Advertisement
Advertisement
Forgotten history of independence

বিস্মৃত বিপ্লব

এই ঘটনার অভিঘাতে রচিত হয়েছে ‘জঙ্গিয়ার গীত’।

The history of Chittagong Collectorate treasury loot is forgotten today। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:August 15, 2023 2:07 pm
  • Updated:August 15, 2023 2:07 pm

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের কাহিনি বহুল প্রচলিত হলেও চট্টগ্রাম কালেক্টরেটের কোষাগার লুট, জেল ভেঙে কয়েদিদের মুক্ত করে পার্বত্য রাজ্য জয়ন্তিয়ার উদ্দেশে পালিয়ে যাওয়া, মাঝপথে অসমের লাতুতে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ– ক’জন মনে রেখেছে? অথচ এই ঘটনার অভিঘাতে রচিত হয়েছে ‘জঙ্গিয়ার গীত’। যে পল্লিগীতির পটভূমি চট্টগ্রাম থেকে সুরমা-বরাক উপত্যকা পর্যন্ত। স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ প্রবন্ধ। লিখলেন পল্লব নিয়োগী

জঙ্গিয়ায় কান্দেরে ও আল্লা বনর ঘাস খাইয়া।/ সুবেদার বা’দুরে কান্দইন ঐ দ্বীনর লাগিয়া।।

Advertisement

হে আল্লা, যোদ্ধারা বনের ঘাস-পাতা খেয়ে কেঁদে মরে আর সুবেদার বাহাদুর কাঁদে ধর্ম প্রতিষ্ঠার আকুতিতে। শ্রীহট্ট-কাছাড়ের গ্রামাঞ্চলে একসময় ‘জঙ্গিয়ার গীত’-এর জনপ্রিয় এই দু’টি চরণ অহরহ শোনা যেত হাটে-বাজারে, মাঠেঘাটে, চাষি-শ্রমিকদের মুখে মুখে। ‘জঙ্গ’ অর্থাৎ যুদ্ধ আর তাই ‘জঙ্গিয়ার গীত’ হল যোদ্ধাদের গীত। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের যে-আগুন বারাকপুর আর মিরাটে জ্বলে উঠেছিল, তার স্ফুলিঙ্গ ঝলসে উঠেছিল চট্টগ্রামেও। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের কাহিনি সবার জানা।

Advertisement

কিন্তু, চট্টগ্রাম কালেক্টরেটের কোষাগার লুট করে জেল ভেঙে কয়েদিদের মুক্ত করে পার্বত্য রাজ্য জয়ন্তিয়ার উদ্দেশে বিদ্রোহীদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এবং মাঝপথে অসমের করিমগঞ্জ জেলার লাতুতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের কথা অনেকটাই বর্তমানে বিস্মৃতির অন্তরালে।

[আরও পড়ুন: পুলওয়ামা-গালওয়ান সত্ত্বেও লালকেল্লায় ‘নিরাপদ’ ভারতের ছবি আঁকলেন মোদি]

মহাবিদ্রোহের সময় বাঙালি শিক্ষিত সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ব্যক্তিগত অনুগ্রহ লাভের বাসনায় ছিল ব্রিটিশ পদলেহী। শিক্ষিত বাঙালিরা প্লেগের আতঙ্কের মতোই সিপাহি বিদ্রোহকে দেখত শঙ্কার দৃষ্টিতে। সমকালীন কবি-সাহিত্যিকদের অনেকের বিবেচনায় নীরব থাকা ছিল লাভজনক। সেই উদাস নিরুচ্চারিতার সময় ছিল প্রকৃতপক্ষে যেন এক ‘নিঃশব্দ মুহূর্ত’। তাৎপর্যপূর্ণ, বাঙালি অভিজাত শ্রেণির এহেন মনোভাবের বিপ্রতীপে মহাবিদ্রোহের আগুন তৃণমূল স্তরে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও উন্মাদনার সঞ্চার করেছিল। হাতে অস্ত্র নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রাস্তায় না নামলেও, এই মহান বিদ্রোহ তাদের মনে জাগিয়ে তুলেছিল মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা। ‘কী হল রে জান/ পলাশী ময়দানে উড়ে কোম্পানি নিশান।’

পলাশীর প্রান্তরে স্বাধীনতা হারানোর বেদনা পল্লিকবির চেতনায় সেদিন হাহাকার জাগিয়েছিল। সেই আর্তি-ই আবার সিপাহি বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গের স্পর্শে উজ্জীবিত হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে শামিল হতে মানুষকে উদ্দীপনা জুগিয়েছে। চট্টগ্রামের কোষাগার লুণ্ঠন সেরকমই একটি ঘটনা এবং তার আচমকা অভিঘাত জনমানসে এমনই আলোড়ন তুলেছিল যে, সেটি অবলম্বন করেই রচিত হয়েছিল ‘জঙ্গিয়ার গীত’। যে পল্লিগীতির পটভূমি ছিল চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে সুরমা-বরাক উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত। মুক্তির স্বপ্ন এবং স্বপ্নভঙ্গের বেদনা সেই কাহিনিকে করে তুলেছে ভারি করুণ ও মর্মস্পর্শী।

[আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসেও নির্বাচনী রাজনীতি! মোদির মাথায় রাজস্থানি পাগড়ি]

২০২০ সালে কোভিড অতিমারীর পরিপ্রেক্ষিতে লকডাউন ঘোষণার ঠিক আগে মার্কিন দূতাবাসের কাজে গিয়েছিলাম অসমের বরাক উপত্যকায়। সেখানে গিয়েই লাতু-র কথা প্রথম জানতে পারি। শিলচরে সম্প্রতি প্রয়াত ‘সেন্টিনেল’ সংবাদপত্রের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বর্ষীয়ান অধ্যাপক জ্যোতিলাল চৌধুরী এবং অসম সরকারের ‘আজান পীর’ পুরস্কারপ্রাপ্ত লোকসংস্কৃতি গবেষক ড. অমলেন্দু ভট্টাচার্য লাতু-র ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা জানিয়েছিলেন। তাঁদের বিবরণ শুনে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কুশিয়ারা নদীতীরে অবস্থিত ছোট একটি গ্রাম লাতুতে গিয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের আকর্ষণ রোধ করতে পারিনি। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ঢেউ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত সেই অঞ্চলটিতেও আছড়ে পড়েছিল।

১৮৫৭ সালে শ্রীহট্টে ব্রিটিশ ডেপুটি কমিশনার আর. ও. হেউডের আমলে স্থানীয় জনগণ এক সন্ত্রাসজনক পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। বারাকপুর ও মিরাটের বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার সর্বত্র বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। বিদ্রোহ নিয়ে নানা গুজবও ছড়াচ্ছিল। নিরাপত্তার কারণে হেউড তঁার স্ত্রীকে চেরাপুঞ্জি পাঠিয়ে দেন। অবশ্য শ্রীহট্ট-কাছাড়ের পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট আর. স্টুয়ার্ট কলকাতায় বেঙ্গল গভর্নমেন্টের সেক্রেটারিকে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিলেন, ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহ কাছাড়ের সাধারণ জনমানসে কোনও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি, ‘all remains quiet in Cachar.’ কিন্তু সেই শান্তি বেশিদিন বজায় থাকেনি।

ব্রিটিশ প্রশাসন স্থানীয় মানুষের বিদ্রোহী চেতনার আভাস তখনও অঁাচ করতে পারেনি। ওই বছরই ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামে ‘৩৪ নেটিভ ইনফ্যান্ট্রি’-র ৩০০ সৈনিক বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। কালেক্টরি থেকে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৬৭ টাকা লুট করে তিনটি হাতি নিয়ে এবং জেলখানা ভেঙে কয়েদিদের মুক্ত করে তারা ফেনি নদী পেরিয়ে ত্রিপুরার দিকে পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে সেনা ছাউনি ও অস্ত্রাগারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হাবিলদার রজব আলি খান। বিদ্রোহীদের ধারণা ছিল, তারা হয়তো স্বাধীন ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় পাবে। কিন্তু তার আগে চট্টগ্রাম থেকে ব্রিটিশ প্রশাসন ত্রিপুরার মহারাজা ও উপজাতি নেতাদের কাছে বার্তা পাঠিয়ে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়। কাজেই বিদ্রোহীরা সেখানে বাধা পেয়ে কুমিল্লার দিকে এগিয়ে শ্রীহট্টর দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য এলাকায় আত্মগোপন করে।

লুট করা সম্পদের এক বড় অংশ এবং তিনটি হাতি তাদের হাতছাড়া হয়। শ্রীহট্টর উপকণ্ঠে মৌলবি বাজার অঞ্চলে লংলার জমিদার মৌলবি আলি আহম্মদ খাঁ-এর বৃদ্ধ পিতা ধর্মপ্রাণ গৌছ আলি খঁায়ের থেকে বিদ্রোহীরা রসদ আদায় করে। এরপরে লংলা বাজার লুট করে বিদ্রোহীরা পৌঁছে যায় কাছাড়, ত্রিপুরা ও বাংলা সীমান্ত প্রতাপগড়ে। সেই জায়গাটিই আজকের করিমগঞ্জ। সেখান থেকে তারা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আরও উত্তরদিকে লাতুর পথে এগিয়ে যায়।

সেই সময় লাতু-ই ছিল করিমগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র। অন্যদিকে চট্টগ্রামের পলাতক বিদ্রোহীদের উপর ব্রিটিশ সরকার নজর রেখেছিল। ‌‘বোর্ড অফ রেভিনিউ’-এর মেম্বার মিস্টার অ্যালেনের নির্দেশে ‘সিলেট লাইট ইনফ্যান্ট্রি’-র কমান্ডন্ট মেজর বিং বিদ্রোহীদের গতিরোধ করতে ১৬০ জন সৈনিক নিয়ে মাত্র ২৬ ঘণ্টায় ৮০ মাইল পথ পেরিয়ে প্রতাপগড়ে এসে ঘঁাটি গাড়েন। শ্রান্ত সেনারা তখন সবে রান্নার আয়োজন করছিল। এমন সময় খবর আসে বিদ্রোহীরা লাতুর দিকে অগ্রসর হয়েছে। প্রতাপগড়ের জমিদার তঁার এক প্রজা কালা মিয়াকে দিয়ে বিদ্রোহীদের গতিবিধির খবর ব্রিটিশদের জানিয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে মেজর বিং সেনাদের লাতু যাওয়ার আদেশ দেন। অচ্যুতচরণ চৌধুরী এই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তঁার ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘সেনারা অর্ধসিদ্ধ অন্ন ত্যাগ করে যাত্রা করল।’

চট্টগ্রামের ঘটনার ঠিক একমাসের মাথায় লাতুর বাজারের কাছে বিদ্রোহীদের সঙ্গে ব্রিটিশ সৈন্যের মোলাকাত হয়। বিদ্রোহীরা কুশিয়ারা নদীর পারে মালেগড় টিলায় আশ্রয় নিয়েছিল। বিদ্রোহীরা তখন দুর্বল। অনাহারে ও পরিশ্রমে ক্লান্ত। কিন্তু তাদের মনোবল অটুট। ব্রিটিশ বাহিনীর স্বদেশি সেনাদের মধ্যে জাতীয় চেতনা জাগাতে তারা অস্ত্রত্যাগ করার আহ্বান জানায়। ব্যর্থ হয়ে তাদের খ্রিস্টানের কুকুর, বিশ্বাসঘাতক ও গোলাম বলে গালাগালি করে। অবশেষে দু’-পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হয়। ব্রিটিশ সৈন্যের অবস্থান ছিল নদীতীরে নিচে। টিলার উপর থেকে চালানো বিদ্রোহীদের গুলিতে মেজর বিং-সহ আরও পাঁচ সৈন্য নিহত ও একজন গুরুতর আহত হয়। এরপর লেফটেন‌্যান্ট রস-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনার আক্রমণে ২৬ জন বিদ্রোহী শহিদ হন। বাকিরা পাহাড়-জঙ্গল, নদী-বাওড়ের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে যান। লেফটেন‌্যান্ট রস বিদ্রোহীদের জঙ্গলপথে তাড়া না করলেও,
কয়েক দিন পর আবার কিছু দলছুট বিদ্রোহীর সঙ্গে তাদের লড়াই হয়। তাতে বিদ্রোহীরা পুরোপুরি ছত্রভঙ্গ হয়ে অনেকেই অনাহারে ও রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এরপর কিছু বিদ্রোহী ভুবন পাহাড় পেরিয়ে মণিপুরে প্রবেশ করে মণিপুরি রাজপুত্র নরেন্দ্রজিৎ সিংহ-র সঙ্গে সন্ধি করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যান। কিন্তু তার আগে আরও কিছু বিদ্রোহীর সঙ্গে ব্রিটিশদের সংঘর্ষ হয় কাছাড়ের কাছে বিন্নাকান্দিতে। সেখানে ১৮ জন শহিদ হন।

চট্টগ্রামের এই বিদ্রোহ ও তঁাদের পরাজয় গাথাই প্রতিফলিত হয়েছে ‘জঙ্গিয়ার গীত’-এ। সেই কাহিনি অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ব্রিটিশ বাহিনীর এক মুসলমান সুবেদারের ছেলের ‘আকিকা’ অনুষ্ঠানে (হিন্দু পরিবারে অন্নপ্রাশনের মতো) শুক্রবার দুপুরে নামাজের পর ভোজসভায় সব মুসলমান সৈনিকের আমন্ত্রণ ছিল। ১৪ জন বাবুর্চি রান্না করল। বাংলোয় বসে খবর পেলেন ব্রিটিশ ফৌজের ছোটকর্তা। নিমন্ত্রণ না পেয়ে অপমানিত। বেয়ারা আশ্বস্ত করে বলে, নামাজ শেষ হলে সাহেবের জন্য লোক মারফত ‘শিরনি’ আনানো যাবে। কিন্তু তঁার তর সয় না। ওই সুবেদারের স্পর্ধা বরদাস্ত করতে না পেরে ছোট সাহেব উন্মত্ত হয়ে টাট্টু ঘোড়ায় চেপে হাজির হলেন অনুষ্ঠানস্থলে। সেই মুহূর্তে তঁার মাংস চাই।

এদিকে নামাজের আগে খাবার দেওয়া যাবে না। ফলে, ছোট সাহেব রাগে গজরাতে গজরাতে রান্নাঘরে ঢুকে সব আয়োজন নষ্ট করে, ডেগের গায়ে লাথি মেরে, থুতু ছিটিয়ে এলোপাথাড়ি চাবুক মেরে নিজের বাংলোয় ফিরে গেলেন। ওদিকে অনুষ্ঠান পণ্ড ও অপবিত্র করার কথা জানতে পেরে সুবেদার গিন্নি রণরঙ্গিণী মূর্তি ধরে ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সাহেবের বাংলোয় পৌঁছলেন এক হাতে ঢাল, অন্য হাতে তরবারি নিয়ে। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ‘বিসমিল্লা’ বলে হুংকার দিয়ে এক কোপে মাথা উড়িয়ে দিলেন সাহেবের। দেহ মাগুর মাছের মতো টুকরো টুকরো করে কম্বল দিয়ে বিছানায় ঢেকে ঘরে ফিরলেন প্রবল গর্বে। অত্যাচারী ইংরেজকে হত্যা করে তিনি জেহাদ ঘোষণা করলেন, ‘নিশ্চয় করিব জাঙ্গাল চাটিগাউ শহর’ অর্থাৎ, গোটা চট্টগ্রাম শহরকে আজ নিশ্চিত শ্মশানে পরিণত করব।

এভাবেই ছড়িয়ে পড়ল বিদ্রোহের আগুন। আবার সব শেষে বিদ্রোহীদের পরাজয়ের গ্লানিও ফুটে উঠেছে সকরুণ ভাবে–“ভাগিল জইঙ্গা সিপাই মনে আইল দুখ।/ কী দিয়া করিতাম আমরা ছাড়িয়া গেছে সব॥/ কান্দিয়া কুটিয়া তারা করিল গমন।/ যে যেবায় পারে তার বাঁচাইতে জীবন॥”

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাহাড়, জল, জঙ্গল-ঘেরা প্রতিকূল পরিবেশে এই বিদ্রোহীদের আত্মত্যাগ ও অবদানের দৃষ্টান্ত ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। লোকমুখে প্রচলিত এসব গাথা সংকলন করেছিলেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুবীর কর, তাঁর লেখা ‘মহাবিদ্রোহের দ্রোহগাথা: জঙ্গিয়ার গীত’ বইয়ে। এখন সেই বই দুষ্প্রাপ্য। এছাড়া, আকাশবাণী শিলচর কেন্দ্র একসময় ১৩টি পর্বে এই ঐতিহাসিক কাহিনি সম্প্রচার করে। দূরদর্শন কেন্দ্র তৈরি করে একটি তথ্যচিত্র। দেশের মূল প্রবাহের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মনস্তাত্ত্বিক ব্যবধান কমাতে ‘আকাশবাণী’ ও ‘দূরদর্শন’-এর ওই অনুষ্ঠানগুলি স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের আবহে নতুন করে মানুষের গোচরে নিয়ে আসা উচিত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ