Advertisement
Advertisement
Satyajit Ray

‘পথের পাঁচালী’র গ্রামীণ জীবন থেকে শহুরে ‘মহানগর’, সত্যজিতের ছবিতে বাঙালিয়ানা

সত্যজিৎ রায়ই প্রকৃত বাঙালিয়ানার শেষ বাঙালি।

Satyajit Ray and Bengali Culture on his Movie| Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:May 2, 2023 9:47 am
  • Updated:May 2, 2023 9:48 am

নির্মল ধর: বাঙালিয়ানা বস্তুটি যে কী, তা নিয়ে কূটতর্কে যাচ্ছি না। আমরা সবাই জানি জীবন ধারায় বাঙালির নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। পারিবারিক বাঁধনেও রয়েছে একান্নবর্তীতার এক মানসিক বাঁধন, যা আজকের সময়ে হারিয়ে যেতে চলেছে প্রায়। সত্যজিতের প্রথম ছবি “পথের পাঁচালী”ই প্রথম বাংলার গ্রাম জীবনের দারিদ্র্য শুধু নয়,বাস্তব জীবনের এক নিপুণ চিত্র তুলে ধরেছিলেন। যা এক কথায় গ্রাম্য বাঙালির বাঙালিয়ানাকেই মর্যাদা দিয়েছিল। গরীব ব্রাহ্মণ পুরোহিতের যাপিত জীবনের সঙ্গে তিনি মিশিয়ে দিয়েছিলেন গরিব গ্রামীণ মানুষদের জীবন। তুলসী চক্রবর্তীর মুদি দোকান কাম পাঠশালার পরিবেশ, সর্বজয়ার সঙ্গে বৃদ্ধা ইন্দির ঠাকুরণ তিক্ত কষায় সম্পর্ক, ভাই বোন অপু দুর্গার পারস্পরিক বন্ধনের জায়গাগুলো নিখাদ তৎকালীন বাঙালিয়ানার এক নিবিড় ছবি তুলে আনে। সত্যজিৎ কিন্তু আজন্ম ছিল…

তরুণী বৌমা দয়াময়ীকে দেবী দুর্গা জ্ঞানে শ্বশুরের ভজনা করার যে ঘটনা তাকে কোনও ভাবেই গ্লোরিফাই না করেও সত্যজিৎ দয়াময়ীকে নিরুদ্দেশে পাঠিয়েছেন। বাঙালির অন্ধ সংস্কারকে তিনি জয়ী হতে দেননি। আবার একই সত্যজিৎ যখন কলকাতা শহরের প্রেক্ষিতে বানান ”মহানগর”, যেখানে এক বাঙালি মধ্যবিত্তের সংসারে প্রয়োজনের তাগিদেই স্ত্রীকে বাইরে চাকরি নিতে হয়, সেখানেও বাঙালি চরিত্রের প্রতিবাদী চেতনারই তিনি জয় দেখান। অফিসের বড়ো কর্তার বেআইনি ও কর্মচারী বিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আরতি চরিত্রটি চাকরিতে ইস্তফা দেয়, যদিও তখন তাঁর স্বামীর চাকরিটিও নেই এবং তাঁর কলকাতা শহর কেন্দ্রিক তিনটি ছবি প্রতিদ্বন্দ্বী, জনঅরণ্য, এবং সীমাবদ্ধ তেও তিনি বাঙালির মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সদর্থক দিকটাই তুলে এনেছেন। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র সিদ্ধার্থ, ‘জন অরণ্য’র সোমনাথ বা ‘সীমাবদ্ধ’র শ্যামলেন্দু নাগরিক জীবনের ভালোমন্দের সঙ্গে জড়িত থেকেও তাঁরা বাঙালির নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ থেকে সরে যায়নি।

Advertisement

satyajit ray's movie

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘চুরি’ হয়েছিল ‘অবতারে’র চিত্রনাট্য, স্পিলবার্গের ‘ইটি’ নিয়ে অভিযোগ ছিল খোদ সত্যজিতের]

প্রকৃতি ও গানের প্রতি  শ্যামালেন্দু নিজের পেশায় প্রমোশনের জন্য তঞ্চকতার সাহায্য নিলে, তরুণী শ্যালিকা নীরব প্রতিবাদে জামাইবাবুর দেওয়া ঘড়িটি ফেরৎ দেয়। এখানেই ছবিটি উত্তীর্ণ হয়ে যায় বাঙালি জীবনের এক বাঙালিয়ানায়! এবং তাঁর সর্বশেষ ছবি “আগন্তুক” তো আমার মতে সত্যজিতের জীবনের সেরা সিনেমা না হলেও,বক্তব্য, বিষয়ের দিক থেকে সেরা ছবি। তিনি নিজেও বলেছেন, “আমার আর নতুন কিছু বলার নেই!”এই ছবির বয়স্ক প্রোটাগনিস্ট মনমোহন বাবু চিরন্তন বাঙালির এক প্রতিনিধি যেন। বাঙালির শিক্ষা, মানসিকতা, প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি, উদারতা, সব গুণগুলো দিয়ে সত্যজিৎ নিজের কলমে তৈরি করেছিলেন মনমোহনকে।

মনমোহনের মুখের সংলাপ তাঁর নিজেরই বক্তব্য। বহুবছর বিদেশ ঘোরার ফলে তাঁর চিন্তায় এসেছে এক আন্তর্জাতিক চৈতন্যবোধ, খোলামেলা দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনকে দেখার এক অন্য চোখ ও অনুভূতি। যে জন্য তিনি বাড়ি ছাড়ার সময় ছোট্ট নাতিকে বলে যান “কুপমন্ডুক হয়ে থেকো না।”

সেই সপ্তদশ শতাব্দী থেকে বাঙালির সামাজিক জীবনে শুধু নয়, রামমোহনের আদর্শে অনুপ্রাণিত বাঙালি এক রেনেসাঁর জন্ম দিয়েছিল। সাহিত্য, শিল্প, চিত্রকলা, রাজনীতি, জীবনের প্রতিটি শাখায় বাঙালি তাঁর শ্রেস্ঠত্বের স্বাক্ষর রেখেছিল। “আগন্তুক” এর মনমোহন সেই বিরল বাঙালির প্রতিনিধি। সত্যজিৎ রায়ই প্রকৃত বাঙালিয়ানার শেষ বাঙালি। শুধু তাঁর সিনেমা নয়, তাঁর আঁকা ছবি বা ইলাস্ট্রেশন, গল্পের কাঠামো, ভাষার ব্যবহার, যথেষ্ট আধুনিক হয়েও বাঙালিয়ানায় ভরপুর।

[আরও পড়ুন: সত্যজিৎ রায়, আজও কেন এই নামের কোনও উত্তরসূরি নেই বাংলা সিনেমায়?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ