শম্পালী মৌলিক: লকডাউনের ৫০দিন হয়ে গেল। করোনার প্রকোপ মোটেই কমেনি। অদ্ভুত একটা বিষন্নতা গ্রাস করেছে আমাদের সকলকে। চতুর্থ দফা লকডাউনও হবে নিশ্চিত। বিনোদন জগতেও বহু মানুষের কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে ক্রমশ। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষের শিল্পসৃষ্টি থেমে নেই। এই সময়েই লকডাউন শর্ট ফিল্মের তালিকায় যুক্ত হল প্রথম ইন্দো-বাংলাদেশ লকডাউন ছোট ছবি ‘দূরে থাকা কাছের মানুষ’।
অত্যন্ত মিষ্টি একটি প্রেমের গল্প। প্রধান দু’টি চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলা (বন্যা) ও বিক্রম চট্টোপাধ্য়ায় (দীপ্ত)। শর্টফিল্মের পরিচালনায় শাহরিয়ার পলক। গল্প লিখেছেন অভ্র চক্রবর্তী। ছবিটির প্রযোজনায় টিভিওয়ালা মিডিয়া (কলকাতা) ও প্রেক্ষাগৃহ ভিস্যুয়াল ফ্যাক্টরি প্রোডাকশন (ঢাকা)। এমন করোনা পরিস্থিতিতে ছবিটির সঙ্গে থাকা প্রত্যেকে পারিশ্রমিক ছাড়া যুক্ত হয়েছেন এই সংগ্রামে। এবং শর্টফিল্ম থেকে সংগ্রহীত অর্থ ঢাকা সিনে-শ্রমিক ও কলকাতা সিনেমা-শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলে অনুদান দেওয়া হবে বলে জানা গেল।
[ আরও পড়ুন: ‘রোগকে ঘেন্না করুন, রোগীদের নয়’, করোনা জয়ীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন অমিতাভ ]
‘দূরে থাকা কাছের মানুষ’ ভালবাসায় ঘেরা একটি চমৎকার ছোট ছবি। একেবারে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে গল্প দানা বেঁধেছে। ছবিটি সাদা-কালো। কিন্তু ভালবাসার রঙে রঙিন। খুব সুন্দর অভিনয় করেছেন মিথিলা এবং বিক্রম। তাঁরা যে যাঁর দেশে ঘরে বসে নিজেরাই শুট করেছেন। কিন্তু এত সুন্দর এডিটিং যে কোথাও দৃশ্যগুলোর সেলাইয়ের দাগ ধরা যায় না। মিউজিকও বেশ ভাল। গল্পটা কেমন? দীপ্ত লন্ডনে থাকে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করে। এখন কলকাতায় এসেছে। আইসোলেশনে রয়েছে। অন্যদিকে বন্যা থাকে বাংলাদেশে। যার পড়াশোনা শান্তিনিকেতনে। সে পেশায় সাংবাদিক। গায়িকা হিসেবেও যথেষ্ট সুনাম তার। ১৪ বছর পর স্কাইপে যোগাযোগ হচ্ছে তাদের। খুলে যাচ্ছে একটার পর একটা স্মৃতির পাতা। ভারী সুন্দর লাগে দীপ্ত আর বন্যার কথোপকথন। মিথিলার স্ক্রিন প্রেজেন্স এবং কণ্ঠস্বরে একটা মাধুর্য আছে। সেটা ছোট ছবিটির অন্যতম আকর্ষণ। ভাল লাগে বিক্রমের সহজ সুন্দর অভিনয়। তারপর কী হয়, তার জন্য ছবিটা দেখতে হবে।
[ আরও পড়ুন: এনগেজ রানা দাগ্গুবতি, প্রেমিকার ছবি প্রকাশ করে ঘোষণা অভিনেতার ]
বিক্রম জানিয়েছেন, “আমার কাছে এটা একটা সংবেদনশীল গল্প। দু’টি ভিন্ন দেশে দীপ্ত ও বন্যা। দীর্ঘদিন পর পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছে। প্রেমের সুবাস ছড়িয়ে আছে স্ক্রিপ্টজুড়ে। খুব আলাদা রকমের অভিজ্ঞতা হল। আমার বন্ধু অভিনব এবং আমি মিলে শুটিং করেছি। ক্যামেরা, আর্ট, মেক-আপ নিজেরই সামলেছি। সমস্ত লকডাউন বিধি বজায় রেখে বাড়িতে বসেই হয়েছে শুটিং।” মিথিলা বলেছেন, “অমিতদা আমাকে বলেছিল যদি এই সময় কিছু করা যায়। ভেবেছিলাম এই COVID-19 আক্রান্ত সময় আর লকডাউনের দিনে সিনেমার টেকনিশিয়ানদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা খুব ভাল উদ্যোগ হবে। উভয় বাংলায় লকডাউনের কারণে অনেক টেকনিশিয়ান কাজ হারিয়েছেন। এই কঠিন সময়ে তাঁদের সমর্থন করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে এটা একটা প্রয়াস। খুব অন্যরকম অভিজ্ঞতা। কারণ মোবাইল ক্যামেরায় হোম বেসড শুটিং হয়েছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম খুব কঠিন হবে। অবশেষে আমি উপভোগ করতে শুরু করি। এবার সকলে ছবিটি পছন্দ করলেই আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে। আমার ভাই মাইমুন আমাকে ক্যামেরায় সাহায্য করেছে। পরিচালক স্টোরি বোর্ড এবং প্রয়োজনীয় শটগুলোর ছবি এঁকে আমাকে সাহায্য করেছেন। সব মিলিয়ে শুটিং নিয়ে আমরা খুব খুশি। লকডাউন পিরিয়ড আমার জন্য বেশ ব্যস্ততার। কারণ আমি বাড়ি থেকে পুরো সময় কাজ করছি। মানে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। আমার মেয়ের দেখাশোনাও করতে হচ্ছে। নিয়মিত বাড়ির কাজ এবং শুটিং, এই দু’টো কঠিন ছিল। তবে কাজের আনন্দও ছিল। আশা করি সকলের ভালবাসা পাবে ‘দূরে থাকা কাছের মানুষ’।”