সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া সময়মতো। কাজ বলতে এটুকুই। কিন্তু করোনা (Coronavirus) সংকটকালে এই কাজটুকুই ঠিকমতো করতে রাজি হননি অনেকে। অ্যাম্বুল্যান্সে করোনা রোগীকে নিয়ে গেলে, সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় পিছিয়ে এসেছেন বহু চালক। দিল্লির আরিফ খান (Arif Khan) কিন্তু এঁদের মধ্যে একেবারে ব্যতিক্রমী একজন মানুষ। শয়ে শয়ে করোনা রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে তিনি প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এবার সেই রক্ষাকর্তা আরিফ নিজেই চলে গেলেন মৃত্যুর দেশে। করোনা ভাইরাসই কাড়ল তাঁর প্রাণ। দিল্লির এই অ্যাম্বুল্যান্স চালকের মৃত্যুতে তাঁর সহকর্মীরা বুঝতে পেরেছেন, চলে গেল প্রকৃত এক করোনা যোদ্ধা। চলে গেল বীরের মতো।
দিল্লির (Delhi) সিলামপুরের বাসিন্দা বছর আটচল্লিশের আরিফ খান শহিদ ভগৎ সিং সেবা দলের অ্যাম্বুল্যান্স (Ambulance) চালাতেন। করোনা আবহে অন্তত ৬ টা মাস তিনি টানা কাজ করে গিয়েছেন। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আর পাঁচজনের সঙ্গে নিজেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আরিফ। তখনও কিন্তু তাঁর সহকর্মীরা কিছুটা পিছিয়েই ছিলেন। দিন নেই, রাত নেই – অসুস্থ রোগীকে নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে আরিফের অ্যাম্বুল্যান্স গতি নিয়েছিল হাসপাতালের দিকে।
অনেকেই সতর্ক করেছিলেন, এভাবে দিনরাত করোনা রোগীদের নিয়ে যাতায়াত করলে সংক্রমণ যে কোনও সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে তাঁর শরীরেও। সে কথা কানে তোলেননি আরিফ। নিজের বিপদের কথা দূরতম ভাবনাচিন্তাতেও ঠাঁই দেননি তিনি। অবশ্য বাড়ির সদস্যদের বিপদের কথা ভাবেতন। তাই গত ৬ মাস বাড়িই যাননি। বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে পার্কিং লটে দিনের বাকি সময়টুকু কাটাতেন।
৩ তারিখ থেকে করোনা ভাইরাস কাবু করে ফেলে আরিফ খানকে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। করোনা পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর ভরতি হন দিল্লির হিন্দুরাও হাসপাতালে। সেখানে টানা ৭দিনের লড়াই। শেষমেশ হার মানেন আরিফ। শনিবার হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর। যিনি এতদিন ধরে প্রায় শ দুয়েক রোগীকে জীবনের পথে নিয়ে ছুটেছেন, তাঁকেই এবার অন্যদের অ্যাম্বুল্যান্সে চড়ে যেতে হল মৃত্যুর দুয়ারে। আরিফকে এভাবে মৃত্যুর মুখে পড়তে দেখে সহকর্মীরা বুঝছেন, এ-ই প্রকৃত করোনা যোদ্ধা। ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে হয়ত আরিফ হেরেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিতেছেন, জিতেছেন তাঁর কর্তব্য দিয়ে, আদর্শ দিয়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.