Advertisement
Advertisement
Kaagaz Ke Gubbare Review

কলকাতার মঞ্চে ইসমত চুগতাই, সাবলীল অভিনয়ে উজ্জ্বল পদাতিকের ‘কাগজ কে গুব্বারে’

ছ'টি ছোট্ট ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে নাটকটি।

Here is the Review of Padatik Theatre's new play Kaagaz Ke Gubbare | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:November 7, 2022 12:57 pm
  • Updated:November 7, 2022 1:13 pm

নির্মল ধর: কলকাতার নাট্যচর্চায় হিন্দি নাটকের পরিসর কমছে। ঝুনঝুনওয়ালা চলে গিয়েছেন, ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের দল এখনও সাধ্যমতো চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যতিক্রম শুধু ‘পদাতিক’। শ্যামানন্দ জালান যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেটা এখনও কলকাতার বুকে হিন্দি নাট্যচর্চাকে থামতে দেয়নি। এবং সেটি সম্ভব হয়েছে ‘পদাতিক’-এর নিজস্ব একটি মঞ্চ থাকায়। সেখানেই প্রায় নিয়মিত শ্যামানন্দজির উত্তরসূরিরা নাট্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই এক সুন্দর উপস্থাপনা ‘কাগজ কে গুব্বারে’ (Kaagaz Ke Gubbare) ।

Kaagaz-Ke-Gubbare-1

Advertisement

নাটক যে শুধুই বিনোদন নয়, তার একটি সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে, শ্যামানন্দজির সেই দায়িত্ব থেকে সরে যাননি উত্তরসূরিরা। ইসমত চুগতাই ও সাদাত হাসান মান্টোর যুগলবন্দিতে বাঁধা ‘কাগজ কে গুব্বারে’ প্রমাণ করে দিল, ‘পদাতিক’ এখনও নাট্যচর্চায় সদর্থক ভূমিকা পালন করেই আসছে। সমাজে নারীর ভূমিকা নিয়ে অনেক গালভরা কথা বলা হয়, কিন্তু বাস্তবে সত্যিই কি সেটা মেনে চলেন কেউ? না, কেউ না! সংবেদনশীল অভিনয় থেকে নির্দেশনায় এসে অনুভা ফতেপুরিয়া তাঁর এই রচনায় বুঝিয়ে দিলেন শুধু সান্ধ্য মজলিশে বিনোদন ছড়ানোর জন্য নাটক করতে আসেননি তাঁরা।

Advertisement

একটি সময়নিষ্ঠ বক্তব্য উপস্থিত করতেই চেয়েছেন অনুভা। হ্যাঁ, বিনোদন নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু তার ভেতরে সমাজ, সংসার, ব্যক্তি জীবনে নারীর সঠিক অবস্থার একটি মূল্যায়ণও রয়েছে। ইসমত চুগতাইয়ের লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নাটকটির এক ধারাবিবরণী লিখেছেন অনুভা। চুগতাই হয়ে নিজেও তিনি মঞ্চের একধারে লেখিকার ভূমিকায়। বাকি পাঁচজন স্ক্রিপ্টের খাতা হাতে যেন নাটকটিই পাঠ করছেন। মঞ্চে চরিত্র হয়ে উঠে তাঁদের অভিনয় এবং নাট্য একইসঙ্গে এগিয়েছে। দু’টি ধারা বেশ সাবলীল ভাবে মিশে গিয়েছে।

কাজটির জন্য অনুভাকে ধন্যবাদ। সাকুল্যে ছ’টি চারিত্র নিয়ে এই নাটক। প্রতিটি চরিত্রই প্রতিনিধিত্বমূলক। কেউ ঘরওয়ালি, কেউ রীতিমতো দজ্জাল কুমারী, কেউবা ঘোমটা দেওয়া ঘরোয়া গিন্নি— সবার কাহিনিই মঞ্চের একধারে বসে লিখে চলেছেন ইসমত। মাঝে মাঝে নিজের কথাও জানাচ্ছেন। সব চরিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছেন প্রবীণ একজন মানুষ(  সেটা কি মান্টোর ছায়া?)। বয়স ডিঙিয়ে তিনি আবার কখনও হয়েছেন তরুণ। 

[আরও পড়ুন: ‘প্রকল্পের বরাত পেতে সাংসদ তহবিলে দিতে হয় কমিশন’, ফের দেবকে আক্রমণ হিরণের]

মান্টোর কিছু উজ্জ্বল সংলাপও বারবার এসেছে। যেমন, “বাবা সদা কুমারই থাকে, মায়েরা কুমারী থাকে না” বা “হর আওরত বেশ্যা নহি হোতি, পর হর বেশ্যা আওরত হোতি হ্যায়।” আবার ইসমত নিজেই বলে ওঠেন, “ম্যায় দিমাগ বেচতি হুঁ, বেশ্যা জিসম বেচতি হ্যায়!” কথাগুলো নাটকের মধ্যে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছেন অনুভা বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্রের মুখে। ছ’টি ছোট্ট ঘটনা ও চরিত্র দিয়ে সাজানো ‘কাগজ কে গুব্বারে’ এবং সেগুলো পারস্পরিক জুড়ে দেবার কাজটিও সাবলীল, কোথাও বাধা পায় না।

নাটকের ছয় মহিলা চরিত্রের সাদা শাড়ি, লাল ব্লাউজ ব্যবহারের কারণটিও জানিয়েছেন অনিভা। কাগজ সাদা তাই, শাড়ির রং সাদা। তলায় আগুন জ্বালিয়ে দিলে কাগজের ফানুস আকাশে ওড়ে, আর সেই আগুনের জন্যই ব্লাউজের রং লাল। প্রতিটি নারী চরিত্রের পোশাক তাই একইরকম। কিন্তু লেখিকা ইসমতের পোশাক অন্যরকম হতেই পারতো। অনুভা সেটা না করে, নিজেকেও আর পাঁচটা সাধারণ নারীর সঙ্গেই মিলিয়ে দিয়েছেন, আলাদা করেননি। তাঁর ভাবনা প্রশংসার।

Kaagaz-Ke-Gubbare-2

 

এই প্রযোজনার দুটি উল্লেখযোগ্য দিক – এক, পদাতিক এর ইন্টিমেট ধাঁচের মঞ্চটিকে একটি সরু লম্বা ঘরের দেয়ালের আকারে বদলে ফেলা। দুই, ছ’জন অভিনেতার সামগ্রিকভাবে সমানতালে একই ঢংয়ে, একই লয়ে অভিনয়। অবশ্য কল্পনা ঝা কখনও-সখনও একটু বেশি উচ্চকিত। কিন্তু করুণা ঠাকুর এবং তিতাস দত্ত চরিত্র মাফিক কখনও দাপট দেখান, আবার কখনও শান্ত, লাজুক। তবে দলের প্রবীণ সদস্য অশোক সিং বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি নাটক পাঠে কতটা স্বচ্ছন্দ ও স্বাভাবিক। পলাশ চতুর্বেদী বৃদ্ধের কণ্ঠ অনুকরণে খুবই মজাদার কাজ করেছেন।

ইসমত হিসেবে অনুভার চরিত্রায়ণ শান্ত, ধীর, স্থির ও নম্র। একজন রুচিশীল নারীর মতোই। তিনিই এই নাটকের নির্দেশক। তবে তাঁর হাতে এমন অভিজ্ঞ শিল্পীরা থাকায় কাজটি নিশ্চয়ই কিছুটা সহজ হয়েছে। এমন সংবেদনশীল ও সচেতন নাট্য প্রযোজনায় হালকা হাসির মুহূর্ত যে নেই তাও নয়। তিতাসের জোরাল উপস্থিতি, হিন্দি ফিল্মি গানের দু’কলির ব্যবহার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দেয় কয়েক মুহূর্তের জন্য। না, সেজন্য নাটকের গম্ভীর বক্তব্যে কোনও প্রভাব পড়ে না। আর এখানেই ‘কাগজ কে গুব্বরে’ ব্যতিক্রমী প্রযোজনা হয়ে উঠেছে। ধন্যবাদ ‘পদাতিক’কে,  শ্যামানন্দজির আদর্শ বিচ্যুত না হওয়ার জন্য।

[আরও পড়ুন: ‘আদরের ঐন্দ্রিলা’কে খোলা চিঠি সুদীপার, মন উজাড় করে লিখলেন মনের কথা ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ