Advertisement
Advertisement
Mohun Bagan

‘সময়ের চেয়ে এগিয়ে ভেবেছি’, বলছেন মোহনবাগানের সভাপতি টুটু বোস

কোনওদিন মোহনবাগানের ক্ষতি চাইনি, বলছেন টুটু বোস।

Made a long term successful plan, says Mohun Bagan president Tutu Bose after winning ISL | Sangbad Pratidin
Published by: Anwesha Adhikary
  • Posted:March 20, 2023 9:29 am
  • Updated:March 20, 2023 9:29 am

টুটু বোস: আজ বড় তৃপ্তির দিন। সঞ্জীব গোয়েঙ্কার একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় মোহনবাগান (Mohun Bagan) পরিবারের শরীরে সাময়িকভাবে ফুটে ওঠা ফাটলের রেখাটি মিলিয়ে গেল। এত স্মুথলি, যেন ফুলের থেকে টুপ করে শিশির ঝরে পড়ল মাটিতে। দ্বিধাবিভক্ত সবুজ মেরুন সংসার ফের এককাট্টা। বৃহত্তর সংঘ শক্তিতে ভরপুর। ‘মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস’। নতুন এই আত্মপরিচয়ে সবাই খুশিও। আমি শুধু এখানে যোগ করব-মোহনবাগান কিন্তু বরাবর ‘জায়ান্ট’। এবং চিরকাল মোহনবাগান ‘জায়ান্ট কিলার’। স্বাধীনতার আগে ‘ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্ট-কে হারিয়ে যেদিন আইএফএ শিল্ড জিতেছিল দেশের প্রাচীনতম ক্লাবটি, সেদিনই ইতিহাস লেখার সূত্রপাত। তাই ‘মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস’ নামটি যেমন মোক্ষম, তেমনই এর আবেদন সুদূরপ্রসারী। ইতিহাসের পাতাকে সোনালি অক্ষরে ফের ভরিয়ে তোলার জন্য আমি সমগ্র টিমকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাইরের এই আনন্দের ঘনঘটা থেকে সরে এসে এবার নাহয় আমার মনের উথালপাথালের কথা দু’-চারটে বলি।

শনিবার রাতে দু’-চোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না। ফ্ল্যাশব্যাকে বারবার ফিরে আসছিল পুরনো দগদগে ক্ষতের যন্ত্রণা। একটা সময়ে কী-কী না শুনতে হয়েছে আমাকে, আমার পরিবারকে! সমালোচনার সাইক্লোন যাকে বলে। ভাষায় প্রকাশ করা যায় না তা এতই কদর্য। তখন যে বিষ-মাখানো তিরের জ্বালায় সবচেয়ে অস্থির হয়ে পড়েছিলাম, তা হল–আমি নাকি মোহনবাগান ক্লাবকে বিক্রি করে দিয়েছি, নিজের ব‌্যবসার খাতিরে! যারা আঙুল তুলে এমন কথা বলেছিল, এবং যারা এই নাদান স্টেটমেন্টকে সমর্থন করেছিল, তারা হয়তো তলিয়ে ভেবেও দেখেনি, এর অর্থ আসলে কী দাঁড়ায়! মোহনবাগানকে নিয়ে আমি ব‌্যবসা করব? হাফ প্যান্ট পরা বয়সে ময়দানে আসতাম শুধু মোহনবাগানের খেলা দেখতে। স্বপ্ন ছিল, যদি কখনও মোহনবাগান ক্লাবকে পরিচালনা করার সুযোগ পাই খোলনলচে বদলে দেব এর ডিএনএ-র। এমন শক্তি, সাহস আর উদ্যম নিয়ে আসব যে মোহনবাগানের নাম শুনলে প্রতিপক্ষ ভয় পাবে, আবার সম্ভ্রমে নত হবে। বিভিন্ন দফায় ক্লাবের সভাপতি ও সচিব থাকার সময় করেওছি যথাসাধ্য। প্রয়োজনে সাধ্যের বাইরে গিয়ে করেছি। কিন্তু তার কোনওটাই লাভ-ক্ষতির কথা ভেবে নয়। ব্যক্তিগত স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য নয়। মোহনবাগান আমার আত্মার অংশ। সেই মোহনবাগানকে আমি বিক্রি করে দেব?

Advertisement

[আরও পড়ুন: শুভেন্দুকে চাপে রাখতে নয়া কৌশল, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি বঙ্গ বিজেপির বিরোধী গোষ্ঠীর]

কিন্তু মানুষের সন্দেহ কমেনি। আমার অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হয়েছে, আমি মোহনবাগানের খারাপ চাই! একটা পর্যায়ে এতই লেখালেখি হচ্ছিল, বেশ ধন্দে পড়ে গিয়েছিলাম। দশচক্রে ভগবানও ভূত হয়। ফলে আমিও ভাবতে শুরু করেছিলাম, সত্যিই কি ভুলচুক হয়ে গেল? মোহনবাগানের সঙ্গে খারাপ কিছু করে ফেললাম না তো? সেই সংকোচদীর্ণ, দমচাপা, অসহনীয় পরিস্থিতির অবসান ঘটল এতদিনে। আমি অত‌্যন্ত আবেগী মানুষ। বিশ্বাস করি, ‘আবেগ’ ফুটবলের অবিচ্ছেদ‌্য অংশ। কিন্তু কী জানেন, খেলার দুনিয়ার হালহকিকত যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে শুধুমাত্র আবেগ সম্বল করে ক্লাব চালানো বা বাঁচানো মুশকিল। আজ না হোক আগামী কাল, কর্পোরেটের হাত ধরতেই হবে। ফুটবল-বিশ্ব ধীরে ধীরে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। আমার আত্মজীবনী ‘শূন্য থেকে শুরু’-তে এই বিষয়ে সবিস্তার বলেছি। তাই এখন সংক্ষেপে এটুকুই বলার যে, বিরাট পুঁজির লগ্নি মোহনবাগানের জন্য দরকার ছিল। নতুন করে রক্তসঞ্চারের জন্য। কর্পোরেটের সান্নিধ্যে থাকলে আবেগ মরে যাবে, কোথায় তা লেখা আছে? কাজেই হাজারো নেতিবাচক কথা শোনার পরেও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। আসলে, সময়ের থেকে এগিয়ে ভাবতে চেয়েছিলাম। অনেকে সেই সময় তা হয়তো ধরতে পারেনি। ‘মার্জার’-এর পর শুরু থেকেই কিন্তু সাফল্য ছিল। প্রথম ৩ বছরে আমরা একবার রানার্স আর একবার চ্যাম্পিয়ন। আশা করি, সঞ্জীবের ঘোষণা এবং ‘ভারতসেরা’ হওয়ার পরে কারও মনে আর এই সংশয় থাকবে না যে, আমি মোহনবাগানের ক্ষতি চাইনি। বা, বিশ্বাসঘাতকতা করিনি এই ক্লাবের সঙ্গে জড়িত অগণিত সমর্থকের ভাবাবেগের সঙ্গে। ক্লাব ‘মার্জার’-এর সময় যারা কঠোর আক্রমণ করেছিল, তাদের প্রতি আর কোনও রাগ বা ক্ষোভ নেই আমার। বদলের সঙ্গে সহজ হতে মানুষের সময় লাগে। কিন্তু একবার তা আত্মস্থ হয়ে গেলে বদলকে মেনে নিতে অসুবিধে হয় না। সেটাই তো হল!

Advertisement

অপার শান্তি অনুভব করছি এখন। সত্যি খুব হালকা লাগছে। সঞ্জীবের কথা আবারও বলতে হয়। বহু দিনের পারিবারিক সম্পর্ক আমাদের। জানতাম, এত সমর্থকের মনের কথা সঞ্জীব ঠিক ‘ডিকোড’ করতে পারবে। জানতাম, আমার আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা ঠিক দেবে। আসলে, সঞ্জীব নিজেও মোহনবাগানের সমর্থক। তাই সমর্থকদের আবেগকে সম্মান দিয়ে তাদের মনের কথাটি শুনতে ভুল করেনি। আরও একটি আনন্দের খবর হল, মোহনবাগান হকি লিগেও এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। হকিতেও সবুজ-মেরুনের দীর্ঘ গৌরবময় ইতিহাস আছে। কিন্তু অঞ্জন কখনও অ্যাস্ট্রোটার্ফ ছাড়া হকি খেলতে চায়নি। কেননা, আধুনিক হকি তো আর ঘাসের মাঠে হয় না। ২২ বছর পর মোহনবাগান হকি লিগের খেতাব ঘরে এনেছে। এই উচ্চতায় যেতে পারার জন্যও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সবাইকে।

জেতার খিদে, অদম্য লড়াইয়ের ইচ্ছা, কিছু অর্জন করতে চাওয়ার আগুন, আর গোছানো পরিকাঠামো। এটুকুই তো মোহনবাগানের রক্তে চারিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কর্পোরেটের সঙ্গে সন্ধি করার নেপথ্যেও ছিল এই এক মানসিকতা। এই ‘মার্জার’-এর আগে টুম্পাই ও দেবাশিস একটু দ্বিধায় ছিল। তখন ওদের বুঝিয়েছিলাম–দেখিস, এই ‘মার্জার’ মোহনবাগানকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজ আবারও বলছি, মোহনবাগানকে যেতে হবে আরও আরও আরও অনেকটা পথ। অনেকটা চড়াই টপকে গিয়ে পৌঁছতে হবে প্রথম সূর্যের মধুর দীপ্তির সামনে। আর তো মতান্তর নেই। ভেদাভেদ নেই। মোহনবাগান পরিবার এখন এক পঙ্‌ক্তিতে। তাহলে সবুজ মেরুন নৌকোর পালের বাতাস কাড়বে কে?

[আরও পড়ুন: ৩৭ ঘণ্টা ম্যারাথন জেরা, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এবার গ্রেপ্তার শান্তনু ঘনিষ্ঠ প্রোমোটর অয়ন শীল]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ