৬ চৈত্র  ১৪২৯  মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

83 Movie: টাইমমেশিনে ৩৮ বছর পিছিয়ে লর্ডসে বসেছিলেন সৃজিত-অরিন্দম-কৌশিকরা

Published by: Krishanu Mazumder |    Posted: December 23, 2021 1:00 pm|    Updated: December 23, 2021 4:34 pm

'83 Movie mesmerized everyone and Srijit Mukherji, Arindam Sil and Kaushik Ganguly praised highly

দুলাল দে: মিতালি রাজ টু কপিল দেব। লর্ডস টু লর্ডস। সৃজিত মুখোপাধ্যায় টু কবীর খান।
কিছুদিন আগেই মিতালী রাজের বায়োপিক ‘সাবাশ মিঠু’ লর্ডসে শ্যুট করে ফিরলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherji)। লর্ডসের সেই ঐতিহাসিক ব্যালকনি, ড্রেসিংরুম, করিডর সব যেন যেন ফিরে আসছিল ‘৮৩’–র (83 Movie) মধ্য দিয়ে। কপিল দেব না রণবীর সিং (Ranveer Singh)? রিল আর রিয়েল যে মিলে মিশে একাকার। মেক আপে না হয় মেলানো গেল! কিন্তু সেই নটরাজ ভঙ্গী, কিংবা ইয়র্কার, আউটসুইং ডেলিভারি? টেনে টেনে ইংরাজি বলা। শ্রীকান্তের নাক কোঁচকানো..। এ সব দেখে মনে হচ্ছে, সাউথ সিটির আইনক্সে ‘৮৩’–র প্রিমিয়ারে, না টাইম মেশিনে ৩৮ বছর পিছিয়ে গিয়ে সবাই মিলে বসে আছি লর্ডসের মাঠে?

[আরও পড়ুন: ‘বিরাটকে সরানো নিয়ে নির্বাচকদের পরিবর্তে কেন সৌরভ মুখ খুলল?’ প্রশ্ন বেঙ্গসরকরের]

ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমের নেভি ব্লু আপার। পিছনে বড় করে লেখা সৃজিত। যিনি অকপটে বলতে পারেন, ‘অটোগ্রাফ হিট না হলে হয়তো ক্রিকেট রিপোর্টিংয়ে যেতাম।’ তার উপরে কিছুদিন আগে শেষ করলেন ‘সাবাশ মিঠু’। তিনি যে বুধবার রাতে সাউথ সিটির আইনক্সে ‘৮৩’–র মহাকাব্য প্রত্যক্ষ করতে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমের জ্যাকেট পড়ে ‘গ্যালারিতে’ থুরি প্রেক্ষাগৃহে ঢুকবেন, তা বলাই বাহুল্য। আর মুখোমুখি হতেই সৃজিত বললেন, “সাবাশ মিঠুর কস্টিউম করার সময়ে আমার জন্যও একটা করানো হয়। আর দেশের খেলা দেখতে আমরা তো জার্সি পরেই মাঠে যাই। আজ তো আইনক্সে নয়। লর্ডসের মাঠে ঢুকছি, ‘৮৩’-র বিশ্বকাপ জয় দেখতে। তাই ভারতীয় দলের জ্যাকেটটা পরে নিয়েছি।”

‘৮৩’-র প্রিমিয়ারে ঋতব্রতর সঙ্গে সৃজিত।

২ ঘন্টা ৪২ মিনিটের ‘৮৩’ সবে শেষ হয়েছে। চোখ মুছতে মুছতে হলের বাইরে এলেন ‘গোলন্দাজের’ ‘কৃষ্ণকমলিনী’ ইশা সাহা। ‘৮৩’ কি তাহলে কোনও বিয়োগান্তক সিনেমার প্লট? “না, না। এ আবেগের অশ্রু বলতে পারো। এতদিন বাবার মুখে শুনেছি। আজ দেশের গর্ব করার মতো এক টুকরো ইতিহাস প্রত্যক্ষ করলাম। আমার তো শুরুর দশ মিনিটের পর থেকেই চোখে জল চলে এসেছিল।”

তাহলে কি শুধুই ইতিহাসের দলিলকে সামনে আনা? ২ ঘন্টা ৪২ মিনিট ধরে শুধু খেলার উপর একটা গোটা সিনেমা দাঁড় করানোর সাহস আগে আর কোন পরিচালক দেখিয়েছেন? ‘ধোনি’ দেখলে, তা একজন সামান্য টিকিট কালেক্টরের বিশ্বজয় করার আবেগঘন আর লড়াইয়ের কঠিন যাত্রাপথ। মিলখা সিং, দেখলে দেশভাগের চমর বাস্তব থেকে ‘উড়ন্ত শিখ’ হয়ে ওঠার অদম্য, টানটান লড়াই। কিন্তু ‘৮৩’–তে কোনও ব্যক্তিগত স্টোরি বিল্ড আপ নেই। যা আছে শুধুই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ থেকে শুরু হয়ে লর্ডসের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতা পর্যন্ত।

‘৮৩’ নিয়ে উচ্ছ্বসিত অরিন্দম শীল।

সৃজিতের যুক্তি হল, “আসলে ‘৮৩’–র বিশ্বকাপ জয়টাই এত আবেগঘন মুহূর্ত যে আলাদা করে আর কোনও স্টোরি বিল্ড আপ করতে হয় না। পরিচালক কবীর খানের কৃতিত্ব হল, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিনেমাটাকে টান টান ধরে রাখা। ইন্ডিয়ান স্পোর্টস ফিল্মের অন্যতম মাইলফলক হয়ে থাকবে।”

[আরও পড়ুন: 83 Movie Review: রণবীরের ডেভিলদের স্টেডিয়ামে বসে রুদ্ধশ্বাস দর্শন]

বিখ্যাত পরিচালক আইজেনস্টাইন ‘ইন্টেলেকচুয়াল মন্তাজ’ নিয়ে দারুণ সব কাজ করেছেন। যা বিশ্বের বহু পরিচালক ফলো করেন। তাঁর ‘স্ট্রাইক’ ছবিটি আলাদা করে পরিচিত শুধু ‘মন্তাজ অব অ্যাট্রাকশনস’ এর ব্যবহারের জন্য। ‘৮৩’–তে কবীর খানও তো সেরকমই। বারবার তৈরি করেছেন ‘ওভারটোনাল মন্তাজ।’ ‘৮৩’–র অরিজিনাল শটের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বারবার তৈরি করেছেন বিশেষ শটের মন্তাজ। অরিজিনাল দৃশ্যায়নের প্রতিটি শট, ফ্রেম ধরে ধরে ‘৮৩’–তে রূপান্তর করা হয়েছে। আর তার সঙ্গে রয়েছে আলো, ক্যমেরা অ্যাঙ্গেল ও বিন্যাসের সঙ্গতি। সিনেমার পর্দায় তাই সেই ঘটনা ফুটে উঠেছে অনায়াসে।

সৃজিত বললেন, “সিনেমার মাঝে এই অরিজিনাল শটের ব্যবহার আমি ফেলুদাকে নিয়ে ওয়েব সিরিজে ব্যবহার করেছি। সাবাশ মিঠুতেও আছে। এই স্টাইলটা নতুন নয়। কিন্তু ইন্ডিয়ান স্পোর্টসের সবচেয়ে আন্ডারডগ স্টোরিটা যেভাবে কবীর বলেছে, সেটা সত্যিই অসামান্য।”

যদি শুধুই খেলা নিয়ে কোনও সিনেমার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়, তাহলে তুলনাটা চলে আসবে লগানের সঙ্গে। ৮৩র প্রিমিয়ার দেখে বের হওয়ার সময় পরিচালক অরিন্দম শীল বললেন, “লগানকে ৩ গোল মেরেছে ‘৮৩’। শুধু খেলা দেখিয়ে দর্শককে ২ ঘন্টা ৪২ মিনিট বসিয়ে রাখা খুব সহজ কথা না। রণবীর যে অসাধারণ হবে, এটা জানাই ছিল। কিন্তু পুরো ফিল্মটা যদি ধরি, প্রতিটা ফ্রেম থেকে অভিনয়। সঙ্গে গল্পটা বলার স্টাইল, জাস্ট অসাধারণ।” 

‘৮৩’-র প্রিমিয়ার দেখে আবেগপ্রবণ ইশা সাহা।

চূর্নী গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে এসেছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। বলছিলেন, “’৮৩’ সকল ভারতীয়র দেখা আবশ্যিক। অসাধারণ বললেও কম বলা হয়।” প্রসেনজিৎ আর দেবের নতুন ছবি ‘কাছের মানুষের’ পরিচালক পথিকৃৎ বসু ছবি দেখতে দেখতেই বলছিলেন, “আমাদের মতো জুনিয়র পরিচালকদের শেখার জন্য ‘৮৩’ হচ্ছে আদর্শ ফিল্ম।” 

 প্রিমিয়ারে উপস্থিত ছিলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী।

সৃজিত উল্লেখ করলেন এই সিনেমার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। “’৮৩’–র বাজেট যে অন্য ছবির তুলনায় অনেকটা বেশি, সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু গ্যালারির দর্শকদের উপর যেভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, সেটা নতুন দিক খুলে দিয়েছে। সাধারণত এরকম স্পোর্টস ফিল্মে জুনিয়র আর্টিস্ট দিয়ে গ্যালারি ভরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কবীর লর্ডসের গ্যালারির যা চিত্র তুলে ধরেছে, তাতে মনে হল, দর্শকদের রিঅ্যাকশন নেওয়ার জন্য আলাদা করে ভাবনা চিন্তা করা হয়েছে। আর রণবীর সিংয়ের কথা যত বলব, বলেই যেতে হবে।” কিন্তু ম্যানেজার মান সিং, পঙ্কজ ত্রিপাঠি? যিনি সৃজিতের কিছুদিন আগে শ্যুটিং শেষ হওয়া ‘শেরদিলে’–ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন?

পঙ্কজ ত্রিপাঠির নাম উঠতেই উচ্ছ্বসিত সৃজিত। ‘‘শৈশবের শিশুপাঠ্যে, মান সিং নামে আলাদা একটা চ্যাপ্টার ঢুকে গেল। শেরদিলের শ্যুটিংয়ের সময়েই ‘৮৩’–র ট্রেলার প্রকাশিত হয়। সেই সময়ই পঙ্কজ ত্রিপাঠি বলছিল, একটা ডায়ালগ বলতে গিয়ে আবেগে ওর কন্ঠরোধ হয়ে গিয়েছিল। কাপ্তান, দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু সম্মান পাইনি।”

অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে সানা, অভিনেতা রাজদীপ, জন, ঋতব্রত সবাই যেন চোখে মুখে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আইনক্স থেকে বার হচ্ছিলেন।

আর একটা দিন। তারপর সবার জন্য প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় ক্রিকেটের সেই অমর কাহিনি–৮৩। 

[আরও পড়ুন: অশ্বিনের পর এবার দেবাং গান্ধী, শাস্ত্রী-রাজ নিয়ে বিস্ফোরক প্রাক্তন ক্রিকেটার]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে