Advertisement
Advertisement

Breaking News

সঞ্জয় দত্ত

‘খলনায়ক’ সঞ্জয়ের অসুস্থতায় মনখারাপ, ‘জাজমেন্টাল’ সোশ্যাল দুনিয়ার এই কি অন্য রূপ?

রহস্যের আরেক নাম 'সঞ্জয় দত্ত'।

Why netizens have gone ga ga over Sanjay Dutt's Cancer news
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:August 15, 2020 4:01 pm
  • Updated:August 15, 2020 4:01 pm

সরোজ দরবার: বেশ অবাক হওয়ার মতোই ব্যাপার। সঞ্জয় দত্তের ক্যানসারের খবর ভেসে আসা মাত্রই, যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মনখারাপে ছেয়ে গেল। সঞ্জয় দত্ত, অমিতাভ বচ্চন কি শাহরুখ খান তো নন। আবার, ভালমানুষের যে চেনা টেমপ্লেট আমাদের ধারণায় পাতা, তাতেও ঠিক ফেলা যায় না তাঁকে। তাহলে? তবু এত মনখারাপ! এইটাই রহস্য। এবং অবশ্যই এই রহস্যের নাম সঞ্জয় দত্ত (Sanjay Dutt)।

খেয়াল করলে দেখব, এই সময়টার ভিতর অসহিষ্ণুতার ম্যালিগনেন্সি। ফলত, পলিটিক্যাল কারেক্টনেস যেন ফ্যাশন-স্টেটমেন্ট। সেই সঙ্গে জ্যাঠামশায়ের ছড়ি হয়ে ঘুরছে নীতিপুলিশি। এদিকে, নেপোটিজম নিয়ে বিস্তর হইচই। এক অভিনেতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দড়ি টানাটানি রাজনৈতিক দলগুলির। টিআরপি বাড়ছে সঞ্চালকের কণ্ঠস্বরে। তদন্তের গলি-খুঁজি খুলে দিচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবসার নয়া সড়ক। আর সেই ‘ভালমানুষি’ হাওয়ায় কিঞ্চিৎ বেসামাল ইন্ডাস্ট্রি। এমত সময়ে, সঞ্জয়ের মতো একজন মানুষকে, যাঁকে ঠিক ভালোমানুষের চেনা খোপে আটকে রাখা যায় না, তাঁর জন্য মনখারাপে উথালপাথাল নাই-ই হতে পারত সোশ্যাল মিডিয়া। ড্রাগ, নারীসঙ্গ, বেআইনি অস্ত্র রাখার নমুনাগুলো সামনে রেখে হয়তো বজায় রাখতে পারত ‘সামাজিক দূরত্ব’। সঞ্জয় দত্ত চলে যেতেন খবরের কাগজের ভিতরের পাতার কোনও এক কোণে থেকে-যাওয়া চার লাইনে। কিন্তু কোথায় কী! এই বয়সে, এই ওলটপালট হাওয়ার ভিতরও, তিনি সঞ্জয় দত্ত, ঠিক জায়গা করে নিলেন শিরোনামের আশেপাশেই।

Advertisement

Advertisement

আসলে, সঞ্জয় দত্ত বললে উড়ে যায় একটা খোলা পাতা। যে নিজেই স্বীকার করে নেয়, সে নায়ক নয়, খলনায়ক। হ্যাঁ, এমনকি রিল লাইফের বাইরেও। তালিকা করতে বসলে রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবে তাঁকে তেমন করে হয়তো রাখা যাবে না। আবার, ভিলেনের চেনা সংজ্ঞা বা বৈশিষ্ট্য তাঁর জন্য নয়। সঞ্জয় দত্ত তুখড় অভিনেতা? তেমন আত্মপ্রত্যয়ে অতিবড় ‘জাবড়া ফ্যান’ও এ-কথা বলতে পারবেন না। তবে, তিনি কে? প্রকৃত প্রস্তাবে তিনি একটা ঘটনা। একেবারে সৃষ্টিছাড়া সৃষ্টি। আমাদের চেনা ধারণার বাইরে, এমন একজন, যাঁর রিল ও রিল লাইফের ভিতর তেমন কোনও আড়াল নেই।

[আরও পড়ুন: বেহাল অর্থনীতিতে শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারিকরণই বিকল্প পথ]

অথচ, যে-সময়ে তাঁর উত্থান, যে-পরিবার থেকে তাঁর আসা, সেখানে এই আড়ালটাই ছিল দস্তুর। সঞ্জয় বেখাপ্পা রকমের ব্যতিক্রম। সিনে-সাংবাদিকতার সেই অ্যানালগ-যুগে সঞ্জয় ছিলেন রঙিন ঘুড়ি। তখন না ছিল সোশ্যাল মিডিয়া মারফত তারকাদের ইমেজ নির্মাণ। না ছিল টুকরো-টাকরা মন্তব্যে তারকাদের মনের গহনের খোঁজ পাওয়া। সঞ্জয় সেখানে একাই ভরিয়ে ও উড়িয়ে দিতেন নিউজপ্রিন্ট। তাঁর খারাপ ছেলের ইমেজ। লম্বা লম্বা চুল। ঠোঁটে সিগারেট। মুখে একটা ডোন্ট কেয়ার হাসি। বাড়ির সঙ্গে ঝামেলা। নেশা ও নারী। সব মিলিয়ে সঞ্জয় এমন এক ককটেল, যেখানে হ্যাং-ওভারের সমূহ সম্ভবনা, কিন্তু ঠোঁট না-ছুঁইয়ে উপায় নেই। সিনে-পত্রিকারা লুফে নিয়েছিল সঞ্জয়কে। এই সাবজেক্টকে। সযত্নে নির্মাণ হয়েছে সঞ্জয় নামক মিথ। নায়ক, অভিনেতাদের, তারকাদের গোপন প্রেম এইসবের ক্লিশের অতীত সঞ্জয় জোগান দিয়ে যেতেন একের পর এক বিস্ময়। কোনও কিছুই তিনি অস্বীকার করেন না। কোনও অভিযোগই লোকান না। তাঁর পালানো নেই। যেন বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আছে। যেমনটা পর্দার নায়করা করেন। যেন ডোন্ট কেয়ার!

এই ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউডের ব্যাড বয়টিকে একসময় ভারি আপন করে নিয়েছিলেন দর্শক। পাড়ায় পাড়ায় তখন লুকিয়ে সিডি এনে সিনেমা দেখার দিন। ভিসিআর ভাড়া। রঙিন টেলিভিশন। সমবয়সিদের ফিসফাস। গা টেপাটেপি। মায়াজীবনের চৌকাঠে পা রেখে মাধুরী-মৌতাতে মাতাল। তিনি তখন পর্দায় আগুন ঝরানো। যুবকের স্বপ্ন শাসন করেন। তাঁর উলটো দিকে দাঁড়াবে কে? ছাপোষা মধ্যবিত্ত পাড়ার সব যুবকের হয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন একা সঞ্জয়। তীব্র পুরুষালি চেহারা। সেনসুয়াস মাধুরীর বিপরীতে ম্যানলি সঞ্জয়। একটা জুড়ি জমল। এবং ভাসিয়েও নিয়ে গেল। নিউজপ্রিন্ট থেকে সঞ্জয়-মাধুরী বেরিয়ে এসে পড়ার টেবিল কিংবা দেওয়ালে জায়গা করে নিলেন। ছেলেদের পাড়ার আড্ডা, ক্লাবঘর এমনকি সেলুনে-সেলুনে লম্বা-চুল সঞ্জয়ের রাজত্ব। আর লুকিং গ্লাসের পাশে কি ফটো তোলার স্টুডিওর দরজার ভিতর ও বাহিরে মুক্তসাদা হাসি নিয়ে মাধুরী (কখনও রেখা বা শ্রীদেবী)। সে-এক জমজমাট সময়। পাড়া ভেসে যায় কুমার শানু বা উদিত নারায়ণে।

সেই সময়টা আজকের মতো এমনধারা জাজমেন্টাল ছিল না। পান থেকে চুন খসা সামাল দিয়ে দিয়ে চলা ছিল না। কতদূর গেলে নেপোটিজম, তা নিয়ে সুবিধাভোগীর চুটকি ও চিমটি ছিল না। ফলে, সেই সময়টা, এই ব্যাড বয় সঞ্জয়কে আপন করে নিতে আগুপিছু ভাবেনি। মুন্নাভাই এসে সঞ্জয়কে সব অর্থেই নতুন জীবন দিয়েছে। এক জীবনে এত রকমের জীবন বেঁচেছেন সঞ্জয়, যে তাঁর জীবনের গল্প সিনেমার মতোই। ফলে তাঁকে নিয়ে সিনেমা হওয়া প্রায় অবধারিতই ছিল। তাঁর সমসময়ের আর-কোনও অভিনেতার সম্ভবত এই সৌভাগ্য হয়নি। ওই যে সঞ্জয় গোড়াতেই ছিলেন বেখাপ্পা রকমের আলাদা। সেটাই তাঁর ইউএসপি। তাঁকে মন্দগুলিই আদায় করে নিয়েছে তাঁর প্রতি ভালোবাসা।

Sanjay Dutta

আজ, এই একেবারে বদলে যাওয়া সময়ে, সঞ্জয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে সোশ্যাল মিডিয়া যে কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই মনখারাপ জানাল অকপট, তা সম্ভবত কেবল উদ্বেগজনিত নয়। এই অসুস্থতার ভিতর কাজ করতে থাকে ব্যক্তিগত বিষণ্নতার লিপিও। তা জানান দেয় সেই হাসিখুশি সময়ের উল কবে যেন খুলে গেছে। এখন কেবলই এলোমেলো হয়ে যাওয়া। গভীর থেকে গভীরতর কোনও অসুখের ভিতর ঢুকে পড়া এখন নিয়তি। সেই হারানো সময়টুকুকে ব্যাপকভাবে মিস করাই বোধহয় লুকিয়ে আছে এই মনখারাপে। সঞ্জয়ের অসুস্থতা যেন অনেককে এক ঝটকায় মনে করিয়ে দিল এবার ঝরাপাতার মরশুম।

[আরও পড়ুন: বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ৩০০ বছর আগের নীতি নিয়েই মেয়ের উপর করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ পুতিনের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ