সম্যক খান, মেদিনীপুর: গর্ভবতীই নন, তা সত্ত্বেও মাসের পর মাস সেই সংক্রান্ত ওষুধপত্র খাওয়ান হল এক মহিলাকে! প্রসবের দিন কয়েক আগে ইউএসজিতে জানা গেল, তাঁর গর্ভে কোনও সন্তানই নেই! বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবন চন্দ্র হাঁসদা বলেছেন, “ঘটনাটা ঠিক কী ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) গুড়গুড়িপাল থানার চাঁইপুর গ্রামের বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী গৌরী নায়েক। কয়েকমাস আগে প্রেগন্যান্সি টেষ্ট কিটে দুটি লাল দাগ দেখেই স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। অভিযোগ, ইউএসজি না করেই বধূর জন্য মা ও শিশুর সুরক্ষা কার্ড করে দেওয়া হয়। গিয়েছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেও। নিয়মিত চলছিল ওষুধ-ইঞ্জেকশন। অক্টোবর মাসে ছিল তাঁর প্রসবের তারিখ। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রামের এক বেসরকারি সেন্টারে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করতেই জানা যায়, ওই মহিলা আদৌ গর্ভবতী নন।
ওই মহিলার স্বামী সৌরভ নায়েক বলেছেন, বহুবার তাঁরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ঘুরেছেন ইউএসজি করার জন্য, কিন্তু কোথাও হয়নি। শেষে বেসরকারি সেন্টারের দ্বারস্থ হন তাঁরা। সেখানেই জানা যায়, আদৌ গর্ভবতী নন গৌরী। এতদিন যেসব ওষুধপত্র খাওয়ানো হয়েছে তাঁর স্ত্রীকে তাতে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে কিনা তা নিয়েই চিন্তিত সৌরভ। যথোপযুক্ত তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, ওই মহিলার চার ছেলেমেয়ে। সবথেকে ছোট সন্তানেরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূবনবাবু বলেছেন, “‘ফলস প্রেগন্যান্সি’ বলে ডাক্তারি ভাষায় কথা চালু রয়েছে। যতদুর খোঁজখবর নিয়ে জানা গিয়েছে, ওই মহিলা প্রেগন্যান্সি টেষ্ট কিটে দুটি লাল দাগ দেখেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা কিট দেখেই সাধারণভাবে দপ্তরের কার্ড করে দিয়েছে। তারপর তাকে ইউএসজি করানোরও কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি করাননি। এমনকি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলেও তিনি ইউএসজি না করিয়েই ফিরে গিয়েছেন। অথচ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে যথারীতি বলেছেন যে তার গর্ভে সন্তান নড়ছে। তা স্পষ্ট অনুভব করার কথা জানিয়েছেন ওই মহিলা। এখন ঝাড়গ্রামের কোনও বেসরকারি সেন্টার থেকে ইউএসজি করিয়ে জানা গিয়েছে যে প্রেগন্যান্সি নেই। পুরো বিষয়টি কী ঘটেছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.