Advertisement
Advertisement
Income Tax

আয়কর ছাড়ে ফিরবে সুদিন?

এবারের বাজেট করা নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের কাছে একটি কঠিন কাজ।

Will govt provide income tax relief to middle class | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:January 25, 2022 6:12 pm
  • Updated:January 25, 2022 6:12 pm

এবারের বাজেটে বড় চ্যালেঞ্জ দুঃস্থ অর্থনীতিকে দ্রুত চাঙ্গা করার চটজলদি সমাধান। সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তে মধ‌্যবিত্তকে আয়করের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোনও পথ দেখা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের কাছে নিঃসন্দেহে এটি একটি কঠিন কাজ। কীভাবে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের হাতে টাকার জোগান বাড়ানো যাবে, সেটা সুনিশ্চিত করাই বাজেটের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। লিখছেন সুতীর্থ চক্রবর্তী

 

Advertisement

কেন্দ্রীয় বাজেট কীরকম হতে পারে ও কীরকম হওয়া উচিত, তা নিয়ে সংবাদমাধ‌্যমে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। বিভিন্ন মহল থেকে নানারকম পরামর্শ আসতে শুরু করেছে। তবে এবারের বাজেট করা নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের কাছে একটি কঠিন কাজ। প্রথমত, প্রত‌্যাশামতো কোভিড অতিমারী এখনও যায়নি। বারবার যেভাবে কোভিডের ঢেউ ফিরে ফিরে আসছে, তাতে এখনও অর্থনীতির সামনে গভীর সংশয়। দ্বিতীয়ত, গত দু’-বছর অতিমারীর ফলে দেশের অর্থনীতি একেবারে বিধ্বস্ত। ব‌্যবসায়ীদের টাকাপয়সাও নিঃশেষ। এই মুহূর্তে অর্থনীতিকে চাঙ্গা না করা গেলে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির জন্ম নেবে। বেকারের সংখ‌্যা এতটাই বাড়বে যে, তা কল্পনার অতীত। তৃতীয়ত, সামনেই উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোট। উত্তরপ্রদেশে এবার বিজেপির জোর টক্কর। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাজেটে কিছু চমক তৈরি করার দায়বদ্ধতা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর থাকবেই।

Advertisement

অর্থনীতিকে দ্রুত চাঙ্গা করতে গেলে চটজলদি মধ‌্যবিত্তকে আয়করের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেওয়া ছাড়া ‘বিকল্প’ কোনও পথ দেখা যাচ্ছে না। সংবাদমাধ‌্যমে অর্থনীতিবিদদের যেসব সাক্ষাৎকার প্রকাশ হচ্ছে, তাতে সিংহভাগ অর্থনীতিবিদ-ই কর ছাড়ের পক্ষে রায় দিচ্ছেন। মধ‌্যবিত্তকে আয়করে সুবিধা দিলে তারা খুব দ্রুত বাজারে এসে বিভিন্নরকম পণে‌্যর চাহিদা বাড়াতে পারে। নিম্নবিত্ত ও মধ‌্যবিত্তের ভোগব‌্যয়ের প্রবণতা বেশি হয়। তাদের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ এলে মুহূর্তে সেটি পণে‌্যর বাজারে চলে আসে। অতিমারীর শুরু থেকেই এইভাবে চাহিদা সৃষ্টির পরামর্শ বহু অর্থনীতিবিদ সরকারকে দিয়ে আসছেন। বাজারে চাহিদা দ্রুত বাড়লে একমাত্র ধুঁকতে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষা পেতে পারে। কিন্তু সরকার এখনও পর্যন্ত চাহিদা বাড়ানোর বিভিন্ন দাবিগুলিতে বিশেষ কর্ণপাত করেনি। তবে, এবারের বাজেটে কর ছাড়ের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় থাকতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলে জোরদার জল্পনা চলছে।

[আরও পড়ুন: আবিদ, শাহ, হাবিবুররা ছিলেন নেতাজির বিশ্বস্ত, বিজেপি যেন না ভোলে]

আমাদের দেশে ‘সুপার রিচ’-দের আয়ের উপর কর প্রায় ৪৩ শতাংশ। সেই আয়ে ছাড় দেওয়ার পক্ষে কেউ সওয়াল করছে না। ‘সুপার রিচ’-দের আয়করের ছাড়ে সামগ্রিক অর্থনীতির কোনও লাভও নেই। কারণ, বড়লোকরা উদ্বৃত্ত অর্থ হাতে এলে তা সঞ্চয় করবে। প্রস্তাব উঠছে ‘সুপার রিচ’দের ছাড় দেওয়ার বদলে সরকার মধ‌্যবিত্তর আয়কর কাঠামোয় কিছু ছাড় দিক। বিভিন্ন সংবাদমাধ‌্যমে যা প্রকাশ পাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ বলছে, আয়করের নীচের স্ল‌্যাবটির ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো হতে পারে। কেউ কেউ বলছে, স্ট‌্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করা হতে পারে। কেউ কেউ বলছে, ৮০সি ও ৮০ডি ধারায় এখন দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত যে ছাড় মেলে, তার ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। অর্থাৎ, জীবনবিমা, পিএফ, পিপিএফ ইত‌্যাদি খাতে সঞ্চয় করে অারও ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে করের আওতার বাইরে রাখা যেতে পারে। চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে প্রভিডেন্ট ফান্ডে বছরে ৫ লক্ষ টাকা সঞ্চয় পর্যন্ত করের আওতার বাইরে আসতে পারে বলেও জল্পনা রয়েছে।

বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, গৃহঋণের সুদের উপর যে কর ছাড়ের ব‌্যবস্থা রয়েছে, তা ৮০সি ধারার বাইরে আনা হোক। গৃহঋণের সুদের উপর ছাড় ৮০সি ধারার মধে‌্য থাকায় অনেকেই তার সুযোগ নিতে পারে না। গৃহঋণের সুদের ক্ষেত্রেও বছরে ২ লক্ষ টাকার একটি ঊর্ধ্বসীমা রয়েছে। সেই ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর দাবিও উঠেছে। যেহেতু এখন সাধারণভাবে গৃহঋণের পরিমাণ অনেক বেশি, তাই এক্ষেত্রে কর ছাড়ের সুবিধা বেশি সংখ‌্যক মানুষকে দিতে গেলে সুদের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো দরকার। সুদের হার কমায় বহু মানুষ মেয়াদি আমানতে লগ্নির বদলে মিউচুয়াল ফান্ড, স্টক মার্কেটে টাকা খাটায়। এক্ষেত্রে দু’টি করের বোঝা রয়েছে। একটি হল ‘সিকিউরিটি ট্রানজ্যাকশন ট‌্যাক্স’ ও অন‌্যটি হল ‘লংটার্ম ক‌্যাপিটাল গেন ট‌্যাক্স’। যে কোনও একটি করের বোঝা প্রত‌্যাহারের দাবি রয়েছে।

আয়করের ক্ষেত্রে এসব দাবি ও জল্পনার কতটা বাস্তব হবে, তা হলফ করে বলা যায় না। অতিমারী শুরুর আগে নরেন্দ্র মোদির সরকার আচমকা কর্পোরেট করে প্রচুর ছাড় দিয়েছিল। ‘সুপার রিচ’দের যেখানে আয়ের উপর ৪৩ শতাংশ করের বোঝা, সেখানে মোদি সরকার কর্পোরেট কর ২২ শতাংশে নামিয়ে দিয়েছে। কর্পোরেট করের এই ছাড় গত দু’-বছরে ব‌্যবসা-বাণিজ‌্য বাড়িয়েছে সে-কথা বলা যাবে না। কিন্তু এই ছাড়ের ফলে সরকারের কোষাগারে যথেষ্ট ধাক্কা লেগেছে। প্রত‌্যক্ষ কর আদায় প্রচুর কমে গিয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণ করতে সরকার অতিমারীর মধে‌্য পেট্রোল ও ডিজেলে ক্রমাগত কর বাড়িয়েছে, যার জের এসে পড়েছে সাধারণ মানুষের উপর। ফলে অর্থনীতিবিদদের সুপারিশ মতো মধ‌্যবিত্তর আয়করে সরকার আদৌ কোনও সুবিধা দেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গত কয়েক মাসে সরকারের পরোক্ষ কর আদায় তথা জিএসটি সংগ্রহ বেশ বেড়েছে। সরকার এখন প্রতি মাসে গড়ে ১ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি টাকা জিএসটি আদায় করছে। দু’বছর আগেও জিএসটি আদায়ের এই গড় মাসে মাত্র ৯৮ হাজার কোটি টাকা ছিল। যেহেতু সরকারের জিএসটি থেকে আয় কিছুটা বেড়েছে, তাই অনেকে মনে করছে, এবার হয়তো আয়করে ছাড় দিয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করার একটা পদক্ষেপ সরকার করতে পারে।

পরিকাঠামোয় লগ্নি বাড়িয়ে, সরকারি খরচ বাড়িয়ে যারা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই দিচ্ছে, তাদের প্রস্তাব কতখানি কার্যকর হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে নানারকম অনুদান বাড়িয়ে দিয়ে সরকারি খরচ সাংঘাতিক জায়গায় পেঁৗছে দেওয়ার মতো ক্ষমতা সরকারের নেই। সেই ঝুঁকিও এই সরকার নিতে চায় না। অার পরিকাঠামোয় লগ্নির ক্ষেত্রে একটা সময়ের ব‌্যবধান সবসময় থাকে। সরকার একটা রাস্তা বা সেতুর কথা ঘোষণা করলে, তার জন‌্য জমি সংগ্রহ করতে বিশাল সময় যায়। জমি পাওয়ার পর সরকার দরপত্র দেয়। ঠিকাদার বাছাই হয়, ঠিকাদারি সংস্থাকে অর্থ জোগাড় করতে হয়– সবমিলিয়ে অনেকটা সময় যায়। ফলে, আজ বললে কাল ফল মেলে না। কিন্তু অতিমারীতে অর্থনীতির যা দশা, তাতে চটজলদি ফল মেলাটাই জরুরি। ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট ভাষণে যদি নির্মলা সীতারমন আয়করের স্ল‌্যাবের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেন বা স্ট‌্যান্ডার্ড ডিডাকশনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন, তাহলে দেখা যাবে সেদিনই বাজারে চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।

পাঁচ রাজ্যের ভোটের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে অবশ‌্যই কিছু পরিকাঠামো প্রকল্পের কথা বাজেটে রাখতে হবে। এসব প্রকল্প হোক বা না হোক, বিজেপি নেতারা সেগুলি ভোটের প্রচারে বলবেন। এর অবশ‌্যই একটা রাজনৈতিক মূল‌্য আছে। অনেকে ব‌্যাখ‌্যা দিয়ে থাকে, বাজেটে যখন প্রকল্পটি ঘোষণা হয়েছে, তখন একদিন না একদিন সেই প্রকল্পটি রূপায়িত হবে। জনগণকে একথা বোঝাতে পারলে ভোটে তার সুফল মেলে। সীতারমনকে ভোটের সুফলের দিকটিও মাথায় রাখতে হবে। মধ‌্যবিত্তর কর ছাড়ের সুবিধাও ভোটে ডিভিডেন্ড দেয়। ফলে এবারের বাজেটে আয়করের ক্ষেত্রে কিছু ছাড়ের কথা থাকার সম্ভাবনা অত‌্যন্ত উজ্জ্বল। তবে ভোটের স্বার্থের বিষয়টির চেয়েও বাজেটে গুরুত্ব পাক সামগ্রিক অর্থনীতি দ্রুত চাঙ্গা করার বিষয়টি। কীভাবে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের হাতে টাকার জোগান বাড়ানো যাবে, সেটা সুনিশ্চিত করাই বাজেটের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।

[আরও পড়ুন: ঋষি সুনাক তৈরি, ব্রিটেন কি প্রস্তুত]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ