সংগ্রাম সিংহ রায়, শিলিগুড়ি: ‘পাহাড়ে শান্তি চাই। সেজন্যই বিজেপিকে একটিও ভোট নয়’ শুক্রবার শিলিগুড়ির কাছে নকশালবাড়ি আদিবাসী ময়দানে নির্বাচনী সভায় এভাবেই দার্জিলিং পাহাড়-সমতলে শান্তি ও উন্নয়নের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির পাশাপাশি এদিন তিনি বিধেঁছেন সিপিএম ও কংগ্রেসকেও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অশান্তির বাতাবরণ কাটিয়ে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি। বিজেপি পাহাড়কে ফের অশান্ত করতে চায়। সেখানে ইন্ধন যোগাচ্ছে কংগ্রেস ও সিপিএম। মাঝেমধ্যে ওরা উস্কানি দিচ্ছে। এই চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিন।”
এদিন পুরো বক্তব্যেই উন্নয়ন এবং শান্তির পক্ষে সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী। একসময়ে মঞ্চে ডেকে নেন পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দা আদিবাসী চা শ্রমিক এবং সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের। তাঁদের সঙ্গে পাহাড়ের মোর্চা সমর্থিত তৃণমূল প্রার্থী অমর সিং রাই, দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, জিটিএ বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা মোর্চা সভাপতি বিনয় তামাংকে নিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে ঐক্যের বার্তাও দেন। কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী কবিতার পংক্তি উল্লেখ করে তিনি স্পষ্ট করে দেন, “রাজনীতির নামে কোনওরকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না।” এদিন পাহাড় উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন বিনয় তামাং, অমর সিং রাই।
[আরও পড়ুন-বালুরঘাটে বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর, কাঠগড়ায় তৃণমূল]
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, উন্নয়নে পক্ষপাতিত্ব চলতে পারে না। এদিনের সভাস্থল নকশালবাড়ি আদিবাসী ময়দান। যে বিধানসভা এলাকার মধ্যে ওই ময়দান সেটি মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির অধীন। পাশে রয়েছে ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা। দুটোই কংগ্রেসের দখলে। তা সত্ত্বেও গত সাত বছরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনওরকম কার্পণ্য করেননি। তিনি স্পষ্ট করে দেন, “পাহাড় সমতলে ভাগাভাগি চলবে না। আমরা কাজ করব, আর ভোট নিয়ে যাবে বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএম সেটা হবে না।”
[আরও পড়ুন- এখনও গ্রাহ্য হয়নি ইস্তফাপত্র, রানাঘাটের চিকিৎসক প্রার্থীকে নিয়ে বিড়ম্বনায় বিজেপি]
ভোটদাতাদের প্রতি তাঁর আবেদন ছিল, “আপনাদের ভোট সিপিএম কংগ্রেসকে দিয়ে নষ্ট করবেন না। তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়া আছে।” মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিজেপির তুলোধোনা করে জানিয়ে দেন, এর আগে ওরা পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে বিভাজন তৈরি করেছিল। গোর্খা, আদিবাসী, দলিতদের পৃথক ‘আইডেনটিটি‘ দরকার। ৭০ বছরে উত্তরকন্যা ও সার্কিট বেঞ্চ কেউ তৈরি করতে এগিয়ে আসেনি। সেটা তৃণমূল সরকার করেছে। এমনকী রেলমন্ত্রী থাকার সময় বেশকিছু ট্রেন চালু হয়। সেগুলি তাঁর করে দেওয়া। এরপর উত্তরবঙ্গ নতুন কোনও ট্রেন পায়নি।
[আরও পড়ুন- খচ্চরের পিঠে চড়ে প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল তৃণমূল প্রার্থীর ছবি]
সভা মঞ্চ থেকে অমর সিং রাইকে দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিজেপি দার্জিলিংয়ে গত দশ বছর ভোট নিয়ে গিয়েছে কিন্তু কাজ করেনি। এবার মণিপুর থেকে প্রার্থী ধরে এনেছে। তাই আপনাদেরই ঠিক করতে হবে আপনারা ঘরের ছেলেকে সাংসদ দেখতে চান না কি বাইরের কাউকে।” এরপরই প্রধানমন্ত্রীকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, নরেন্দ্র মোদি বাংলায় কিছু হয়নি বলে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তাঁর পালটা প্রশ্ন, “দিল্লিতে কি উন্নতি করেছেন প্রধানমন্ত্রী, তার জবাব দিতে হবে।”