Advertisement
Advertisement
oti uttam

চুয়াল্লিশ বছর পরে বড় পর্দায় মহানায়ক, কেমন হল সৃজিতের ‘অতি উত্তম’? পড়ুন রিভিউ

বাঙালির ম্যাটিনি আইডলকে ফের সিনেমার পর্দায় দেখার নস্টালজিয়া একবার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করবেই।

Oti Uttam Movie Review : Srijit Mukherji’s film is a light-hearted comedy
Published by: Akash Misra
  • Posted:March 23, 2024 12:23 pm
  • Updated:March 23, 2024 3:35 pm

শম্পালী মৌলিক: হিসেব কষে দেখলে চুয়াল্লিশ বছর পরে বড় পর্দায় মহানায়ক। প্রত‌্যাবর্তনের এই চমকটুকুই দর্শক টানার জন‌্য যথেষ্ট। এখন প্রশ্ন তিনি কীভাবে ফিরছেন? একটা সিনেমার প্রধান চরিত্র তৈরি হয়েছে, তার আগেকার ছবির যাবতীয় ফুটেজ জুড়ে জুড়ে। এ পাগলামো নয়তো কী! সৃজিত মুখোপাধ‌্যায়ের ব‌্যক্তিগত ভালোলাগা-ভালোবাসা এ ছবি জুড়ে। ভিএফএক্স, এআই ইত‌্যাদি ব‌্যবহারে উত্তমকুমারকে নিয়েও তাঁর সিনেমা করা হয়ে গেল! বাঙালির ম‌্যাটিনি আইডলকে ফের সিনেমার পর্দায় দেখার নস্টালজিয়া একবার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করবেই।

ছবির শুরু থেকে চমক। উত্তম কুমারকে নিয়ে অবসেসড একটি ছেলে, তার নাম কৃষ্ণেন্দু (অনিন্দ‌্য সেনগুপ্ত)। ‘সপ্তপদী’-র প্রভাবে মা-বাবা তার এমন নাম দিয়েছে। সে ছেলে প্রেমে পড়ছে হাল আমলের এক আধুনিকার (রোশনি ভট্টাচার্য)। মহানায়ককে নিয়ে এ মেয়ের কোনও মাথাব‌্যথা নেই। বরং সোহিনীর শোবার ঘরে রণবীর কাপুরের ছবি ঝোলে। আর ছেলেটার ধ‌্যানজ্ঞান উত্তম। পিএইচডি করছে মহানায়কের হাসির সোশিওলজিক‌্যাল ইমপ‌্যাক্ট নিয়ে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে এ ছেলের পক্ষে মেয়েটির নাগাল পাওয়া শক্ত। অতঃপর, কৃষ্ণেন্দু গুরুর থেকেই প্রেমের পরামর্শ নেয়। এ কী করে সম্ভব? কৃষ্ণেন্দুর বন্ধুর চরিত্রে মহানায়কের নাতি গৌরব চট্টোপাধ‌্যায় (যিনি আদতে নাতি-ই)। দুই বন্ধু মিলে প্ল‌্যানচেটের সাহায‌্যে গুরুকে ডেকে আনে ধরাধামে। মুহূর্তের মধ‌্যে মিডিয়াম গৌরব দাদুর ভারে কেঁপে কেঁপে ওঠে, আর কালজয়ী সব সিনেমার সংলাপ সমেত দাদু স্বয়ং এসে হাজির হয় স্টুডিও ফ্লোরে। গুরু বলেও দেন, ‘ঈষৎ আবছা দেখবি। আমি সাদা-কালোয় প্রকট হব।’

Advertisement

[আরও পড়ুন: বাঁদরে নিল মিমির সানগ্লাস, কীভাবে ফেরত পেলেন? দেখুন ভিডিও ]

এবার গুরু এই সময়ে এসে কী কী কাণ্ড ঘটান সেই নিয়েই রোমান্টিক কমেডি। আর কৃষ্ণেন্দু-সোহিনীর প্রেমের গাড়ি কীভাবে গড়ায় দেখার। লজিক দিয়ে নয়, ম‌্যাজিক দিয়ে এই ছবি বিচার করা ভালো। শুরু থেকে আমার কৌতূহল ছিল ছবির চিত্রনাট‌্য কীভাবে তৈরি হয়েছে। ছবি দেখতে গিয়ে বুঝলাম উত্তমকুমার কী করবেন তার ওপর ভিত্তি করে বোনা এই ছবি। তাঁর সংলাপ, হাঁটাচলা, তাকানো বিভিন্ন পুরনো ছবির থেকে খুঁজে এনে তবে বোনা হয়েছে ছবিটা। রিলিজের আগে সাক্ষাৎকারে অন‌্যতম মুখ‌্য অভিনেতা অনিন্দ‌্য সেনগুপ্তর থেকে জানতে পারি ডিটেলে। খুবই কঠিন ছিল নতুন দৃশ‌্যের সঙ্গে পুরনো ফুটেজ জোড়া। একজন উত্তমকুমারের ডামি হয়ে ক্রোমা ব‌্যাকগ্রাউন্ডে শট দিয়েছেন। ওটা ব‌্যাক আপ শট। আর উল্টোদিকের অভিনেতা তাঁর শট দিয়েছেন। এবারে উত্তমের ট্র্যাভেলিংয়ের সময় কৃষ্ণেন্দু আর গৌরবের শরীরী ভাষা এবং দৃষ্টির চলন সেটাও মেলাতে হত, নয়তো বেখাপ্পা লাগত। অসম্ভব কাজ সম্ভব করার প্রয়াস এ ছবি। সেলাই সব জায়গায় মসৃণ হয়েছে তা নয়। অনেক জায়গায় সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠ ব‌্যবহার করা হয়েছে। তবে বোঝা গিয়েছে।

Advertisement

যাই হোক, গুরু প্রকট হওয়ার পরে নাতি আর ভক্তের সঙ্গে শহর দেখেন ঘুরে ঘুরে। নিজের স্ট‌্যাচুর মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘এটা কী হয়েছে?’ ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’-এর পোস্টারে বুম্বাদাকেও দেখেন। জানতে পারেন, ‘বিশুর ছেলে, এখন ইন্ডাস্ট্রি।’ হেঁটে বেড়ান সত‌্যজিৎ রায়ের ছবির সামনে দিয়েও। সিরিয়ালের গল্প শোনেন, ‘মহানায়ক’ সিরিয়ালের গসিপ তাঁকে ছুঁয়ে যায়। শহর সফরে চলতে চলতে নানা ঘটনা পেরিয়ে, উত্তমের আলাপ হয় কৃষ্ণেন্দুর কাঙ্ক্ষিত মেয়েটির (সোহিনী ওরফে পুচু) সঙ্গে। মুহূর্তে মেয়ের ভোল বদল। বলে– ‘এই সব প্রিটেনশাস, শ‌্যালো বাংলা ছবি দ‌্যাখে না। সব পুরনো ছবি দেখে।’ এদিকে যখন, ওপারে মহানায়কের জন‌্য বেণুদির অপেক্ষার প্রসঙ্গ আসে বুঝতে পারে না! সোহিনী মহানায়ককে ডাকে ‘ইউকে’ বলে‘ আর উনি তাকে ‘পুচু’! আর চিরপ্রেমিক উত্তমকুমার যখন প্রিন্সিপাল ক‌্যারেক্টার তখন এই মেয়ের সঙ্গে প্রেম তো হবেই। কিন্তু ছায়া আর কায়া মিলবে কী করে? সে এক হিলারিয়াস কাণ্ড। এই উত্তম-যাত্রায় নস্টালজিয়া আছে, কৌতুক আছে, প্রেম আছে, রূপকথা আছে। একইসঙ্গে অতি-নাটকীয়তা আছে, অতি দীর্ঘসূত্রতা আছে। যেটা কমানো যেত। আর শুরুতে অত দ্রুত গুরুর আবির্ভাবে বড্ড জার্ক লাগে। প্রথম দিকে মহানায়কের ফুটেজ আরোপিত মনে হয়, পরে ক্রমশ সয়ে যায়। বিশেষ করে যেখানে ‘নায়ক’-এর দৃশ‌্য ব‌্যবহার করা হয়েছে চমৎকার মিশেছে সিকোয়েন্সের সঙ্গে। তবু মেলোড্রামা কমালে চিত্রনাট‌্য আরও স্মার্ট হতে পারত। আসলে সৃজিতের কাছে প্রত‌্যাশা এতটাই বেশি থাকে। অভিনয়ে অনিন্দ‌্য সেনগুপ্ত ক‌্যাবলা অনুরাগী থেকে পাগল প্রেমিক–সবটা খুব সাবলীল। চমৎকার তাঁর কমিক টাইমিং। গৌরব চট্টোপাধ‌্যায় নাতি ও বন্ধুর রোলে বেশ ভালো। রোশনি ভট্টাচার্য ঝকঝকে, প্রথম বড় পর্দায় তাঁর কাজ মনেই হয়নি। মা-বাবার চরিত্রে লাবণি সরকার ও শুভাশিস মুখোপাধ‌্যায় পারফেক্ট। সপ্তক সানাই দাস গানগুলো ভালো বানিয়েছেন। উপল সেনগুপ্তর ‘বন্ধু ভাবি’ মনে থেকে যায়। এক্সপেরিমেন্টাল ছবিতে সৃজিত অসম্ভব একটা স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্নের সফর সঙ্গী একবার হওয়াই যায়, মহানায়ক ফিরলেন যে!

[আরও পড়ুন: স্বস্তিকার জীবনে এল নতুন ‘বসন্ত’, রঙের কোন খেলায় মাতবেন অভিনেত্রী?]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ