BREAKING NEWS

১৪ চৈত্র  ১৪২৯  বুধবার ২৯ মার্চ ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

নটীর জীবনের সুন্দর কোলাজ ‘বিনোদিনী অপেরা’, মন ছুঁয়ে যায় সুদীপ্তার অভিনয়

Published by: Suparna Majumder |    Posted: March 13, 2023 4:29 pm|    Updated: March 13, 2023 4:47 pm

Review of Sudipta Chakraborty starrer Binodini Opera | Sangbad Pratidin

নির্মল ধর: নটী বিনোদিনীর পরিচয় বাংলা নাটকের দর্শকের কাছে নতুন করে দেওয়ার নয়। সেই বিশ শতকের শুরুতে যখন গিরিশচন্দ্র ঘোষ বাংলা নাট্য জগৎকে রীতিমত শাসন করছেন, তখনই আবির্ভাব নটি বিনোদিনীর। বারবণিতার পরিবেশ থেকে একেবারে ছোট বয়েসে বাংলার রঙ্গমঞ্চের জগতে আগমন। নাটক আর অভিনয়কে ভালবেসে নিজের জীবনটাই প্রকৃত অর্থে বিকিয়ে দিয়েছিলেন। বিনোদিনীর এই জীবন কাহিনি নিয়েই তৈরি ‘বিনোদিনী অপেরা’ (Binodini Opera)। নাম ভূমিকায় সুদীপ্তা চক্রবর্তী (Sudipta Chakraborty)।

Binodini-Opera

বাবুদের হাত ঘুরে ঘুরে নাটক করতে চেয়েছিলেন বিনোদিনী। অভিনয়কে পেশা নয়, পুজো হিসেবে ভেবেছিলেন। এমনকী নিজের একটা নাট্য প্রযোজনার দল হবে এমন অলীক স্বপ্নও  দেখেছিলেন! কিন্তু অন্ত্যজ শ্রেণির মেয়ের নামে থ্যাটার হলে সেখানে কলকেতা শহরের বাবুরা আসবেন কিনা সেই সন্দেহের আশঙ্কায় “বি” থ্যাটার হলই না! হল স্টার। কুমার বাহাদুর থেকে গুর্মুখ রায় হয়ে হাত ফেরতা প্রতাপ জহুরির বাঁধা মেয়েছেলে হতেও বিনোদিনীর দ্বিধা বোধ করেননি। শুধু চেয়েছিলেন নিজের ভালবাসার অভিনয়টা নিজের মতো করে যেতে। কিন্তু পারলেন না। তখনকার বাবু সমাজ এক পতিতা নারীর স্বপ্নকে নিজেদের পৌরুষ আর আত্মম্ভরিতার জাঁতাকলে পিষে মেরেছিল।

বিনোদিনীর জীবনের এই বিষাদঘন মর্মস্পর্শী কাহিনি আমরা অনেকেই জানি। তবে অবন্তী চক্রবর্তী ও শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘বিনোদিনী অপেরা’ কোনও জীবনী নয়, তাতে তাঁর জীবনের কিছু ঘটনা, চরিত্র আর নাট্যমুহূর্ত তাতে তুলে ধরা হয়েছে। কিছুটা কোলাজের কায়দায় অবন্তী তাঁর নির্দেশনায় একধরনের জ্যামিতিক প্যাটার্নে কোরিওগ্রাফি করেছেন অনেকগুলি দৃশ্য। শুরুতেই তিনি মঞ্চে নাটকের সব চরিত্রগুলোকে উপস্থিত করে এবং “কার ভাবে গৌড় বেশে জুড়ালে যে প্রাণ / প্রেম সাগরে যে উঠল তুফান…” গানটির সঙ্গে নাচের কম্পোজিশন ও কোরিওগ্রাফি সুন্দর প্রিল্যুডের কাজ করল।

[আরও পড়ুন: ভাইরাল জ্বরে কাবু রুক্মিণী-সহ ‘নটী বিনোদিনী’র গোটা টিম! আপাতত বন্ধ ছবির শুটিং]

নাটকের শেষ দৃশ্যেও দেখলাম ‘চৈতন্যলীলা’ নাটকে দর্শক শ্রীরামকৃষ্ণের সামনে বিনোদিনী এলেন শেষবারের মত। অথচ, দুই নাট্যকার বিনোদিনীর জীবনের উল্লেখযোগ্য কোনও ঘটনা, ব্যক্তিকে সরিয়ে রাখেননি। তাঁর মাত্র ২৪/২৫ বছরের অভিনয় জীবনে মাষ্টারমশাই গিরিশ ঘোষ (অভিজিৎ) আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে তো ছিলেনই, ছিলেন পাণিপ্রার্থী কুমার বাহাদুর (পদ্মনাভ), গুর্মুখ রায়(সুজন), ব্যবসায়ী প্রতাপ জহুরি – সব্বাইকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে নাটকটি সাজানো এবং তারই মধ্যে প্রাধান্য পেয়েছে বিনোদিনীর ঐকান্তিক গভীর নাট্য প্রেম, অভিনয়ের প্রতি তাঁর ঈশ্বর আরাধনার মতো আন্তরিকতা।

Binodini-Opera-1

বাংলা নাটকের প্রতি সেই প্রথম কোনও মহিলা শিল্পীর মানসিক আকুতি পারস্পরিক সম্পর্কের কালিমায় কলঙ্কিত হয়নি! শরীরী সম্পর্কের বাইরে দাঁড়িয়ে বিনোদিনী বাংলার মঞ্চে এক স্বার্থহীন বলির নজির রেখেছেন। সেটা খুবই জোরালো ভাবে প্রকাশ পায় এই প্রযোজনায়। এবং সত্যি বলতে সেই ‘জোরালো’ উপস্থিতি বাঙ্ময় করে তোলেন শিল্পী সুদীপ্তা চক্রবর্তী! হ্যাঁ, এখন সিনেমার পর্দায় আরও দু’জন শিল্পী আসছেন শোনা যাচ্ছে, কিন্তু মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে দাপট এবং ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বিনোদিনীকে সুদীপ্তা ‘জীবন’ দান করলেন সেটা একটা বেঞ্চমার্ক হয়ে থাকবে বলেই এই প্রতিবেদকের বিশ্বাস।

Binodini-Opera-2

সুদীপ্তার কান্না চাপা হাসি বা হাসি চাপা কান্নার দৃশ্য দু’টো এই নাটকের সেরা মুহূর্ত। আবার এটাও অস্বীকার করা যায় না যে সুদীপ্তাকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন সুজন মুখোপাধ্যায়, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত, অভিজিৎ গুহ, প্রকাশ ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ দাস, ইন্দুদীপা সাহার মতো অভিনেতারা। সঞ্চয়ন ঘোষের সেট পরিকল্পনা অবশ্যই দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত। মাঝখানে রস্ট্রাম রেখে কিছু রঙিন মোটা দড়ির ব্যবহার নারীদের পায়ে শুধু নয়, জীবনটাকে বেঁধে রাখার ইঙ্গিত দেয়। শুভদীপ গুহর সময়োচিত আবহর সঙ্গে রাজ্যশ্রী ঘোষের সুরে পুরনো গানের ব্যবহার নাটকের আর একটি সম্পদ। তবে মাঝে মাঝে কিছু দৃশ্যের কোরিওগ্রাফি, গানের দৃশ্যের সংযোজন সম্পাদনা করতে পারলে সিনামন ও আঙ্গিকের প্রযোজনাটি আরও নির্মেদ ও নিটোল হতে পারে। অবন্তী, একটু ভেবে দেখবেন।

[আরও পড়ুন: ‘মাতৃভূমির জন্য’ অস্কারের মঞ্চে বার্তা, মন জিতলেন ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’-এর পরিচালক]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে