Advertisement
Advertisement

Breaking News

Chhaad- The Terrace Review

নারী স্বাধীনতার স্বাদ নিয়ে মুক্তি পেল পাওলির ‘ছাদ’, কেমন হল? পড়ুন রিভিউ

কেমন হল 'ছাদ'? পড়ুন রিভিউ।

Paoli Dam starrer Chhaad- The Terrace film review
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:March 7, 2025 8:25 pm
  • Updated:March 7, 2025 8:25 pm  

চারুবাক: সাধারণ মধ্যবিত্ত সংসারের ঘেরাটোপেও শিক্ষিত পুরুষের মনে পুরুষত্বের চেনা অধিকারবোধ, সহধর্মিনীর চাইতে বয়স্ক বাবা-মায়ের প্রতি একটু বেশিই পক্ষপাতিত্ব দেখানো এখনও ‘স্বাভাবিক’ ধরে নেওয়া হয়। যার জেরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও একটি মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। অনেক সময় যেখান থেকে শুরু হয় দাম্পত্য ফাটল এবং পরিণতিতে সংসারের ভাঙন।

না, ইন্দ্রানী চক্রবর্তীর প্রথম ফিচার ছবি ‘ছাদ’ তেমন কোনও বিপজ্জনক পরিস্থিতি বা পরিণতির দিকে যায়নি। বরং মিত্রা (পাওলি) নামের স্কুল শিক্ষিকার মনের গভীরে তিনি ঢুকতে চেয়েছেন। সংসারের দমবন্ধ পরিস্থিতির মধ্যে তাঁর একমাত্র সান্ত্বনার জায়গা ছিল তিনতলায় আকাশের চাঁদোয়ার তলায় একটুকরো ছাদ। সেখানে তাঁর ফুলের বাগান, প্রতিবেশী বাচ্চাদের ঘুড়ি ওড়ানো, খোলা আকাশের তলায় শুয়ে থাকার মধ্যেই পেয়ে যেতো সে মনের শান্তি। শুধু তাই নয়, সেই ছাদেই সে পেত লেখার খোরাক, ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা। একতলার ভাড়াটেদের ঝগড়া, শ্বশুর ও তাঁর ছোটভাইয়ের সংসারের মধ্যে চলতে থাকা নীরব এক টেনশনের মধ্যে মিষ্টি বাতাস ছিল খুড়তুতো তরুণী ননদ মুকুল (রাজনন্দিনী)। স্বামী সঞ্জয় (রাহুল অরুণোদয়) জনপ্রিয় এক সংবাদপত্রের সাংবাদিক। স্ত্রী মিত্রার লেখক সত্তাকে তেমন গুরুত্ব দেন না। পাড়ার পরিচিত অন্য এক তরুণ সাংবাদিক মিত্রাকে তাঁদের পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় উপন্যাস লেখার অনুরোধ জানায়। কিন্তু ভাগবাটোয়ারার বাড়িতে হঠাৎ মনের সেই একান্ত আশ্রয়ের জায়গা ছাদটুকু চলে গেলে মিত্রা কেমন সহায়হীন হয়ে পরে। মনের কলম থেকে চিন্তার কালি যেন ফুরিয়ে যায়। সাময়িক বিষন্নতা গ্রাস করে তাঁকে। কিন্তু মিত্রা কি সংসারের বাধা, স্বামীর নীরব দর্শকের ভূমিকা পেরিয়ে তাঁর কলমকে চালু রাখতে পারবে? নাকি মিত্রা সংসারের চাপ ডিঙিয়ে, স্বামীর নির্লিপ্ততার উপযুক্ত জবাব দেবে? তাই নিয়েই ইন্দ্রানী চক্রবর্তী ছবির চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন।

Advertisement

খুবই সাবলীল ভঙ্গি, বাস্তবানুগ পরিবেশন। অতি নাটক এড়িয়ে মধ্যবিত্ত বাড়ির সংসারের ভারসাম্য বজায় রেখেই পরিচালক ছবির অন্তিম টেনেছেন। তাঁর পরিচালন কৌশলে নাটকীয়তার চাইতে বাস্তবের পরিবেশটাই বেশি উঠে এসেছে। ননদের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্কটি ছোট্ট আঁচড়ে সুন্দর তুলেছেন। গোটা ছাদের মধ্যে তৃপ্ত মিত্রার পরিপাটি শুয়ে থাকাটা একটু এলোমেলো হলে ভালো হতো। তবে স্ত্রী মিত্রা স্বামী সঞ্জয়ের একটি লেখার প্রশংসা করেও ‘তোমার লেখার সঙ্গে মানুষটাকে মেলাতে পারি না’ বলায় স্বামীর মুখে ‘শিল্প আর শিল্পী এক নাও হতে পারে’ সংলাপটির মধ্যে পরিচালক একজন শিক্ষিত মানুষের দ্বিচারিতার ব্যাপারটি স্পষ্ট করে দেন। যেটা রয়েছে সারা ছবি জুড়েই। মিত্রার লেখা গল্প পড়ে সেটিকে প্রথমে ‘ভালোই’ বলেও মুহূর্ত পরে ই-কার সরিয়ে ‘ভালো’ বলাটাও একই মানসিক জটিলতার প্রকাশ। পুজো সংখ্যায় বেরোনো স্ত্রীর লেখাটি সঞ্জয় অতো অল্প সময়ের মধ্যে পড়ে ফেললেন কী করে সেটাও এক প্রশ্ন, অবশ্য তখন স্বামী মন্তব্যহীন, নীরব। হয়তো তাঁর নীরবতাই কোনোভাবে স্ত্রীর লেখনী প্রতিভাকে স্বীকৃতির ইঙ্গিত। পরিচালক সম্ভবত সেটাই বলতে চেয়েছেন। ওই যে শুরুতেই বলেছিলাম ‘বিপজ্জনক’ সংঘাত বা পরিস্থিতির দিকে তিনি যাননি। নীরব সমঝোতার সঙ্গেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক রেখে দিয়েছেন। শেষপর্যন্ত মিত্রা তাঁর প্রিয় ‘ছাদ’ টি ফিরে পেল। তাঁর কলমেও ফিরে এলো গতি। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিকতার আধিপত্য থেকে কি নিজেকে সরাতে পারল?

তবে পর্দায় মধ্যবিত্ত বাঙালি সংসারের ছবিটি বেশ বিশ্বাসের সঙ্গেই ইন্দ্রানী তুলে এনেছেন। বাড়ির পরিবেশ, ঘরের সাজসজ্জা, নিজেদের ছাদ, প্রতিবেশীর ছাদ, ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্যগুলো সুন্দর। আবহ পরিবেশকে ডিঙিয়ে যায়নি। আর শিল্পীদের অভিনয়, হ্যাঁ, প্রধান দুটি চরিত্রে পাওলি দাম ও রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের অভিজ্ঞতা দিয়ে জীবন্ত ও স্বাভাবিক করেই তুলেছেন। রাহুল এবং পাওলির বেশ কয়েকটি জায়গায় ‘পজ’ নেওয়া বা ক্লোজআপে অভিনয় ধরে রাখার কাজটি ভালো লাগে। ননদের চরিত্রে রাজনন্দিনীকে বেশ লেগেছে। বাকি শিল্পীরা যোগ্যসঙ্গতকারী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement