Advertisement
Advertisement

Breaking News

Haryana

হিংসাদীর্ণ হরিয়ানায় বুলডোজার বিভীষিকা, মাটিতে মিশল ২৫০ ঝুপড়ি

এখনও অশান্ত দিল্লি সংলগ্ন গুরুগ্রাম।

After Haryana Violence, Bulldozer Action Takes Down 250 Shanties | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:August 5, 2023 9:01 am
  • Updated:August 5, 2023 9:01 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এখনও অশান্ত দিল্লি সংলগ্ন গুরুগ্রাম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। এহেন পরিস্থিতিতে হিংসাদীর্ণ নুহ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে তাউরু এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতেই বুলডোজার গুঁড়িয়ে দিল আড়াইশোরও বেশি ঝুপড়ি। সেগুলি ছিল ভিনরাজ‌্য থেকে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের। হরিয়ানা প্রশাসনের দাবি, সোমবার যারা অশান্তি বাধিয়েছিল, তাদেরই বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘর ভেঙেছে পরিযায়ীদেরই, যাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ বাংলার মানুষ। মুখ‌্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের নির্দেশেই ওই বুলডোজার চালানো হয় বলে জানা গিয়েছে।

গত সোমবার থেকেই ধর্মীয় মিছিলে অশান্তি ঘিরে উত্তপ্ত হরিয়ানা (Haryana)। যে অশান্তি ছড়িয়েছে গুরুগ্রামেও। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার রাতে যোগী আদিত‌্যনাথের দেখানো পথেই হেঁটে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করল আরেক বিজেপি শাসিত রাজ‌্য। সোমবারের উত্তেজনার কেন্দ্রস্থল নুহ থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরের তাউরু এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে চালানো হয় বুলডোজার। সূত্রের খবর, ঝুপড়িগুলি ভেঙে দেওয়ার এই নির্দেশ এসেছিল মুখ‌্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই। দু’দিন আগেই রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয় বলে বিতর্ক তৈরি করেন হরিয়ানার মুখ‌্যমন্ত্রী। সেই দিনই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে যোগী আদিত‌্যনাথের দেখানো বুলডোজারের পথেই হাঁটতে পারেন তিনিও। এর পরেই ঝুপড়ি ভাঙার নির্দেশ দিয়ে বিতর্কে বাড়তি ইন্ধন জোগালেন খট্টর। প্রশাসন সূত্রে খবর, ঝুপড়িগুলি আসলে বাংলাদেশিদের আখড়া। অসম হয়ে ভারতে প্রবেশ করে এখানে ঘাঁটি গেড়েছে তারা।

Advertisement

এই ঘটনা ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলে টুইট করে এই ক্ষোভের কথা জানান। তিনি লেখেন, ‘গুরুগ্রাম এবং নুহতে যে ঘটনা ঘটেছে তার খবর পেয়ে এবং ছবি দেখে আমি মর্মাহত। প্রধানত ভিন রাজ‌্য থেকে আসা মুসলিম শ্রমিকদের ঝুপড়িই ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এবং এদের মধ্যে একটা বড় অংশের মানুষ বাংলার। এমন ঘটনা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পরিযায়ী ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষগুলির নিরাপত্তার দাবি করছি। এবং পুলিশকে অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব‌্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

Advertisement

[আরও পড়ুন: জ্ঞানবাপীতে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট]

শুক্রবার অশান্ত নুহ এবং গুরুগ্রামে জুম্মার বিশেষ নমাজ আয়োজন করা যায়নি। এলাকায় বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল। এলাকা ভিত্তিক ১৪৪ ধারাও জারি রয়েছে নুহ এবং গুরুগ্রামে। শুক্রবারেও বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট এবং মোবাইল পরিষেবা। দুপুরে দু’ঘণ্টার জন‌্য ইন্টারনেট চালু করা হয় জরুরিভিত্তিক কাজের জন‌্য। চারদিনে সাতটি মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই নুহ জেলার এসপি বরুণ সিংলাকে বদলি করে দেওয়া হয় ভিওয়ানিতে। সোমবার বজরং দলের ব্রজ মণ্ডল পরিক্রমার সময় ছুটিতে ছিলেন এসপি। ওইদিন যিনি এসপি হিসাবে দায়িত্বপালন করছিলেন, সেই নরেন্দ্র বিজারনিয়াকেই স্থায়ীভাবে দায়িত্ব দেওয়া হল নুহর। এসপিকে সরিয়ে দিয়ে সেদিনের সংঘর্ষে পুলিশের যে গাফিলতি ছিল, সেটা একপ্রকার মেনে নিল মনোহরলাল খট্টর সরকার।

সোমবার বিজেপিশাসিত হরিয়ানার নুহ-তে ‘ব্রিজ মণ্ডল জলাভিষেক যাত্রা’র আয়োজন করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। গুরুগ্রাম-আলোয়ার হাইওয়েতে মিছিলে বাধা দেয় একদল যুবক। তারা মিছিল লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে বলে অভিযোগ। তার জেরেই তুমুল অশান্তি শুরু হয়। সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। এদের মধ্যে একজন ইমামও ছিলেন। আহত বহু। পোড়ানো হয়েছে অসংখ্য গাড়ি, বাড়ি, দোকান। এমন ভয়াবহ অঘটনের দিন এসপি কীভাবে ছুটিতে ছিলেন বিতর্ক তা নিয়ে। গোটা ঘটনা সম্পর্কে তিনি নাকি কিছুই জানতে পারেননি। কিন্তু বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যাত্রার অনুমতি দিয়ে পুলিশ সুপার নিজে কী করে ছুটিতে চলে গেলেন, প্রশ্ন উঠছিল তা নিয়েই। সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছিল বিরোধীরা। শেষমেশ চাপের কাছে মাথা নোয়াল সরকার। সরিয়ে দেওয়া হল ওই পুলিশকর্তাকে। সোমবার থেকে শেষ পাওয়া খবরে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৭৬ জনকে। আটক ৯০ জনেরও বেশি। দায়ের হয়েছে ৪১টি অভিযোগ। তিনটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে তিন সোশ‌্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের বিরুদ্ধে। ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে তাঁরা অশান্তিতে ইন্ধন দিয়েছেন বলে খবর। ২৩০০-র বেশি ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে ঘটনার সূত্রপাত কোথা থেকে তার হদিশ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে অবশ‌্য দাবি করা হয়েছে, প্রতিবছরের মতোই তরোয়াল হাতে নিয়ে নুহ জেলায় ব্রজ মণ্ডল যাত্রা শুরু করেছিলেন তাঁরা। তাঁদের উপর হামলাকারীরাই আগে আঘাত করেছিলেন এবং নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পাল্টা আঘাত করেন তাঁরা।

এদিকে নুহ-এর হিংসা নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চরমে। বিরোধীরা কাঠগড়ায় তুলছে খট্টর প্রশাসনকে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বলা শুরু করেছে ২০২৪-এ হরিয়ানার নির্বাচন জিততে বিজেপিই দাঙ্গা বাধাচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্ব আবার কাঠগড়ায় তুলছে স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ককে।

[আরও পড়ুন: ভয়ংকর গোষ্ঠী সংঘর্ষের দিন ছুটি নিয়েছিলেন! সেই পুলিশকর্তাকে সরাল হরিয়ানা সরকার]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ