ছবি: অমিত সিং দেও।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এ যেন উলটপুরাণ! বঙ্গে যখন ভোটের (Assembly Election 2021) বাদ্যি বেজে উঠেছে, তখন এই বাংলার পুরুলিয়ায় এক অন্য ছবি। একেবারে উলটো চিত্র। না আছে দেওয়াল লিখন, না আছে কোনও পতাকা-পোস্টার-ব্যানার। নেই কোনও মিটিং-মিছিল। রাজনৈতিক প্রচার থেকে যেন অনেক দূরে এই এলাকা। বাংলার শেষ ঠিকানা পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের বুড়িঝোর জানে না ভোট কবে, ভোটের দিনক্ষণ জানা নেই বুড়িঝোর লাগোয়া একেবারে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা আসনপানি, থরকাদহেরও। অথচ আর দু’সপ্তাহও বাকি নেই পুরুলিয়ার ভোটের। কিন্তু কেন?
হাজার প্রশ্ন করেও উত্তর মেলেনি। তাহলে কি ‘দাদা’-দের ফতোয়া? ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মাওবাদীরা এই বান্দোয়ানের বনবস্তিতে মশাল মিছিল ও গ্রাম বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছিল, যদি কেউ ভোট দিতে যান, তাহলে তাঁর হাত কেটে নেওয়া হবে। সেইসময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর অভয় থাকলেও সকলকে বুথমুখী করতে পারেনি কমিশন। তবে এবার প্রকাশ্যে ‘ওরা’ নেই। এখনও আসেনি ভোট নিয়ে কোনও বিবৃতি। তবে জঙ্গলমহলের অন্য অংশে মাওবাদীদের নামে ভোট বয়কটের পোস্টার পড়েছিল। তা নিয়ে বিভ্রান্তি অনেক। তবুও ছায়ায় ঘুরছে ‘দাদা-দিদি’-দের নাম, শচীন, মিতা, মদন, জবা, বীরেন। আসলে দেড় দশক আগেও যে এই এলাকা ছিল মাও মুক্তাঞ্চল। ফলে বুড়িঝোরের পাহাড় ছুঁয়ে তাদের যে যাওয়া-আসা এখনও আছে, তা মানছে পুলিশও। তাই ভোটের আগের দিন থেকে সতর্কতায় নীল নকশা সাজিয়েছে যৌথ বাহিনী। চাপা আতঙ্ক বান্দোয়ানের কুঁচিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের দুয়ারসিনি থেকে একেবারে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা জনপদগুলিতে।
বুড়িঝোর, আসনপানি, থরকাদহ’র পাহাড়-জঙ্গল পেরলেই ঝাড়খণ্ড। পূর্ব সিংভূম জেলা, দলমা পাহাড় রেঞ্জ। একদা মাওবাদীদের অন্যতম ঘাঁটি। এখন সেই অতীতের ঘাঁটি না থাকলেও গা ছমছমে ভাব যায়নি বুড়িঝোর, আসনপানিতে। তাই ভোটের কথা জিজ্ঞেস করলেই কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যায় মুখ। বিকেলে দাওয়ায় বসে ছিলেন সুনীল সিং। তাঁর কথায়, “জানি না ভোট কবে। কেউ তো কিছু বলেনি।” ভোটের কথা যেন এড়িয়েই যেতে চায় বুড়িঝোর। বিকেলে মহিলাদের জটলায় কথা হচ্ছিল উর্মিলা সিং, নিরনী সিংয়ের সঙ্গে। ভোট নিয়ে প্রশ্ন করতেই মুখ দিয়ে কোন কথাই সরছে না। কেন দেওয়াল লিখন হয়নি? কেন রাজনৈতিক দলের প্রচার নেই? কেউ কি নিষেধ করেছে? একটাই উত্তর ‘নাই জানি।’ ভোটকে ঘিরে শুধুই নেই এই বুড়িঝোর-সহ ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা বিস্তীর্ণ জনপদে। তবে পাহাড়-জঙ্গল ছুঁয়ে থাকা এই জনপদে উন্নয়ন যে হয়নি, তা কিন্তু নয়। ঢালাই রাস্তা, নলকূপ, বাংলা আবাস যোজনার বাড়ি, বিনামূল্যে রেশন সবই আছে। তাহলে শাসকদল কেন পা রাখছে না গ্রামে? বান্দোয়ানের বিধায়ক তথা তৃণমূলের প্রার্থী রাজীবলোচন সোরেন ও বিজেপি প্রার্থী পার্শি মুর্মু দু’জনেই বলেন, “খোঁজ নিচ্ছি।” অদৃশ্য আতঙ্কেই ভোট প্রচার থেকে বাইরে থাকতে চায় পাহাড়-জঙ্গল ছুঁয়ে থাকা এই জনপদ।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.