশুনা এবং কাজের পরিবেশ। কর্তৃপক্ষের বুধবার এবং বৃহস্পতিবার পরপর দু’দিন ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।” ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্ত বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির দিনগুলি নিয়ে একাধিক সমস্যা হচ্ছিল। আমরা চাইছিলাম একই দিনে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি থাকুক। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের পাশাপাশি কর্মসমিতিও এই বিষয়টি অনুমোদন করে।” এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পড়ুয়া ও শিক্ষকরাও।