Advertisement
Advertisement

Breaking News

ইউনিকর্ন আর নকসি কাঁথা নিয়ে স্বাধীনতার গল্প বলবেন তথাগত

প্রায় আট-নয় মাস ধরে এই ছবির কাজ করেছেন তিনি।

Tathagata’s new movie Unicorn
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:September 21, 2018 4:54 pm
  • Updated:September 21, 2018 4:54 pm

এক নারীর স্বাধীন সত্তার কাহিনি ‘ইউনিকর্ন’। লিখছেন সোমনাথ লাহা।

গ্রিক মাইথোলজি অনুযায়ী ‘ইউনিকর্ন’ হল স্বাধীনতার প্রতীক। আর সেই প্রতীকের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বাংলার ‘নকসি কাঁথা’। এহেন দু’টি বিষয়ই মিলেমিশে যায় এক নারীর স্বাধীনতার লড়াইয়ের মাধ্যমে। একঘণ্টার গল্পে এই নিপাট বুননের কাজটিই দক্ষ হাতে করেছেন অভিনেতা তথা পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়। তাঁর পরিচালিত ছবি ‘ইউনিকর্ন’-এর মধ্যে দিয়ে। প্রায় আট-নয় মাস ধরে এই ছবির কাজ করেছেন তিনি।

Advertisement

টলিউডে তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবির ভিড় থেকে বেরিয়ে এসে ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার হিসাবে নিজের জায়গাটি পোক্ত করার কাজে হাত লাগিয়েছেন তথাগত। প্রসঙ্গত ‘লালরঙের দুনিয়া’ ছবির হাত ধরে টালিগঞ্জে তথাগতর জার্নি শুরু হলেও পাদপ্রদীপের আলোয় তিনি আসেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় মেগা ‘বউ-কথা কও’-এর সৌজন্যে। পরবর্তীতে ‘শুঁয়োপোকা’, ‘বুনো’, ‘জিওডেসি’র মতো শর্টফিল্ম ও ওয়েব সিরিজ পরিচালনা করলেও ‘ইউনিকর্ন’-ই তথাগতর সে অর্থে প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি।

Advertisement

এই ছবির মধ্যে দিয়ে একজন মানুষের মুক্তির গল্প বলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। আর সেটিই ছবিতে প্রতিফলিত হয়েছে নারীর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। তৃতীয় বিশ্বের মহিলারা কোথাও গিয়ে পুরুষদের দ্বারা পরাধীনতা মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সেই বিশ্বাসের জায়গা থেকেই এই ছবির কাহিনি লিখেছেন পরিচালক।

অ্যাসিড আক্রান্ত লক্ষ্মীর পাশে অক্ষয়, ৫ লক্ষ টাকা দিলেন অভিনেতা ]

ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে শহুরে, কর্মরতা, বিবাহিত মহিলা অপালাকে কেন্দ্র করে। এক সময় ইউনিকর্ন ও নকসি কাঁথা দু’টিই পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে অপালার জীবনকে। জীবনযুদ্ধের নানা চাপে পড়ে সে একসময় হারিয়ে যায় স্বপ্নের জগতে। যেখানে রয়েছে পরস্পরাসূত্রে প্রাপ্ত নকসি কাঁথা, ক্রমশ বাস্তব আর অবাস্তব গুলিয়ে যায় অপালার। স্বপ্নকে ছুঁতে গিয়ে সে ভুলে যায় বর্তমান ঘটনা। ফলত সাংসারিক বিষয় ছেড়ে অন্য জগতে চলে যাওয়া অপালাকে সকলে মনোরোগী মনে করে। ফলে সে পৌঁছায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দিগম্বরের কাছে। অপালার এই স্বপ্নকে ছুঁতে চাওয়া কি তার অদম্য ইচ্ছের হ্যালুসিনেশন, নাকি সাইন্স ফিকশনের টেলিপোর্টেশন? না এর মধ্যে রয়েছে তৃতীয় বিশ্বের মানুষের হতাশা? উত্তর মিলবে ছবির পর্দায়।

ছবিতে অপালার চরিত্রে রয়েছেন পরিচালকের স্ত্রী দেবলীনা দত্ত মুখোপাধ্যায়। সাইক্রিয়াটিস্ট দিগম্বরের চরিত্রে রয়েছেন চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। অপালার স্বামী জয়ন্তর চরিত্রে দেখা যাবে রাজর্ষি দে-কে। ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন রাণা বসু ঠাকুর, পূজা মৈত্র ও অন্যান্য শিল্পীরা। ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং। সংগীত পরিচালনায় ময়ূখ ভৌমিক। ছবিতে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ-এর বিখ্যাত কবিতা ‘দ্য সলিটারি রিপার’- গান হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। গেয়েছেন প্রজ্ঞা শীল শর্মা। সিনেমাটোগ্রাফার শুভদীপ দে। সম্পাদনায় প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য।

তবে স্বামী-স্ত্রী (তথাগত-দেবলীনা) দু’জনে মিলে একত্রে ছবি করছেন। তাই কোনওরকম ত্রুটি যাতে একঘণ্টার ছবিতে না থাকে সেজন্য প্রতিটি বিষয় খুঁটিয়ে দেখেছেন পরিচালক। এর আগে তথাগত পরিচালিত দু’টি ছবিতে ছিলেন দেবলীনা। প্রয়োজনে ক্যামেরাও ধরেছেন। জলের তলায় আন্ডার ওয়াটার শট নেওয়ার পাশাপাশি দেশের বাইরে সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বও সামলেছেন তথাগত।

কলকাতা ছাড়াও ছবির শুটিং হয়েছে আন্দামানের কোরাল দ্বীপ-সহ মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে। ছবিটি প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছে প্রমোদ ফিল্মস, পিএসএস এন্টারটেনমেন্টস সহ তথাগত অ্যান্ড দেবলীনা প্রোডাকশন ক্রিয়েশনস অর্থাৎ তথাগত ছবির পরিচালনার পাশাপাশি দেবলীনার সঙ্গে মিলে একত্রে প্রযোজনার দায়িত্বও সামলেছেন। আপাতত ছবিটিকে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠাতে চান ছবির নির্মাতা-নির্দেশক। ছবি মুক্তির বিষয়ে এখনও কিছু ভাবেননি তাঁরা।

নেটদুনিয়ায় দ্বিগুণ হবে ‘হইচই’, আসছে ধামাকেদার সেকেন্ড সিজন ]

সম্প্রতি তপসিয়া সংলগ্ন লেভেল সেভেন-এ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হল এই ছবির ট্রেলর ও ফার্স্টলুক পোস্টার। ছবির ট্রেলর জুড়ে ফুটে উঠেছে নৈঃশব্দের রঙের ছবির এক অনন্য কোলাজ। ট্রেলর লঞ্চে ছবির পরিচালক-প্রযোজক, কলাকুশলী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ক গঙ্গোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্র, চৈতী ঘোষাল-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষজন। এদিনের অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

ছবি প্রসঙ্গে তথাগতর অভিমত, “আমি পর্দায় ফ্যান্টাসি, রূপকথার গল্প বলতে চাই। কারণ আমি ফ্যান্টাসি ভালবাসি। এটা একজন মানুষের মুক্তির গল্প। এক নারীর চোখ দিয়ে ছবিতে সেটা দেখানো হয়েছে। এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক নকসি কাঁথা। তৃতীয় বিশ্বের মহিলারা পুরুষদের দ্বারা পরাধীনতাকে মেনে নিয়েছেন বলেই আমার বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের জায়গা থেকেই এই গল্পটা লেখা। টেলিপোর্টেশনকে কাজে লাগিয়ে একটা গল্প বলার চেষ্টা করেছি। কোনও জটিল বিষয় নয়, সহজ সরলভাবেই ছবিটি দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছি।”

ছবিতে অপালার চরিত্রে দেবলীনাকে নেওয়া প্রসঙ্গে তথাগতর মন্তব্য, “প্রথমত কমফর্ট। দ্বিতীয়ত অন্য কোনও অভিনেত্রী হলে আট-নয় মাস ধরে শুটিংয়ের অত্যাচার সহ্য করত না, চরিত্রটির বয়সের সঙ্গে দেবলীনার মিল রয়েছে।”

দেবলীনার মতে, “এই ছবিতে অপালা যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায় সারা পৃথিবীর বেশির ভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রেই বিষয়টা একইরকম। পৃথিবীর ৮০ শতাংশ মহিলাই স্বাধীনতাহীনতায় ভোগেন। আমি নিজে হয়তো অপালার মতো নই। কিন্তু তাও অপালার চরিত্রের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছি। আমি নিজে মনে করি স্বপ্ন সবসময় দেখা উচিত। স্বপ্নের প্রতি যদি বিশ্বাস থাকে তাহলে সেটা পূরণ হবে। তবে অপালা তার স্বপ্নকে শেষ পর্যন্ত ছুঁতে পারে কি পারে না তার জন্য ছবিটা দেখতে হবে।”

চিরঞ্জিতের কথায়, “এটা একেবারে অন্যরকমের বিষয়ভাবনার ছবি। একেবারে ফ্যান্টাসি/ইমাজিনারি ছবি। অদ্ভুত ছবি বানিয়েছে তথাগত। এই ছবিতে আমি একদিনে ১৪টা সিন তথা দৃশ্যের শুটিং করেছি। দৃশ্যগুলোর শুটিং হয়েছে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে। আমার এত বছরের অভিনয় জীবনে এরকম অভিজ্ঞতা এর আগে হয়নি। অন্য কোনও অভিনেতার হয়েছে বলেও আমার জানা নেই।”

ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেনি ‘মনমর্জিয়াঁ’, টুইটে ক্ষমাপ্রার্থী অনুরাগ ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ