Advertisement
Advertisement
Yusuf Pathan

পাঠান জিন্দা হ্যায়! সংলাপ অধীরগড়ে

অধীরগড়ে প্রার্থী হয়েও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ইউসুফ।

Lok Sabha Election 2024: Yusuf Pathan confident of capturing Adhir Chowdhury citadel

ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু।

Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:April 19, 2024 8:00 am
  • Updated:April 22, 2024 6:56 pm

অরিঞ্জয় বোস: ‘পাঠান জিন্দা হ্যায়!’ তাও আবার অধীরগড়ে! ভিড়ের মধ্যে চাপা ফিসফিস শুনে একটু চমকেই উঠতে হয়। সামনে তখন সবুজ শার্ট আর নীল জিনসে জনতার দরবারে মিশে গিয়েছেন ইউসুফ পাঠান (Yusuf Pathan)। মাথায় হ্যাট। অমলকান্তি রোদ্দুরে প্রায় ঝলসে যাচ্ছে চারিদিক। মোবাইল বলছে ‘ফিলিং লাইক’ গায়ে ফোসকা পড়ার মতো। তবে, সে সবের পরোয়া কে করে! পাঠান-মেজাজেই ইউসুফ নেমে পড়েছেন ভোটের প্রচারে। আর সেই এনার্জি দেখেই জনসমাগম থেকে ভেসে এল শাহরুখ-সংলাপ। একদা যে নাইট-মালিকের দলের হয়ে মাঠে নেমে ব্যাট হাতে যুদ্ধ করেছেন, সেই খানসাহেব যে তাঁর ভোটপ্রচারের আনাচে-কানাচেও মিশে থাকবেন, তা বোধহয় স্বয়ং ইউসুফও ভাবেননি।

অবশ্য ভাবার সময়ই বা কোথায়! এ তো আর ক্রিকেট-যুদ্ধ নয়। সে সংগ্রামের তিনি বিশ্বস্ত সৈনিক। ইডেনের মাটি-ঘাস জানে, সংকট এলে ইউসুফের ব্যাট কেমন কথা বলত। ভোটের ময়দান তাঁর কাছে একেবারে নতুন। তবে ইউসুফকে যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন যে, লড়াই তাঁর রক্তমজ্জায় মিশে আছে। সে জীবন হোক, ক্রিকেট কিংবা ভোট। যিনি লড়াই জানেন, তিনি আর যা-ই হোক, হাল ছাড়েন না। নতুন এই যুদ্ধে তিনি যে মোটেও পিছিয়ে নেই তা একেবারে ইনিংসের গোড়া থেকেই বোঝাতে শুরু করে দিয়েছেন ইউসুফ পাঠান। বোঝা যাচ্ছে, পিচে নামার আগে অলক্ষ্যে নেট প্র্যাকটিস সেরে রেখেছেন বেশ ভালোভাবেই। আর তাই গরমের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে তাঁর সরণিতে নেমেছে মানুষের ঢল। বাংলার মানুষ রাজনীতি নিয়ে একটু বেশিই স্পর্শকাতর। সেই মানুষ যেভাবে ইউসুফের জন্য অপেক্ষার প্রহর কাটালেন, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।

Advertisement
ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু।

[আরও পড়ুন: অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রার্থনায় সাতসকালে কালীঘাটে রাজ্যপাল, দিলেন পুজো]

জনতার বিশ্বাসের দাম দিতে ইউসুফও ষোলআনা তৈরি। এসেই খবর পেয়েছিলেন, কুমড়াই অঞ্চলে এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদের মতোই পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রয়াত কর্মীর বাড়িতে। খানিকক্ষণ সময় কাটালেন বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে। কথা বললেন। এলাকার নতুন প্রার্থীকে এই ভূমিকায় দেখতে পেয়ে মানুষের মনেও তখন বিশ্বাস চারিয়ে যেতে শুরু করেছে। ইউসুফের ডায়েরিতে এরপর ঠাসা কর্মসূচি। অতএব গন্তব্য, বড়ঞা ব্লক। সেখানে যাকে বলে দুয়ারে ইউসুফ। আক্ষরিকই প্রত্যেক বাড়ির দরজায় দরজায় পৌঁছলেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অভাব-অভিযোগ, আশা-প্রত্যাশা সবই বুঝে নিলেন। এর মধ্যেই ছুটে এল সেলফির আবদার। হাসিমুখে তাও মেটালেন। ইউসুফ জানেন, ভোটের পিচে রান শুধু একার কবজির জোরে আসে না, সেখানে জনতাই জনার্দন। অতএব সাফ জানিয়ে দিলেন, “আমি যতটা পারব, মানুষের সঙ্গেই থাকব। যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছব।” ততক্ষণে সূর্যদেব মধ্যগগনে। ব্লক প্রেসিডেন্টের বাড়িতেই তাই দুপুরের খাওয়াটা সেরে নিলেন। ফাঁকে ফাঁকেই সাজিয়ে নিচ্ছিলেন আসন্ন ভোট-যুদ্ধের রণনীতি।

Advertisement
ছবি: ব্রতীন কুণ্ডু।

নিজের স্ট্র্যাটেজির উপর তাঁর যে পুরো ভরসা আছে তা তাঁর শরীরী চেহারাতেই স্পষ্ট। তবে, ক্রিকেট আর নির্বাচন তো এক নয়। তাও কংগ্রেস গড় হিসাবে খ্যাত অঞ্চলে তাঁকে নামতে হয়েছে সম্মুখ-সমরে। যদিও গত বিধানসভায় সেই গড়ে ভাঙন ধরেছে, তার পরেও চোরা টেনশন তো থেকে যাওয়ারই কথা। অথচ তিনি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। আসলে তাঁর দর্শনটাই যে অন্যরকম! ভোটের ময়দানে নেমে তাই চিন্তার কোনও ছাপ নেই তাঁর চোখেমুখে। স্পষ্ট বলে দিলেন, “কোনওদিন বিপক্ষের খবর রাখিনি, যখন খেলতাম তখনও না, এখন ভোটে দাঁড়িয়েছি, এখনও নয়।” বোঝা গেল, ‘কংগ্রেস গড়’-এর চেনা বাউন্সারকে বাউন্ডারির ওপারে পাঠিয়েই তিনি শুরু করেছেন। এবার যে চওড়া ব্যাটেই খেলবেন সে আঁচ পাওয়া যাচ্ছে তাঁর আত্মবিশ্বাসেই।

[আরও পড়ুন: প্রথম দফা ভোটের Live Update: দেশজুড়ে শুরু লোকসভা নির্বাচন, কোচবিহারে রহস্যমৃত্যু জওয়ানের]

ইউসুফ সাফ জানেন, নির্বাচনের মূল কাণ্ডারি মানুষ। মানুষের চোখে তাঁর জন্য যে অপেক্ষা আর প্রত্যাশা লেখা আছে, সেই লাইন-লেংথ পড়তে একটু ভুল করেননি। সেই মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে যেতে ইউসুফ যেন বলতে চাইলেন, আমি তোমাদেরই লোক। জনতা সাদরেই সে স্বীকৃতি দিয়েছে তাঁদের বাস্তবের পাঠানকে। ভিড়ের ভিতর থেকে কে যেন তাই বলে উঠলেন, এ শুধু কুড়ি-বিশের খেলা নয়। ইনিংস লম্বা হবে। হবে কি হবে না সে তো ভোটের ফলাফল জানান দেবে। তবে, প্রচার যদি ট্রেলার হয়, তবে ইউসুফের এককালের দলের মালিকের সংলাপেই বলতে হয়, পিকচার আভি বাকি হ্যায়…।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ