‘স্টার সবসময় শেষ কথা নয়। ছবির হিরো হল বিষয়বস্তু।’ একথা প্রায়শই চিত্র সমালোচকদের মুখে শোনা যায়। কিন্তু তাও, তারকাখচিত বিগ বাজেটের সিনেমা মানেই বক্স অফিসে হিট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে মাঝেমধ্যে যে সমীকরণ ওলটপালট হয়ে যেতে পারে, ২০১৯ সাল তা হাতেনাতে প্রমাণ করে দিয়েছে। এ বছর এমন অনেক ছবি দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে, যা নিতান্তই কম বাজেটের। বেশি বাজেটের ছবিগুলিকে টেক্কা দিয়ে ট্রফি উঠেছে ‘তারিখ’ বা ‘উরি’র মতো কম বাজেটের ছবিগুলোর হাতে।
মন জয় করল যে সব কম বাজেটের বাংলা ছবি
নারী দিবসের সময় মুক্তি পেয়েছিল বাংলা ছবি ‘মুখার্জিদার বউ’। তার কিছুদিন পর মুক্তি পায় ‘তারিখ’। কাছাকাছি সময়ে মুক্তি পায় ‘শাহজাহান রিজেন্সি’, ‘বাচ্চা শ্বশুর’, ‘বসু পরিবার’, ‘ভিঞ্চিদা’র মতো বড় বাজেটের বাংলা ছবি। কিন্তু সমালোচক ও দর্শকের প্রশংসা জোটে ‘মুখার্জিদার বউ’ ও ‘তারিখ’-এর ভাগ্যে। এর মধ্যে ‘তারিখ’ জাতীয় পুরস্কার জিতে নেয়।
‘জ্যেষ্ঠপুত্র’, ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’, ‘কিডন্যাপ’, ‘শেষ থেকে শুরু’, ‘বিবাহ অভিযান’কে টপকে এ বছর মাঝামাঝি সময় বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল ‘কণ্ঠ’। শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশেও প্রশংসা কুড়োয় ছবিটি।
স্বাধীনতা দিবসের সময়, আগস্ট থেকে পুজোর আগে পর্যন্ত দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিল ‘গোত্র’। জিতের ‘প্যান্থার’, ঋত্বিক-পাওলির ‘শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য’, শুভশ্রীর কামব্যাক ছবি ‘পরিণীতা’কে টপকে দর্শকমনে জায়গা করে নেয় ‘গোত্র’। যদিও ‘পরিণীতা’ দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছিল প্রচুর, কিন্তু ‘গোত্র’ ছিল অপেক্ষাকৃত কম বাজেটের ছবি।
পুজোর সময় মুক্তি পায় বেশ কিছু বাংলা ছবি। এর মধ্যে ছিল ‘গুমনামি’, ‘মিতিন মাসি’, ‘পাসওয়ার্ড’, ‘সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ’। সব ছবিকে টপকে উঠে আসে ‘মিতিন মাসি’। শহরের মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গল স্ক্রিনে বহুদিন রাজত্ব করে এই ছবি।
‘কেদারা’ জাতীয় পুরস্কার পেলেও বক্স অফিসে তেমন সাফল্য পায়নি। এর কাছাকাছি সময় মুক্তি পায় বেশ কিছু সিনেমা। যেমন ‘টেকো’, ‘ঘরে বাইরে আজ’, ‘সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে’, ‘বহমান’, ‘সাগরদ্বীপে যকের ধন’, ‘উড়োজাহাজ’, ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’ ও ‘সাঁঝবাতি’। এখনও পর্যন্ত ‘ঘরে বাইরে আজ’ ও ‘প্রফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’ বাকি ছবিগুলোর থেকে অনেকটাই এগিয়ে।
হিন্দি ছবির মধ্যে কে কাকে টেক্কা দিল?
১২ জানুয়ারি মুক্তি পায় ‘উরি’। ওই একই সময়ে, একই দিনে মুক্তি পেয়েছিল ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’। বছরের প্রথম রিলিজ ছিল এই দুটি ছবি। মাসের শেষে মুক্তি পায় ‘ঠাকরে’ ও ‘মণিকর্ণিকা’। এই দুইয়ের মধ্যে ‘মণিকর্ণিকা’ অপেক্ষাকৃত কম বাজেটের। তবে এই সব ছবিকে টপকে ‘উরি’ কাঁপিয়েছিল বক্স অফিস।
এরপর বক্স অফিসে এসেছিল ‘এক লড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লগা’, ‘গাল্লি বয়’, ‘টোটাল ধামাল’-এর মতো ছবি। কিন্তু মাধুরী দীক্ষিত-অনিল কাপুর জুটি বা পর্দায় প্রথমবার বাবা-মেয়ে সোনম কাপুর ও অনিল কাপুরকে দেখা গেলেও বিষয়বস্তুর জোরে স্টারেদের ক্যারিশমাকে পিছনে ফেলে দেয় ‘গাল্লি বয়’। ৪০ কোটির ছবি আয় করে ২৩৮ কোটি টাকা। এমনকী ভারতের তরফ থেকে অস্কারের জন্যও নির্বাচিত হয় ছবিটি। ‘কেসরি’ ‘গাল্লি বয়’-এর ধারেকাছে গেলেও তাকে টেক্কা দিতে পারেনি।
তবে বিষয়বস্তু ভাল হলেও বক্স অফিস মাতাতে পারেনি ‘দ্য তাসখন্দ ফাইলস’। ওই সময় ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার ২’, ‘দে দে পেয়ার দে’, ‘পিএম নরেন্দ্র মোদি’, ‘ভারত’, ‘কবীর সিং’, ‘আর্টিকেল ১৫’-এর মতো পরপর অনেকগুলো ভাল ছবি মুক্তি পেয়েছিল। যদিও তার মধ্যে ‘কবীর সিং’, ‘আর্টিকল ১৫’ ছাড়া বাকিগুলো একেবারেই নজর কাড়তে পারেনি। কিন্তু কম বাজেটের ছবি বক্স অফিসে হিট, এই দিক থেকে দেখলে ‘আর্টিকল ১৫’ টেক্কা দিয়ে দেয় ‘কবীর সিং’কে। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছিল ‘কবীর সিং’। আয় করেছিল প্রায় ৩০৭ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র ২৯ কোটি টাকায় তৈরি ‘আর্টিকল ১৫’-এর লাভের অঙ্ক ৯৩ কোটি টাকারও বেশি।
একই অবস্থা হয় ‘সুপার ৩০’-রও। ২০০ কোটির বেশি আয় করলেও কম বাজটের ছবি ছিল না এটি। বরং ‘ছিছোড়ে’ (৫৪ কোটির ছবি আয় করে ২১২ কোটি টাকা) ও ‘ড্রিম গার্ল’ (৩০ কোটি টাকার ছবি আয় করে ২০০ কোটি টাকা) একে টপকে যায়। এই সময় আরও একটি ছবি বক্স অফিসে ধামাকা সৃষ্টি করে। সেটি অক্ষয় কুমারের ‘মিশন মঙ্গল’। ৩২ কোটি টাকার এই ছবি ২৯০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা করে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.