Advertisement
Advertisement
বার্লিনালে

নিষিদ্ধ পরিচালকের ছবি পুরস্কৃত বার্লিনালেতে, গোল্ডেন বিয়ার পেল ‘দেয়ার ইজ নো এভিল’

সেরা অভিনেতা হয়েছেন ইতালির এলিও জেরমানও।

Banned Iranian director wins Berlin Golden Bear for There Is No Evil
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:March 2, 2020 6:37 pm
  • Updated:March 2, 2020 6:37 pm

নির্মল ধর, বার্লিন: যা ভাবা হয়েছিল, যা আন্দাজ করা গিয়েছিল, সেটাই সত্যি হল। ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় ৭০তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে মোহাম্মদ রৌসুলফের ইরানি ছবি ‘দেয়ার ইজ নো এভিল’ জিতে নিল উৎসবের সেরা ছবির পুরস্কার ‘সোনার ভল্লুক’।

তিন বছর আগে একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন ইরানেরই আর এক পরিচালক জাফর পানাহি তাঁর ‘ট্যাক্সি’ ছবির জন‌্য‌। তিনি নিজে তখন দেশে বন্দি, তাঁর ছবি জিতে নিয়েছিল সোনার ভল্লুক। তারও এক বছর আগে ওই জাফর পানাহিরই ‘পর্দা’ জিতেছিল সেরা চিত্রনাট‌্যকারের পুরস্কার। তখনও তিনি বার্লিনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। ইরান সরকার তাঁকে নজরবন্দি করে রেখেছিল।

Advertisement

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল শনিবার সন্ধ্যায়। ২০১৭ সালে ইরান সরকার পরিচালক রাসুলফের ছবি বানানোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে এই ছবিটি তাঁকে কার্যত গোপনেই বানানো হয়েছিল। জুরি প্রেসিডেন্ট অভিনেতা জেরেমি আয়রন নিজেই সেরা ছবির নাম ঘোষণার সময় বলে দিলেন, “সরকার ও রাজনীতি যখন কোনও শিল্পীর সৃজনস্বাধীনতায় বাধা দেয় বা হস্তক্ষেপ করে, তখন একজন মানবিক শিল্পীর যে কাজটি করা উচিত, সেটাই করেছে ইরানের ছবি।” সুতরাং তিনি ও তাঁর অন্য পাঁচজন সহ-সদস্য একমত হয়েই ‘দেয়ার ইজ নো এভিল’কে উৎসবের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিলেন।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: হলিউডে পাড়ি দিচ্ছেন রণদীপ হুডা, ছবির নাম জানেন? ]

রৌসুলাফ আসতে না পারলেও, ছবির প্রধান ছ’-সাতজন অভিনেতা, অন্যতম প্রযোজক-সহ প্রায় দশজন উপস্থিত ছিলেন প্রেক্ষাগৃহে। তাঁরা সবাই আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে উঠে দাঁড়িয়ে হলসুদ্ধু দর্শকের হাততালি কুড়িয়েছেন। সোনার ভল্লুকটি নিতে মঞ্চে উঠেছিলেন অভিনেতা বারান রৌসুলফ, এহসান মিরহোসেইনি, সগেহসৌরিয়ান। পুরস্কারটি হাতে নিয়ে অভিনেতা বললেন, “কাল ছবির প্রদর্শনী শুরু হওয়ার সময় রৌসুলফের চেয়ারটি খালি ছিল। ছবি শেষ হওয়ার পর উপস্থিত দর্শকের তুমুল হর্ষধ্বনি জানিয়ে দিয়েছিল হলের সব চেয়ারেই যেন রৌসুলফ বসে আছেন। আজ এই সোনার ভল্লুক হাতে নিয়েও মনে হচ্ছে, তিনি আজও এই প্রেক্ষাগৃহে আপনাদের ও আমাদের সঙ্গেই আছেন। আমরা ইরানের শিল্পীরা মানুষকে ভালবাসার কথা বলি, ঘৃণার কথা কখনও বলি না। কাল যখন এই পুরস্কারটা মোহাম্মদ রৌসুলফের হাতে দেব, তখন তিনিও একই কথা বলবেন।” এই কথা শোনার পর আপ্লুত হলভর্তি দর্শক শুধু হাততালি দিয়েই গেলেন। আবারও ইরানের ছবি প্রমাণ করে দিল, সরকারি দমন-পীড়নের মধ্যেও এখনও সিনেমা বিশ্বের মাথা উঁচু করে রাখছে তারাই।

উৎসবের সেরা পরিচালক হয়েছেন কোরিয়ার হং সাং সু তাঁর ‘দ‌্য ওমান হু র‌্যান’ ছবির জন্য। ‘প্যারাসাইট’ ছবির জন্য বং জুং হু অস্কার জেতার পরই হং সাংয়ের এই পুরস্কার কোরীয় ছবির মাথায় নতুন এক পালক। তবে গ্র্যান্ড জুরি পুরস্কার জিতে আমেরিকার এলিজা হিটমান অনেককেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। খুবই সাধারণ একটি ঘটনার সরল সাদাসিধে চিত্রায়ন যে দর্শকের হৃদয় জয় করতে পারে, সেটা এই ছবি না দেখলে বিশ্বাস হয় না। বিষয়ের সারল্যে ইরানি ছবির সমগোত্রের ছবি এটি।

[ আরও পড়ুন: অ্যাকশনে ভরপুর ‘সূর্যবংশী’র ট্রেলার, সন্ত্রাস দমনে আসরে সিংঘম-সিম্বাও ]

এবার বার্লিনে সেরা অভিনেতা হয়েছেন ইতালির এলিও জেরমানও (হিডেন অ‌্যাওয়ে) আর সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার তুলে নিলেন জার্মানির পওলা বিয়ের (ক্রিস্টিয়ান পেটজালদের ‘উনদিনে’র জন্য)। এবারের উৎসবে নতুন সংযোজন ছিল ‘এনকাউন্টার’ নামের বিভাগটি। এখানে সেরা পরিচালক হলেন রোমানিয়ার ক্রিস্টি পুই তাঁর ‘মালমকর্গ’ ছবির জন্য। আর সেরা ছবির জন্য ভল্লুক ট্রফি জিতল ‘ডি ওয়ার্কস অ্যান্ড ডেজ’ নামের সুইডিশ ছবিটি। কম্বোডিয়ার পরিচিত পরিচালক রিধি পানাহর ‘ইরাডিয়েটেড’ জিতে নিল ডকুমেন্টারি বিভাগের সেরা ছবির পুরস্কার। যথা নিয়মে ভারতীয় ছবির পুরস্কারের ঝুলি শূন্য। বহু বছর হল বার্লিন থেকে বড় মাপের কোনও পুরস্কার নেই ভারতের হাতে। শুধু বার্লিন কেন, কান, ভেনিস, টরন্টো, বুসান, কালভিভারি- কোনও উৎসব থেকে শুকনো পাতা বা ডালপালাও নেই। আছে শুধু স্বঘোষিত আত্মম্ভরিতার ফাঁকা ঢক্কানিনাদ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ