Advertisement
Advertisement
BJP

দেশপ্রেমের ‘সুগার কোটিং’ই বিজেপির অস্ত্র, জনতা কি বুঝবে না দিন-রাতের তফাত!

আদানি বা বিবিসি কাণ্ড থেকে এভাবেই দেশবাসীর নজর ঘোরাচ্ছে গেরুয়া শিবির?

BJP neglecting serious issues, trying to indulge people in nationalist ideology। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:February 22, 2023 11:09 am
  • Updated:February 22, 2023 11:09 am

বিবিসির ক্ষেত্রে যেমন ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’-এর সঙ্গে আয়কর তল্লাশির সম্পর্ক নেই, ছত্তিশগড়ের তল্লাশির সঙ্গেও তেমন ক্ষুদ্র রাজনীতি সম্পর্কহীন। প্রধানমন্ত্রীর নজরে শুধুই দেশকে শক্তিশালী করা। হতাশাগ্রস্ত বিরোধীদের অপ্রয়োজনীয় দাবিতে তিনি কর্ণপাত করেন না। শ্লেষ, যমক, বিরোধাভাসে বলা হলেও জনতা কি বুঝবে না দিন ও রাতের তফাত! লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

‘বিবিসি’র (BBC) অফিসে আয়কর তল্লাশির কারণ খুঁজতে যাবেন না। ওটা স্বাভাবিক, রুটিন ঘটনা। দশ বছর ধরে কিছু-কিছু বিষয়ে নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও ওরা গা করেনি। এ-দেশে কাজ করতে হলে দেশের আইন মানতে হবে। তাছাড়া ওটা মোটেই খানাতল্লাশি নয়। নিছক ‘সার্ভে’।

Advertisement

ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস নেতাদের বাড়ি ও অফিসেও ‘ইডি’ (ED) তল্লাশি চালিয়েছে। তার সঙ্গেও রাজনীতির কোনও সম্পর্ক খুঁজতে যাবেন না। ওই নেতারা কয়লা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শুল্ক তছরুপ করে প্রচুর টাকা কামানোর অভিযোগ আছে। তদন্তকারী সংস্থা তাদের কাজ করছে। ভাববেন না তল্লাশির সঙ্গে ওই রাজ্যে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের (২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি) কোনও সম্পর্ক আছে। কিংবা, বছর-শেষে বিধানসভার ভোট বলে সরকার এখন থেকেই ইডি-কে লেলিয়ে দিয়েছে কংগ্রেসকে চাপে রাখতে। নরেন্দ্র মোদির ভারতে এসব চলে না। কেন্দ্রীয় সংস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় না। সেসব হত কংগ্রেস আমলে। এই নতুন ভারতে সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স, এসএফআই, ইডি কিংবা এনআইএ-র কাছে দুর্নীতি ও অপরাধের গন্ধ-ই আসল। সেই গন্ধ ‘শাসক’-এর, না ‘বিরোধী’র, তা দেখা হয় না।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘উত্তরপ্রদেশে হচ্ছে কী?’, গান গেয়ে বিপাকে গায়িকা, হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে পেলেন নোটিস]

বিবিসি-র ক্ষেত্রে যেমন ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’-এর (India: The Modi Question) সঙ্গে আয়কর তল্লাশির সম্পর্ক নেই, ছত্তিশগড়ের তল্লাশির সঙ্গেও তেমন ক্ষুদ্র রাজনীতি সম্পর্কহীন। ঋষিতুল্য প্রধানমন্ত্রীর নজরে শুধুই দেশ আর দেশ। দেশকে শক্তিশালী করা, পঁাচ বছরের মধ্যে ভারতকে পঁাচ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে টেনে তোলাই লক্ষ‌্য। সেজন্যই হতাশাগ্রস্ত বিরোধীদের অপ্রয়োজনীয় দাবিতে তিনি কর্ণপাত করেন না। সংসদের ভিতর বা বাইরে তোলা অবান্তর প্রশ্নের জবাব দেন না। সবজান্তা সাংবাদিকদের মুখদর্শন করেন না। এসব সময়ের অপচয়। তার চেয়ে দেশ নিয়ে ভাবা বেশি জরুরি।

এই যে এত অল্প সময়ে পৃথিবীর অর্থনৈতিক মানচিত্রে যে মানুষটি ভারতকে এভাবে তুলে ধরেছেন, বাঘা বাঘা বড়লোককে টপকে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীর মর্যাদা ছিনিয়ে দেশকে গৌরবান্বিত করেছিলেন, সেই সৎ, পরিশ্রমী, জেদি ও দেশপ্রেমী শিল্পপতি গৌতম আদানিকে কোথায় মাথায় তুলে নেত্য করবে, তা না, তঁাকে টেনে নামাতে জালিয়াতি ও জোচ্চুরির ফালতু কাদা ছেটানো হচ্ছে! বিদেশিদের এই চক্রান্ত বুঝবে না? এই হল আমাদের জাত। ছিদ্রান্বেষী, পরশ্রীকাতর। ছি ছি!

[আরও পড়ুন: শ্রদ্ধার মতোই নৃশংস মৃত্যু হতে পারে! মুসলিম যুবককে বিয়ে করায় স্বরাকে তোপ সাধবী প্রাচীর]

এভাবেই দশচক্রে ভগবান ভূত হন! এজন্যই দেশ পরাধীন হয়েছিল। এই সারসত্যটুকু প্রধান সেবক অনেক আগেই বুঝেছেন। বুঝেছেন, এই ছিদ্রান্বেষী বিরোধীদের দিয়ে কিছু হবে না। তিনি কঠিন ও কঠোর। জাতীয়তাবাদী। দেশপ্রেমিক। নির্লোভ। পিছুটানহীন, আদ্যন্ত সৎ এক সন্ন্যাসী। তঁার রাজত্বে ‘হেরাফেরি’-র কোনও চান্স নেই। তঁার নেতৃত্বে উত্থিত ভারতকে দেখে পশ্চিমীদের কেন চোখ টাটাচ্ছে, তা ধরা পড়ে গিয়েছে। ঔপনিবেশিক মানসিকতা চায় না ভারত নিজের পায়ে দঁাড়াক, আত্মনির্ভর হোক, আমেরিকা-চিন-রাশিয়া বা ইউরোপকে টক্কর দিক, চোখে চোখ রেখে কথা বলুক। ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’ বা বিবিসি-দের দিয়ে তাই তারা যা খুশি করাতে চাইছে। ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’-কে দুর্বল করতে চাইছে। মানবাধিকার হরণের আজগুবি গপ্প ছড়াচ্ছে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শ পরিবেশ বিষাক্ত করে নাগরিক সমাজকে সন্ত্রস্ত করতে চাইছে। সংবিধানের মূল কাঠামোয় আঘাত হেনে সমাজকে অশান্ত করতে চাইছে। সেজন্য কখনও ব্যবহৃত হচ্ছে ‘ফ্রিডম হাউস’, ‘ভি-ডেম ইনস্টিটিউট’, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’-এর মতো একচোখো সংস্থা, যারা ভারতকে সেই আদ্যিকালে আটকে রাখতে চায়। কখনও লেলিয়ে দিচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের পোঁ-ধরা গণমাধ্যমকে, যারা স্বাধীন মতপ্রকাশের মেকি ধ্বজা ওড়ায়। কখনও বা তারা খড়কুটোর মতো অঁাকড়ে ধরছে জর্জ সোরোসের মতো নখদন্তহীন লোভী ধনকুবেরকে, যঁার অতীত অস্বচ্ছ, দাগি অথচ নিজেকে ধোয়া তুলসীপাতা মনে করেন। ধিক, এই নিচ মানসিকতাকে, এবং যারা এদের সুরে নাচে তাদের। তবে নাচতে সাধ জাগলে নাচুক। যত খুশি নাচুক। যত ইচ্ছে চেল্লাক। কিস্যু যায়-আসে না। প্রধান সেবকের কেশাগ্র কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। করবেই-বা কী করে? আছেটা কে? গালিভারের মোকাবিলায় সবাই তো লিলিপুট। এখনও এই ৭২-এ ৫৬ ইঞ্চি ছাতি টানটান করে দঁাড়ালে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও ছুঁচো হয়ে গর্তে সেঁধিয়ে যাবে। বারবার জনতা তো তাই দেখেছে।

সাধে কি আর পার্লামেন্টে দঁাড়িয়ে বুক ঠুকে ১৪০ কোটি বর্মের বাঙ্কারে থাকার কথা শোনান? ওরা বুঝছে না, রাজনীতির রকমসকম ন’বছরে কী বেমালুম পালটে গিয়েছে। মানুষ কীভাবে চেতনা ফিরে পেয়েছে। আগে কী হত? অতৃপ্ত আত্মার মতো আমজনতা একবার এদিক একবার ওদিকে ছুটত। নেতাদের অবিরাম মিথ্যে শুনে শুনে ভাবত ‘অাচ্ছে দিন’ সত্যিই বুঝি হাতের মুঠোয়। তারপর মরীচিকা ধাওয়া করে মাথা ঠুকে মরত। যেদিন থেকে ‘গুজরাট মডেল’ দেশের মডেল হয়েছে, উনি রাজ্য ছেড়ে কেন্দ্রে এসে দেশের হাল ধরেছেন, সেদিন থেকে এই ঘোর কলিতে ত্রেতা যুগেরও প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। মানুষ তো অন্ধ নয়। চোখের সামনে দেখছে প্রগতি কী, উন্নয়ন কী, সমৃদ্ধি কী, সুখ কী, স্বস্তি কী, স্বাচ্ছন্দ্য কী, রামরাজ্য কাকে বলে! দেখছে ‘নতুন ভারত’কে আমেরিকা-ইউরোপ কীভাবে নিত্যদিন তেলিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া কি সাধ করে কম দামে তেল দিচ্ছে? রক্তচক্ষু দেখানো আমেরিকা কীভাবে তেল কেনা নিয়ে আমাদের যুক্তি মানতে বাধ্য হয়েছে, তা কি পাবলিক দেখছে না? সাপ ও ব্যাং দুয়ের গালে কীভাবে চুমু খেতে হয়– ৫৬ ইঞ্চি না থাকলে কেউ কি দেখাতে পারত? তবে কেন সাধ করে আমজনতা বোকা বাবুইয়ের মতো গাছের ডালে বাসা বেঁধে ঝড়-জল-রোদ-বৃষ্টি-তুফানের মোকাবিলা করবে? ভেবো না, ভারতবাসী এত বোকা!

হ্যঁা, এটা ঠিক, কুঁজোরও চিৎ হয়ে শোয়ার সাধ জাগে। চার হাজার কিলোমিটার হেঁটেছ, গোঁফ-দাড়ি রেখে বিজ্ঞ সেজেছ, তো হয়েছেটা কী? ভারত তো ছাড়ো, রাজস্থান-কর্ণাটকের ঘর কি গোছাতে পেরেছ? আরে বাবা, রাজনীতি সিরিয়াসলি না করলে লাভ নেই। জলে নামব অথচ ডুব দেব না, ওটাকে কি স্নান করা বলে? রাজনীতি করব অথচ ভোটের প্রচারে যাব না, এর মানেটা কী? ত্রিপুরায় প্রচারে গেলে না। মেঘালয়-নাগাল্যান্ডেও নয়। দলের কান্ডারি হতে চাও অথচ এগিয়ে খেলবে না, আজকের দুনিয়ায় এসব চলে না ভাই। প্রধান সেবককে দেখো। দেখে শেখো। এই বয়সেও একটা দিন ফালতু যায় না। এসবের দাম নেই ভাবছ? ভুল। দাম আছে। মানুষ সব দেখে। সব শোনে। সব জানে। সব বোঝে। ওদের দেখে জনতা বুঝেছে ‘দেশসেবা’-র অর্থ কী। আর এরা? ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’-র রেশ থাকতে থাকতে কোথায় তেড়েফুঁড়ে নতুন কিছু একটা করবে, অন্তত একটা মার মার-কাট কাট চ্যালেঞ্জ খাড়া করবে, তা না, ভাই-বোন হাতে হাত ধরে কাশ্মীরে স্কি করছেন! স্নো বাইক চালাচ্ছেন! মৌজ করছেন! করো করো, দেদার ফুর্তি করো। যত করবে তত ভাল।

বিবিসি-র বাপবাপান্ত হচ্ছে। বিদেশি চক্রান্ত ফর্দাফঁাই হচ্ছে। আরে, এটাই তো পলিটিক্স! জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের ‘সুগার কোটিং’-এর পাশাপাশি আদিগন্তবিস্তৃত বাজার হিসাবে দেশের দরজা-জানালা পশ্চিমের কাছে খুলে রাখো। ওতেই কেল্লা ফতে। এই দেখো না, বিবিসি কাণ্ডে একটা কেউ ফোঁস করল? কেউ না। বোয়িং-এয়ারবাস বেচার খুশিতে সব ডগমগ। শোরগোল যতটুকু দেশেই। ওতে চিঁড়ে ভেজে না। অমোঘ শিক্ষা তো ইংরেজেরই দান– ভাগাভাগি করে রাখো ও ক্ষমতার ক্ষীর খাও।

(মতামত নিজস্ব)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ