Advertisement
Advertisement
অযোধ্যা

মন্দির-মসজিদের আশ্চর্য সহাবস্থান, সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে অযোধ্যা

অযোধ্যার ভিতে লুকিয়ে থাকা এই কাহিনিটি জানেন?

Ayodhya is the perfect example of Communal Harmony
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:November 11, 2019 9:55 pm
  • Updated:November 12, 2019 12:14 am

সোমনাথ রায়, অযোধ‌্যা: সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণার পর ঠিক কেমন হবে উত্তরপ্রদেশের এই শহরের ছবিটা? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, অযোধ্যা রয়েছে অযোধ্যাই। যুগের পর যুগ ধরে যেভাবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভুলে মিলেমিশে থেকেছে এখানকার বাসিন্দারা, সে ছবির এতটুকু হেলদোল হয়নি। বরং প্রত্যেকে সাদরে স্বাগত জানিয়েছেন সুপ্রিম রায়কে। জাত-পাতের ঊর্ধ্বে গিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে চলাতেই বিশ্বাসী তাঁরা। ঘুরতে ঘুরতে এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছলাম, সেখানে এ বিশ্বাস আরও অটুট হল।

সরযূ নদীর ধারেই রাম কি পেড়ি। সেখান থেকে শ’দুয়েক মিটার দূরেই দরগা-এ-শাহ আলম। মুঘল সম্রাট শাহ আলমের নামে তৈরি দরগার ঠিক পাশেই বাদশাহ শাহ আলম মসজিদ। স্থানীয়রা বলেন আঢ় গঢ়া মসজিদ। যা গড়ে উঠেছে রাম মন্দিরের পাশেই হনুমান গড়ি ট্রাস্টের জমিতে। মসজিদ ও দরগার আশপাশে পুরোটাই হিন্দু এলাকা। দরগা লাগোয়া বাড়ির ছাদে বসে রুদ্রাক্ষ হাতে জপ করতে দেখা গেল এক সাধুকে। সরযূর দিকে কয়েক পা এগোতেই পরপর দু’টি মন্দির। একটি সীতার অন‌্যটি হনুমানের। আবার মসজিদ লাগোয়া যাদব মন্দির। অথচ কী আশ্চর্য সহাবস্থান। মন্দিরের সামনে গেরুয়া বসনধারী এক মাঝবয়সিকে মসজিদের ঠিকানা জিজ্ঞেস করতে কপালে একটুও ভাঁজ পড়েনি। হাসিমুখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছেন পথ। মসজিদের প্রধান ফটকে লাগানো ছিল শিকল। পাশের চায়ের দোকানে জিজ্ঞেস করতে উত্তর এল, “একটু আগেই মৌলবিজি কোথায় যেন গেলেন। এক কাজ করুন, আপনি দরগায় যান। ওখানে আশিক ভাইকে পেয়ে যাবেন। ওর সঙ্গে কথা বলুন।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: টানাপড়েন শেষ, শিব সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস ‘জোটে’ নয়া সমীকরণ মহারাষ্ট্রে]

দরগা-এ-শাহ আলম কমিটির সদস‌্য আশিক আলি জড়িত স্থানীয় পৌর নিগমের সঙ্গে। বলছিলেন, “বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, আমাদের দরগায় হনুমান গড়ি থেকে চাদর আসে। হনুমান গড়ির বহুনাথ দাস তো মাঝেমধ্যেই আসতেন। লাল কোঠির কবস্তু আচার্যজিও চাদর পাঠান।”

Advertisement

এরপরই আসে প্রশ্ন। রামমন্দির ও বাবরি মসজিদ নিয়ে পাঁচশো বছর ধরে যে শহরে চলছে বিতর্ক, সেই অযোধ‌্যা যদি এভাবে একসঙ্গে থাকতে পারে, তাহলে দেশের অন‌্য প্রান্তে কেন এত সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ? খুব সহজেই উত্তরটা দিয়ে দিলেন আশিক। “সফেদ রং যাহা যায়েগা, ওয়াহা মাতম হি তো হোগা! সাদা কাপড় আমরা কখন ব‌্যবহার করি? কেউ মারা গেলে। মাতম, দুঃখের সময়। ওই সাদা পাঞ্জাবির লোকগুলোও তাই। নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি করে বেড়ায়। সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকলে ওদের দোকান বন্ধ হয়ে যাবে তো! অনেক সমস‌্যাও হবে। মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ‌্য, কাজ চাইবে। এর থেকে ধর্মের নেশায় বুঁদ করে রাখলে কারও মাথায় কিছু থাকবে না।”

বাইরে এসেও মাথায় ঘুরছিল কথাগুলো। চায়ের দোকানে আরেক রাউন্ড চা খেতে খেতে কানে এল সম্প্রীতির আরও এক ঘটনা। স্থানীয়দের দাবি, বাদশাহ শাহ আলম মসজিদ যে জমিতে, সেটি হনুমান গড়ি ট্রাস্টের। আবার হনুমান গড়ি মন্দিরও নাকি গড়ে উঠেছে সিরাজৌদ্দোলাহর কেল্লায়। বছর তিনেক আগে শ্রাবণ মেলার সময় যাদব মন্দিরে প্রচুর জনসমাগম হয়। সেই সময় মসজিদের একটি অংশ ভেঙে জনা পনেরো জনের মৃত্যু হয়। তখন স্থানীয় জেলাশাসক কিঞ্জল সিং নির্দেশ দেন- মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার হোক বা বসত বাড়ি, বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা সবকিছুর দ্রুত মেরামত করতে হবে। নইলে নেওয়া হবে আইনি পদক্ষেপ। সেই সময় নাকি বাদশাহ শাহ আলম মসজিদ সংস্কারের জন‌্য অনুদান দেয় হনুমান গড়ির ট্রাস্ট।

[আরও পড়ুন: দেশে আর্থিক মন্দার জের, ১২ বছরে সবচেয়ে কম বিদ্যুতের চাহিদা]

সাতাশ বছর আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রক্তে লাল হয়ে ওঠা সরযূ প্রান্তর এভাবেই দিচ্ছে সম্প্রীতির বার্তা। দেখার, শুধু শ্রীরামের জন্মভূমির এই শিক্ষা কীভাবে গ্রহণ করে দেশের বাকি অংশ।

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ