সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২১ ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আচ্ছা কেন বলুন তো, শুধু এই একটি মাত্র দিনের উপরই যাবতীয় দায় বর্তায় আমাদের মাতৃভাষা, মায়ের ভাষাকে স্মরণ করার? কেনই বা ভাষা নিয়ে এত চর্চা করি শুধুমাত্র এই দিনটিতে? আদতে আদিখ্যেতা করার কিংবা ভালবাসা জাহির করার একটা দিনের দরকার হয়। আর অলিখিতভাবে যাবতীয় দায় বর্তায় সেই নির্দিষ্ট দিনটির উপর! কিংবা হয়তো সেই রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম আমরা ভুলে যাই। ভুলে যাই বাংলা ভাষা… বাঙালিয়ানা। তবে কি ওই ‘বিলুপ্তিপ্রায়’ প্রাণীর মতো ভাষাটাও একদিন উবে যাবে? আর সংস্কৃতি? সেটাও কি ‘স্মৃতিটুকু থাক’ হয়েই রয়ে যাবে? এরকম সংশয় তো বাসা বাঁধেই মনে! ভালবাসার যে শহরে এমন বিতর্ক উত্থাপন হয় “বাংলা ভাল ভাষাও নয়, আবার ভাল-বাসাও নয়!” ঠিক এখানেই, এই প্রসঙ্গেই একুশের ঠিক আগের দিন মাইক ধরলেন কবীর সুমন- “নমস্কার/আদাব আমার নাম কবীর সুমন…।” এবারেও কিন্তু ‘বাংলাভাষা বাঁচাও’ প্রসঙ্গে ঝাঁজালো কবীর। এক ফেসবুক ভিডিওয় মাতৃভাষা নিয়ে ‘পোশাকি-প্রেমীকদের’ উদ্দেশে উগড়ে দিলেন যাবতীয় ক্ষোভ।
“বাংলা ভাল ভাষাও নয়, আবার ভাল-‘বাসা’ও নয়”- ঠিক এই প্রসঙ্গ নিয়েই আপত্তি কবীর সুমনের। কোনও এক এফএম চ্যানেল থেকে কবীর সুমনের কাছে অনুরোধ আসে, এই উপরোক্ত বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার জন্য। এতেই বেজায় ক্ষেপে যান প্রবীন গায়ক। বললেন, “আজ ২০শে ফেব্রুয়ারি। কাল একুশ। আমরা রয়েছি কলকাতায়, যা বাংলা সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। আমাকে বলা হল, ‘প্লিজ “বাংলা ভাল ভাষাও নয়, আবার ভাল-‘বাসা’ও নয়” এই প্রসঙ্গে আপনি কিছু বলুন। তারকারা সবাই মত দিচ্ছেন।’ এই তারকারা নিশ্চয়ই তামিল বা তেলুগু নন। কাশ্মীরেরও নন। তাঁরা বাঙালি। আমি হাসব না কাঁদব?”
[আরও পড়ুন: বিয়ের মাসদুয়েক পর সৃজিত-মিথিলার রিসেপশন, এলাহি আয়োজন ‘মুখুজ্জ্যে’ দম্পতির ]
এসব প্রশ্নের মাঝেই তিনি যে বাংলা খেয়াল রচনা করছেন-গাইছেন, সেকথাও জানালেন কবীর সুমন। “কাল একুশে ফেব্রুয়ারি এক সমিতির ডাকে আমি বাংলা খেয়াল গাইতে যাব। সকাল থেকে রেওয়াজ করে যাচ্ছি। তা হলে কি হেরে গেলাম আমরা?” প্রশ্ন তুললেন গায়ক। স্মৃতির সরণিতে হেঁটে ঘুর দেখলেন ১৯৭৬ সালে জার্মানিতে শহিদ কাদরির সঙ্গে তাঁর কথোপকথন। মনে করলেন যেবার কাদরি তাঁকে বলেছিলেন, “সুমন, সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে আপনারা জিতে গিয়েছেন।” প্রত্যুত্তরে কবীর সুমন বলেছিলেন, “বোধহয় নয়…।” সেই প্রসঙ্গ টেনেই কবীর বললেন, “শহিদ বেঁচে গিয়েছেন। তাঁকে এ প্রশ্ন শুনতে হল না। আমি বেঁচে আছি। আজও বাংলায় বাহার রাগে খেয়াল রচনা করছি…।” আদতে, ২১ শে ফেব্রুয়ারির ঠিক প্রাক্কালে এসে “বাংলা ভাল ভাষাও না, বাংলা ভালোবাসাও না” এমন বিতর্কের আয়োজন হচ্ছে শুনেই প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন কবীর সুমন।