Advertisement
Advertisement

Breaking News

Wild rice

উত্তর দিনাজপুরের বুনো ধান থেকেই উৎপত্তি কালো চালের, সংরক্ষণের দাবি গবেষকের

কয়েক বিঘা জমিতে কালো চালের ধান উৎপাদন করছেন অদ্যাপক।

Wild rice found in North Dinajpur | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:January 3, 2023 8:16 pm
  • Updated:January 3, 2023 8:17 pm

শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: কালো চালের উৎপত্তির মূল উৎস, প্রাচীন বুনো বা জংলি ধানের খোঁজ মিলল রায়গঞ্জে। নিচু জলাজমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মান লম্বা সুঙ্গওয়ালা জংলি ধানের সঙ্গে দেশজ ‘বাতসা ভোগ’ ধানের সংকরায়ন ঘটিয়ে কালো চাল চাষ হচ্ছে। উদ্যোগে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ডিন তথা উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র রায়। সীমান্তবর্তী কালিয়াগঞ্জের উত্তর কাঁচনা গ্রামের কয়েক বিঘা জমিতে কালো চালের ধান উৎপাদন করছেন তিনি। অধ্যাপকের দাবি, “উত্তর দিনাজপুরে জন্মানো এই প্রাচীন বুনো ধানেই সারা পৃথিবীর কালো ধানের উৎপত্তির প্রধান উৎস লুকিয়ে আছে। ভবিষ্যতের খাদ্য স্বয়ম্ভরতা বজায় রাখতে এই বিরল জংলি ধানের সুরক্ষিত সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।”

উত্তর দিনাজপুরের জলাভূমিতে হদিস মেলা লালচে চিকন সরু জংলি ধানের পোশাকি নাম ‘ঝরো ধান’। সামান্য নাড়াচাড়া করলেই লম্বা গাছ থেকে ঝরঝর করে বুনো ধান ঝরে পড়ে। তাই ‘ঝরো ধান’ নামে কৃষকদের কাছে সমাদৃত। প্রায় বিলুপ্ত কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন এই ধান গাছ নজরে এসেছে রায়গঞ্জ শহরের অদূরে রায়পুর এলাকার জলাজমিতে। জংলি ধানের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ওরাইজা রুফিপোগন’, যা এযাবৎ উৎপাদিত হরেক ধানের মূল উৎস হিসাবে বিবেচিত কৃষিবিজ্ঞানীদের কাছে। অভিযোজন এবং প্রাকৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে হাজার হাজার বছর ধরে এই বুনো ধান প্রকৃতিতে নিজেদের টিঁকিয়ে রেখেছে। সাম্প্রতিক কালে যতরকম উচ্চফলনশীল ধান কৃষি বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন, সেখানে দেশি ধানের সঙ্গে বুনো ধানের জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে একত্রিত করেছে প্রজনন বিদ্যার সংকরায়নের মাধ্যমে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: চড়া দামেও দেদার বিকোচ্ছে নবাবগঞ্জের ‘নবাবি বেগুন’, মুখে হাসি কৃষকদের]

এককথায় চাষযোগ্য দেশি ধানের পূর্বপুরুষ বুনো ধান। প্রতিটি ধান লম্বায় ৬ থেকে ৭ মিলিমিটার। চওড়া প্রায় দেড় মিলিমিটার। আর এক একটা গাছের উচ্চতা প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার। জংলি ধানের অসংখ্য গুণাবলি রয়েছে। বিশেষত বন্যা প্রতিরোধকারী হিসাবে জংলি ধানের ভূমিকা অপরিসীম। সেইসঙ্গে এই ধানের অনেক রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।

Advertisement

অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র রায় আরও বলেন,”সাদা রঙের বাতসা ভোগ কিংবা বাদামি চ্যাঙ্গা ধানের সঙ্গে বুনো ধানের সংকরায়ন ঘটিয়ে কালো ধান উৎপাদন দীর্ঘ গবেষণায় সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীর কোনও কৃষিবিজ্ঞানী এই কালো চালের উৎপত্তির খোঁজ দিতে পারেননি। যদিও বুনো ধানের জীববৈচিত্র্যকে উচ্চফলনশীল ধান উৎপাদনে কাজে লাগিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য বুনো ধানের চেয়ে রায়গঞ্জের বুনো ধানের জীববৈচিত্র্য একেবারে ভিন্ন,যা কালো চালের উৎপাদন সম্ভব। তাই এই ধানের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ দ্রুত প্রয়োজন। পুষ্টিগুনে পরিপূর্ণ। ফলে বিশ্বের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার লক্ষ্যে জংলি ধানের ভুমিকা অপরিসীম। তাতে এই ধান থেকে ভবিষ্যতে আরও নতুন কালো ধান উৎপাদনের সম্ভবনার দরজা খুলে যেতে পারে।” যদিও প্রাথমিক গবেষণায় যে সম্ভাবনাগুলো উঠে এসেছে, গবেষণা সম্পূর্ণ হলে রায়গঞ্জের বুনো ধানের জীববৈচিত্র‍্যে কালো ধানের নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে।

[আরও পড়ুন: মামলার জেরে আটকে নিয়োগ, বিকাশ ভট্টাচার্যের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ চাকরিপ্রার্থীদের]

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় বায়ো ডায়ভারসিটি আইন কার্যকর করতে ২০২২-এর ডিসেম্বরে জেলা পর্যায় প্রথম ‘বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি’ (বিএমসি) গঠিত হয়েছে। জেলার কৃষি বিভাগ ও বন ও উদ্যান বিভাগের আধিকারিক-সহ প্রশাসনের ৮ সদস্য নিয়ে গঠিত কমিটির শীর্ষে রাখা হয়েছে জেলা পরিষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিককে। তবে কমিটির অন্যতম সদস্য জেলা কৃষি অধিকর্তা সুফিকুল ইসলাম বলেন,”বায়ো ডায়ভারসিটি কমিটির প্রথম বৈঠক সবে হয়েছে। সেখানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে, যদিও এখনও কার্যকর প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।” অন্যদিকে রায়গঞ্জ বিভাগীয় বনাধিকারিক দাওয়া সামুং শেরপা বলেন,” বিভিন্ন গাছের জীববৈচিত্র‍্য সুরক্ষিত করতে সংরক্ষণের উদ্যোগ শুরু হবে। তবে জংলি ধান সংরক্ষণের বিষয় কোনও আলোচনা এখনও হয়নি।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ