নির্মল ধর: জমাটি থ্রিলার বানিয়ে হিসেবে সেই বাইশে শ্রাবণ থেকে চতুষ্কোণ পর্যন্ত সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর মুন্সিয়ানা দেখিয়ে আসছেন। জনপ্রিয় লেখকের আশ্রয় না নিয়েও তিনি রহস্য পর্বের ছবিগুলো ভালই বানিয়েছেন। এবার তিনি বানালেন ভিঞ্চিদা। কাহিনির সূত্রধর অবশ্য প্রধান অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। জমাটি করে মজা মিশিয়ে দারুণ একটি চিত্রনাট্য লিখেছেন সৃজিত নিজেই।
একজন মেক আপ আর্টিস্টের নাম ভিঞ্চিদা। বাবার পেশাকেই নিজের শিক্ষা আর পড়াশোনা দিয়ে রীতিমতো ‘শিল্প’র পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে ভিঞ্চি দা। বলিউডের গোঁজামিল জগতে পারফেকশনিস্ট হওয়ার অপবাদে কাজ জোটেনি। ভিঞ্চি দা কোনও আপসও করেনি। ঠিক এই সময়ই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসে আদি দাস নামের এক তরুণ। ক্রিমিনাল আইন যার ঠোঁটস্থ। কিন্তু আইনজ্ঞ হতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই আইনের প্রতিবাদ তার নেশা। এমনকী মায়ের উপর বাবা নির্যাতন করায় তাঁকে নৃশংসভাবে খুন করতে বাধেনি কৈশোরোত্তীর্ণ আদির। এবার সেই আদি আর সেই প্রস্থেটিক মেক আপের রীতিমতো শিল্পী ভিঞ্চিদা হয়ে ওঠে পার্টনার ইন ক্রাইম।
[আরও পড়ুন: ভোটের মরশুমে পারদ চড়াল মমতার বায়োপিক, মুক্তি পেল ‘বাঘিনী’র ট্রেলার]
কেমন করে, কীভাবে আদি নিজের মুখ বদলে প্রস্থেটিক মুখোশ চড়িয়ে একের পর এক রাজনৈতিক নেতার বখে যাওয়া ছেলে, জনগণের টাকা লুটে নেওয়া স্ক্যামার বা সমাজের ঘৃণ্যতম অপরাধীদের আইনের কাঠগড়ায় নিয়ে আসে, সেটা নাটকীয় করে নয়। বেশ সূক্ষ্মভাবেই দেখান সৃজিত। চিত্রনাট্যের মধ্যে খারাপ কাজের পিছনেও দারুণ যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন তিনি। শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির খ্যাতি ও অর্থের জোগান ঘটেছিল অস্ত্রশস্ত্রের নকশা এঁকে। নোবেল আইনের প্রবর্তক আলফ্রেড প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন বিধ্বংসী ডিনামাইট আবিষ্কারের মাধ্যমে। তবে শেষপর্যন্ত গোয়েন্দা প্রধান পোদ্দারের ( অনির্বাণ ভট্টাচার্য) রহস্য ভেদ করা হল না কেন- সেটা হলে গিয়ে দেখাই উচিত।
সৃজিতের নির্মাণ শৈলী ও কৌশল বড্ড নিপাট। প্রায় ফ্ললেস বলতেই পারি। থ্রিলারের শেষ পর্ব অবশ্য হাততালি কুড়োবার মতো। তবে ভিঞ্চিদার প্রেমিকা জয়ার ধর্ষিতা হওয়ার পর্বটি আরও একটু স্পষ্ট হতে পারত। অভিনয়ে মূল চরিত্রে রুদ্রনীল ও আদির ভূমিকায় ঋত্বিক চক্রবর্তী, দুজনই আবারও প্রমাণ করে দিলেন তাঁরা কত বড়মাপের অভিনেতা। চ্যাপলিন-এর পর রুদ্রনীলের এটাই সেরা কাজ। ঋত্বিক যে কোনও পরিচালকের হাতে এক দলা মাটির মতো। গড়েপিটে নিতে কোনও অসুবিধা হয় না। ডিসিডিডি অনির্বাণ বেশ মজার চরিত্রায়ন। সোহিনী সরকারকে তোতলামিতে বেশ মিষ্টিই লেগেছে। তবে এই ছবি যতটা সৃজিতের ঠিক ততটাই ছবির মেক আপ ম্যান সোমনাথ কুণ্ডুর। ধন্যবাদ তাঁরও প্রাপ্য। অনুপম রায়ের আবহ, কিন্তু তোমার মনের ভিতরে যাই কিংবা গ্যাস বেলুন সব উড়িয়ে ছিলে গান দুটো বাড়তি লাগল। জমাটি থ্রিলার হিসেবে ভিঞ্চিদা দর্শক আকর্ষণ করবে। কিন্তু তবুও একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। সৃজিতের মতো পলিশড এবং এফিসিয়েন্স ছবি বানিয়ে শুধুই কি ব্যবসার কথা ভেবে ছবি উৎপাদন বানিয়ে যাবেন?