সুন্দরী, বিদূষী। থাকেন বিলেতে। কলকাতায় আগমন মাঝেমধ্যে ঘটে। কিন্তু এবার যে তাঁর একটা যে ফিল্মের গানও সুপারহিট হয়ে গেছে! সেই সাহানা বাজপেয়ীর মুখোমুখি শ্যামশ্রী সাহা৷
কলকাতায় ঢুকেই চারদিকে ‘কণ্ঠ’—র পোস্টার দেখে কেমন লাগছে?
-একটা অদ্ভুত ভাললাগা কাজ করছিল। মনে হচ্ছিল আরে এই ছবিটাতে তো আমি গান গেয়েছি। আরও বেশি ভাল লাগছিল কারণ আমি তো এই দেশে থাকি না। তাই বিদেশে তো এই আবেগগুলো থাকে না। এখানে এসে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই বড় বড় পোস্টার দারুণ লাগছিল। আপ্লুত লাগছিল। আর মার কথা মনে পড়ছিল।
আর নতুন প্রোপোজাল?
-(একটু ভেবে) অনেক। (হাসতে হাসতে) একজন লিখেছেন, আপনি আমার প্রেমিকা হলে ভাল হত। আবার একরম মেসেজও পেয়েছি, “আমাদের প্রেয়সীদের আপনি সতীন, তবুও ওরা আপনার গান পছন্দ করে। আপনাকে পছন্দ করে।”
[আরও পড়ুন: ‘ওরা আমাকে বার্বিডল ভাবলে ভুল করবে’, ভোটের আগে আত্মবিশ্বাসী মিমি]
আমাকে আধঘন্টা অপেক্ষা করতে হল আপনার ফোনে চার্জ ছিল না বলে। ‘কণ্ঠ’-র ট্রেলার লঞ্চ করার পর থেকেই বার বার ফোন চার্জে বসাতে হচ্ছে?
-(হাসি) আমি ফোনে কথা বলতে ভালবাসি না। কিন্তু ‘কণ্ঠ’—র গান রিলিজের পর থেকে অনেক মেসেজ পেয়েছি, অনেক ফোন পাচ্ছি। কখন যে ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। সবাই বলেছেন গানটা তাঁদের খুব ভাল লেগেছে। গানের কথা, গানের সুর, গায়কী সবকিছু নিয়ে সবাই খুব প্রশংসা করছেন। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকেও অনেক মেসেজ পেয়েছি। অনেকেই ছবি দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। আমার নিজেরও মনে হয়েছে গানটার একটা বৈশিষ্ট্য আছে। একটা গল্পও আছে।
কীরকম?
আমি, প্রসেন (মুখোপাধ্যায়) একটা অন্য একটা গানের রেকর্ডিংয়ে গিয়েছিলাম। লাঞ্চ ব্রেকের সময় প্রসেন ‘আমার হাঁটু জলে’ গানটা শুনিয়েছিল। তখন আমি প্রসেনকে বলেছিলাম এই গানটা আমি গাইতে চাই। কারণ গানটা শুনে আমার মনে হয়েছিল এটা আমার গান। তার বেশ কিছুদিন পর প্রসেন আমাকে ফোন করে বলল গানটা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে নেওয়া হচ্ছে, আমি গাইব কি না? আমি তো এত খুশি হয়েছিলাম, যে ওই মুহূর্তে কী বলেছিলাম আমার মনে নেই।
‘কণ্ঠ’র প্রিমিয়ারে নতুন কোনও গানের অফার পেলেন? আপনার জন্য কোনও নতুন গান লেখা হল?
-না। আমার গলায় তো সব ধরনের গান যায় না। তাই আমি গাইতে পারব এরকম গান থাকলেই আমি সুযোগ পাই।
আপনার অভিনয়ের অফারও নিশ্চয়ই আছে?
-আমাকে আমার এক বন্ধু পরিচালক বলেছিল, “অভিনয় করবি?”
বিখ্যাত কেউ?
-সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেছিল। আমি না বলেছি, কারণ আমি অভিনয় করতে পারি না।
[আরও পড়ুন: কিম্ভূত না সাহসী? মেট গালায় প্রিয়াঙ্কার পোশাক নিয়ে কী বলছে টলিউ]
অভিনয় না করলেও আপনি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে গান গেয়েছেন। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে গান গাইলেন। লিস্টে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ও আছেন নিশ্চয়ই?
-আমার কোনও লিস্ট নেই। কোনওদিন ছিলও না। যাঁরা গান গাইতে ডাকেন, গান পছন্দ হলে আমি গাই। কৌশিক গাঙ্গুলি আমার খুবই পছন্দের পরিচালক। ওঁর কখনও যদি মনে হয়, আমার গান ওঁর ছবিতে প্রয়োজন, নিশ্চয়ই গাইব। সম্প্রতি অয়ন চক্রবর্তীর ‘ষড়রিপু ২’তে একটা গান গাইলাম। পুজোর সময় রিলিজ হওয়ার কথা। রাজর্ষি দে’র ছবিতেও আমার গান আছে।
কলকাতায় এত কম থাকেন। পিআর মেনটেইন করেন কী করে?
-দেখুন, আমার গান যাঁদের পছন্দ, তাঁরাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। লন্ডন থেকে পিআর মেইনটেন করা সম্ভব নয়। আমি কখনওই প্লে-ব্যাক গায়িকা হব ভেবে গানের জগতে আসিনি। নিজের মতো করে গান গেয়েছি। আমার গায়কী, গলার টেক্সচার, টোনালিটি একেবারেই তথাকথিত প্রোথিতযশা প্লে-ব্যাক শিল্পীদের মত নয়। তার মধ্যে যেটুকু সুযোগ পাই তাতে আমি খুশি।
যদি কখনও এমন সময় আসে আপনাকে অধ্যাপনা আর গান দু’টোর মধ্যে যে কোনও একটাকে বেছে নিতে হবে, আপনি কোনটা বেছে নেবেন?
-(অনেকক্ষণ ভেবে) আমি প্রার্থনা করব এমন সময় যে কখনও না আসে। একটা সময় ছিল যখন আমি গান গাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলাম। শুধু পড়াশোনা নিয়ে থাকব এটাই ভেবেছিলাম। তারপর মা বললেন, আমার বন্ধু—বান্ধবরাও বলল আবার গান শুরু করতে। সেই বছরই আমার অ্যালবাম ‘নতুন করে পাব বলে’ রিলিজ করল। খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সিডিটা। সবার কথায় আমি আবার গানে ফিরলাম।
আপনার একটা নাম্বার তো প্রায়ই বন্ধ থাকে। কলকাতায় খুব কম সময়ের জন্য আসেন। এতে আপনার কেরিয়ারের ক্ষতি হচ্ছে না? কলকাতায় বেশি সময় থাকলে আরও বেশি ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ পেতেন৷
-আমার দু’টো প্রফেশন। আমি লন্ডন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপিকা আর গান গাই। দু’টো কাজই ভালবেসে করি। লাভ —ক্ষতির কথা খুব একটা ভাবি না। ছবিতে যেটুকু গান গাওয়ার সুযোগ পাই, তাতেই আমি খুশি। আমি অল্পেতে খুশি। ‘অল্প লইয়া থাকি তাই, মোর যাহা যায় তাহা যায়।’
আপনার বিভিন্ন ভাষাভাষী ছাত্রছাত্রীরা একসঙ্গে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গেয়েছেন আপনার পরিচালনায়। ভাল উদ্যোগ।
-ধন্যবাদ। আমি স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিস, লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে বাংলা পড়াই। আমার ছাত্র—ছাত্রীরা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে খুব ভালবাসে। ওই গানটা একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করার জন্য গাওয়া হয়েছিল।
লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো, গানের প্রোগ্রাম, তার সঙ্গে পি.এইচ.ডি করছেন এতকিছু সামলান কী করে?
-কীভাবে করছি জানি না, বিশ্বাস করুন মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাব। পি এইচ ডি নিয়ে খুব চাপে আছি। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ডি-অ্যাক্টিভেট করেছি। তবে এটা বলতেই হবে আমার হ্যাজব্যান্ড খুব সাহায্য করেন। উনি সাপোর্টিভ না হলে এত কিছু করতে পারতাম না।
আপনি তো গান লেখেন। কম্পোজার হলে কাকে দিয়ে গাওয়াবেন?
-আমি কোনওদিনই কম্পোজার হতে পারব না। কম্পোজার হওয়ার জন্য একটা পারটিকুলার সেট অফ স্কিল দরকার পড়ে যেটা আমার নেই। তবুও একটা ইমাজিনারি ওয়ার্ল্ডে যদি কম্পোজার হই, মৌসুমী ভৌমিক, কবীর সুমন, রূপঙ্কর বাগচী, শিলাজিৎ, সামন্তক সিনহা, রূপম ইসলাম, ইমন চক্রবর্তী, সোমলতা আচার্য এঁদের
কথা ভাবব।
কলকাতায় এলে এদের সঙ্গে দেখা হয়?
-না। খুব একটা হয় না। ওই প্রিমিয়ারেই সবার সঙ্গে দেখা হয়।
[আরও পড়ুন: ‘দিশার সঙ্গে আমার নাম জড়ালে ভালই লাগে’, লাজুক মুখে বললেন টাইগার]
শোনা যায় আপনি ফ্যামিলি নিয়ে আপনি একটু বেশিই ইনভলভড। কেরিয়ারে অতটা ফোকাসড নন…
-আমার জীবনে কয়েকটা খুব স্বচ্ছ প্রায়োরিটি আছে। যাদের সঙ্গে কোনওরকম কম্প্রোমাইজ আমি করি না। আমার ছ’বছরের মেয়ে, রোহিণী, আমার অধ্যাপনার কাজ, আর আমার পিএইচ ডি, গান গাওয়া। এই সবকিছুই আমি খুব মন দিয়ে করার চেষ্টা করি। আমার মেয়েকে তার প্রাপ্য সময় না দিয়ে আমি অন্য কিছু করব না. আমি হাজারবার কারণে অকারণে টিভিতে মুখ দেখানোয় বিশ্বাসী নই। ওভার এক্সপোজার আমার খুব পছন্দের নয়। এই আইডিওলজিটা যদি অন্যের কাছে ঔদাসীন্য বলে ট্রান্সলেটেড হয়, আমার সত্যিই কিছু বলার নেই।
কলকাতায় এলে গঙ্গার ধারে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ পান?
-যাই, তবে প্রত্যেকবার নয়। শেষবার মায়ের অস্থি ভাসাতে গিয়েছিলাম।
দেখলাম। আপনার ডিপিতে মা রয়েছেন। সঙ্গে আপনার মেয়ে।
-হ্যাঁ৷ আমার গান গাওয়ার পিছনে আমার মা সবথেকে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন। ছ’মাস আগে হঠাৎ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমি কিন্তু আমার বাবার কাছেই বড় হয়েছি, সেই অর্থে আমি ড্যাডি’স গার্ল। কিন্তু মা চলে যাওয়ার পর বুঝলাম মা কতটা আমাকে জুড়ে ছিলেন। আমি এখনও এই তীব্র শক কাটিয়ে উঠতে পারিনি। একেবারে একা হয়ে গেছি।
লন্ডন না কলকাতা কোথায় শপিং করতে ভাল লাগে?
-আমি একদম শপিং করতে ভালবাসি না।
যাঃ কী বলছেন?
-সত্যিই। আমার যা কিছু কেনার অনলাইনেই কিনি।
শুধু পুরুষরাই নন, মহিলারাও কিন্তু আপনার গানের ফ্যান। এই তো সেদিন ‘কফিহাউস’-এর এক ইন্টারভিউয়ে পাওলি বলেছেন ওঁর আপনার গান ভাল লাগে।
-থ্যাঙ্ক ইউ।
আপনাকে পছন্দ করে না এই লিস্টটাও তো বেশ লম্বা।
-হ্যাঁ। আমাকে পছন্দ করেন না। আমার গান পছন্দ করেন না। আমার উচ্চারণকে কুৎসিত উচ্চারণ বলেন।
কয়েকদিন আগে আপনার সম্পর্কে শুভমিতা এইরকমই মন্তব্য করেছিলেন। শুনলাম আপনারা একে অপরকে ফেসবুকে নাকি ব্লকও করে দিয়েছেন।
-আমি শুভমিতাদিকে চিনি না। ফেসবুকেও ওর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। কাজেই ব্লক করার কোনও প্রশ্নই নেই। আমার এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য নেই। আমার ফ্যান পেজে আমাকে ট্যাগ করা হয়েছে। আমি কন্ট্রোভার্সি পছন্দ করি না। এর আগেও আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। আমি এই সব গায়ে মাখি না। আমি শুধু একটা কথাই বলব, আমার পদবী বাজপেয়ী হলেও শুভমিতাদি জানেন না আমি কিন্তু বাঙালি।
কলকাতায় পুরুষ মহলে সাহানা বাজপেয়ীর নাম উঠলেই এই কমেন্ট ভেসে আসে…সুন্দরী,বিদূষী। আর কোনও বিশেষণ আছে? যেটা ওঁরা জানেন না?
-(প্রচণ্ড হাসি) সিরিয়াসলি? আমার তো শুনেই মন ভাল হয়ে গেল। তবে এটা বোধহয় কেউ জানেন না, আমার প্রচণ্ড মাথা গরম। (হাসি)