সোনা সাহার মুখোমুখি কোয়েল মুখোপাধ্যায়
কিংবদন্তি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিয়ে টিভি কেরিয়ার শুরু। খবরটা শুনে প্রথম প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
সোনা: খুব খুশি হয়েছিলাম। শুধু আমি নই, বাড়ির সকলেই। বাড়িতে যখন ফোন করে বললাম, সকলে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল, আশীর্বাদ করেছিল। প্রথম থেকেই আমি চেয়েছিলাম, টেলিভিশন কেরিয়ার শুরু করব একটা বিগ ব্রেক দিয়ে।
টার্গেট তো সকলেই সেট করে। স্বপ্নপূরণ হয় হাতে গোনা কয়েকজনের। আপনার বয়স মাত্র কুড়ি। এত কম বয়সে ব্যাপারটা ঘটালেন কী ভাবে?
সোনা: আমি দু’বছর মডেলিং করেছি। তারপর অভিনয়ে মন দিই। মডেলিং করলেও প্রথম থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল অভিনয়ে আসব। সেই জন্য নাচ শিখি। পান্নালাল দাশগুপ্তর কাছে তালিম নিয়েছি। এ ছাড়াও আমার খুব কাছের মানুষ, সুব্রত রায় ভীষণ এনকারেজ করেছেন। পরিবারের থেকে সাপোর্ট পেয়েছি। নিজের উপর তো বিশ্বাস ছিলই। এই ফ্যাক্টরগুলোও কাজে দিয়েছে। আর বয়সের কথা বললেন, যে চরিত্রে আমি অভিনয় করছি, সেই দেবী অর্থাৎ প্রফুল্লর জার্নি আঠারো বছর বয়স থেকে শুরু হয়েছিল। সেই তুলনায় আমি তো বড়! (হাসি)
[ ‘সুনীলদা নেই তাই সর্বত্র নুন কম মনে হয়’ ]
অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন?
সোনা: থিয়েটার করেছি। স্টার জলসার এই প্রোজেক্টে সিলেক্ট হওয়ার পর গত দু’মাস খেয়ালি দস্তিদার এবং স্বাগতা মুখোপাধ্যায়ের কাছে ওয়ার্কশপ করেছি। ঘোড়া চালানো শিখেছি। লাঠি চালানো শিখেছি। আসলে চ্যানেল থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল। বলল, দেবী চৌধুরানি চরিত্রে অভিনয় করতে চাও? ‘হ্যাঁ’ বলেছিলাম। তখন বলল অডিশন দিতে হবে। অডিশন দিয়েছিলাম।
যে উপন্যাস নিয়ে এই ধারাবাহিক, সেটা পড়েছেন?
সোনা: হ্যাঁ, পড়েছি। বহুবার। দেবীর চরিত্রটা বুঝতে এটা আমাকে সাহায্য করেছে।
ঐতিহাসিক চরিত্র। তার আবার দু’টো ট্রানজিশন। প্রথমে প্রফুল্ল, তার পর দেবী চৌধুরাণী। প্রথম ব্রেকেই এত বড় স্কেলে অভিনয় করতে গিয়ে ভয়ে বুক দুরু দুরু করেনি? হাত-পা কাঁপেনি?
সোনা: গোড়ার দিকে ভয় ছিল। একটু। কিন্তু ওয়ার্কশপগুলো অ্যাটেন্ড করার পর আর সমস্যা হয়নি।
আপনি কি একমাত্র সন্তান?
সোনা: না। আমার এক দিদি আর দুই দাদা আছেন। আমি সবচেয়ে ছোট।
তাঁরাও কি অভিনয়ের বৃত্তে আছেন?
সোনা: আমার ছোট দাদা আছেন।
সোনা, আপনি কি কলকাতায় থাকেন?
সোনা: এখন থাকি। গলফগ্রিনে। আমি মালদহের মেয়ে।
[ শিক্ষক দিবসে গুরুদের স্মৃতিচারণায় সফল তারকারা ]
জেলার মেয়ে কলকাতায় এসে অভিনয়ে কেরিয়ার করছেন। কতটা কঠিন ছিল সেই যাত্রাপথ?
সোনা: তেমন কোনও বড় সমস্যা হয়নি। আমাদের মালদা থেকে প্রচুর মানুষ এই শহরে আসেন, নানা ফিল্ডে কেরিয়ার করতে। তাঁদের থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়েই এই শহরে এসেছিলাম। প্রথম প্রথম ভয় হত। এখন আর হয় না (হাসি)। তা ছাড়া এখানকার অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীই তো এই শহরের নন। তাঁরা সবাই জমিয়ে কাজ করছেন এখানে। প্রচুর নামও করেছেন। তাঁরা যদি পারেন, আমি কেন পারব না?
কলকাতায় একা থাকেন?
সোনা: না। পরিবারের সঙ্গেই থাকি।
কেরিয়ারের সিদ্ধান্তে আপনার পরিবারের কতটা সমর্থন ছিল?
সোনা: প্রথম দিকে একটু সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে যায়। বাবা-মা খুব সার্পোটিভ ছিলেন। এনকারেজ করেছিলেন খুব।
পড়াশোনা কী নিয়ে করেছেন?
সোনা: বি এ সেকেন্ড ইয়ার পড়ছি। বিষয় এডুকেশন।
পড়ছেন? আবার ধারাবাহিকে অভিনয়ও করছেন? তার উপর আবার মেগায়! অভিনয় করে পড়েন কখন?
সোনা: এখন তো নিয়ম হয়ে গিয়েছে যে, রাতে আর শুটিং করা যাবে না। তখন পড়ি। অবসর সময়ে পড়ি। পরীক্ষার ডেট জানিয়ে রেখেছি কাজের জায়গায়। ছুটি পাব তখন। তা ছাড়া আমি শুটিংয়ে বই নিয়ে যাই। মেক-আপ রুমে বসে পড়ি।
মেগার চাপ ট্যাকল করছেন কী ভাবে?
সোনা: প্রথমে ভয় করত। ফার্স্ট দিন তো খুবই ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন পুরোটা হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। সেটে সহশিল্পীরা খুব সাহায্য করেন। সিনিয়ররা তো বটেই।
[ ছবির জন্য গান তৈরি করতে আগ্রহী রাঘব, চান দায়িত্ব ]
চ্যানেলে-চ্যানেলে টিআরপির যুদ্ধ কেমন বুঝছেন?
সোনা: আমাদের স্লট রাত আটটার। আমরা চাইছি এই স্লটে অন্য চ্যানেলে যে যে সিরিয়াল চলে, তার থেকে নজর সরে এসে আমাদের উপর পড়ুক (হাসি)।
এখন প্রত্যেক চ্যানেলে পিরিয়ড ড্রামা, ইতিহাস-নির্ভর ধারাবাহিকের বাড়বাড়ন্ত। এই কম্পিটিশন নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া?
সোনা: জানি, কাজটা ভিষণ টাফ। চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি। দেখা যাক, কী হয়!
ফিডব্যাক কেমন?
সোনা: অসাধারণ! আউটডোরে যেখানেই গিয়েছি, গ্রামে বা অন্য কোথাও, অনেকে এসে বলেছে, ‘আমরা ধারাবাহিকটা দিনে একবার নয়। তিন-চারবার করে দেখি। টিভিতে সময় না পেলে মোবাইলে দেখি।’ দর্শকদের ভাল লাগছে। পজিটিভ রেসপন্স পেয়েছি।
[ ৭ দিন বন্ধ থাকতেই তোলপাড় রাজ্য, কেন সিরিয়াল এত জনপ্রিয়? ]
আর সমালোচনা? বেশির ভাগ সময়ই ইতিহাস-নির্ভর ধারাবাহিকের বিরুদ্ধে খোদার উপর খোদকারি করার অভিযোগ ওঠে। ‘দেবী চৌধুরাণী’-ও ব্যতিক্রম নয়। একে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস, তার উপর দীনেন গুপ্তর একই নামের ছবিতে সুচিত্রা সেনের সেই অভিনয়! তুলনা টেনেও তো কথা হবে…
সোনা: আমাকে অনেকেই কথাটা বলেছে। আমি বলেছি, মহানায়িকার সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। আমি শুধু চাই, আমার মতো করে, নতুন করে দেবী চৌধুরাণীকে দর্শকদের মনে প্রতিষ্ঠা করতে। আর যাঁরা তথ্য বিকৃত করার কথা বলছেন, তাঁদের বলব, গল্পটা খুব সিম্পল! এখনও আমরা গল্পের মূল ট্র্যাকে ঢুকিনি। কী ঘটে থাকতে পারে, আমরা তার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র!
আপনি সিঙ্গল? না কমিটেড?
সোনা: আমি সিঙ্গল। আর কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত। বিয়ের কোনও প্ল্যান নেই। এটাই লিখুন (হাসি)।