Advertisement
Advertisement

Breaking News

পুলওয়ামা

বদলায় খুশি পুলওয়ামা কাণ্ডে শহিদের পত্নী, ফের মোদিকে প্রধানমন্ত্রী চান বাবা

ছেলে শহিদ হওয়ায় গর্বিত জগদীশবাবু।

Happy over India's air strike, says Pulwama martyr' wife
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:March 30, 2019 12:59 pm
  • Updated:March 30, 2019 12:59 pm

নন্দিতা রায়, বনৌত: গলির গলি, তস্য গলি পার হয়ে গাড়ি থামলে খামার বাড়ির সামনে। সাদা জামা-কাপড় পড়া লোকজন, নামগান হচ্ছে, খামারে বড় বড় বাসন-কোসনে রান্নার তোড়জোড়– শ্রাদ্ধ-শান্তির বাড়িতে যেমনটা হয় আর কি। খাটিয়ায় বসে একদল প্রবীণ হুঁকো টানছে দেখে তাঁদের কাছেই এগিয়ে গেলাম। জানলাম, তেরবি চলছে। অর্থাৎ, মৃত্যুর তেরো দিনে আত্মার শান্তি কামনায় পারলৌকিক ক্রিয়া। হিসাব মেলাতে পারছিলাম না। তেরো দিন তো অনেক আগে পার হয়ে গিয়েছে, তাহলে আবার কী হল! খানিকটা সঙ্কোচ নিয়েই প্রশ্ন করলাম, এটা শহিদ প্রদীপের বাড়ি তো। জবাব মিলল, “এটা তো খামার বাড়ি। বাড়ির সামনে দাঁড়ান, ওঁর ভাই অমিতকে ডেকে দিচ্ছি।”

[আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ তত্ত্ব গড়ে কংগ্রেস, তোপ জেটলির]

Advertisement

১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার সেই জঙ্গি হামলার ঘটনায় শহিদ হয়েছেন প্রদীপ প্রজাপতি। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগর জেলার জাঠ অধ্যুষিত বর্ধিষ্ণু গ্রাম বনৌত। সেখানকারই বাসিন্দা প্রদীপদের পরিবার। বনৌত গ্রাম চিনে পৌঁছাতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। আর গ্রামে পৌঁছে বাড়ি যাওয়া যাবে চোখ বুজে। অমিতের মুখেই শুনলাম, চাচাজি মারা গিয়েছেন, তাঁরই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। দাদার কথা জানতে চাইলে বললেন, “বাড়ি চলুন, বউদির সঙ্গে কথা বলেবেন।” পাশের গলিতেই বাড়ি। বাড়ির সামনেই শহিদ প্রদীপের বিশাল পোস্টার। দোতলার ঘরে দেখা মিলল শহিদের বিধবার। পরিচয় জানতে চাইলেন গম্ভীর স্বরে। জানাতে পরিচয়পত্র দেখতে চাইলেন। সেটি উলটে পালটে কয়েকবার দেখার পর ভীষণ বিরক্তির সঙ্গে বললেন, “আপনাদের সঙ্গে কী কথা বলব বলুন তো! যা বলি তার উলটোটাই তো ছাপবেন!” আশ্বাস পেয়ে অবশ্য কিছুটা নরম হলেন।

Advertisement

২৩ জানুয়ারি ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। ন’ বছর কাশ্মীরেই পোস্টিং ছিল প্রদীপের। তারপর গত ছ’মাস দিল্লিতেই ছিলেন দপ্তরের কাজে। সেইসময় প্রতি সপ্তাহে শনিবার বাড়িতে আসতেন। মারা যাওয়ার দু’দিন আগে ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখেই ডিউটিত জয়েন করেছিলেন। গড়গড় করে বলে যাচ্ছিলেন শর্মীষ্ঠা। কাশ্মীর থেকে ফিরে এসে গরমের ছুটিতে ছেলেদের পড়াবেন বলে বইপত্র কিনতে বলেছিলেন। বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন। পরক্ষণে সামলেও নিলেন নিজেকে। বড় ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। পাশ করে সেই সরকারের তরফ থেকে দেওয়া চাকরিতে যোগ দেবে, জানালেন শর্মিষ্ঠা। রাজনীতির প্রসঙ্গ উঠতে ফের রুষ্ঠ হলেন। বললেন, “এসব নিয়ে রাজনীতি আমাদের একেবারেই পছন্দ নয়। আমার স্বামী শহিদ হওয়ার পাঁচদিনের মাথাতেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি এসেছেন ভাল কথা, সান্ত্বনা দিয়ে গিয়েছেন, ঠিক আছে। আর কী বলব। তবে এটা বলতে চাই, যে চলে গিয়েছে তাঁকে তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার যেভাবে বদলা নিয়েছে তাতে আমরা খুশি। কলেজে মে ঠান্ডাক মিলি হামলোগো কো।” ভোট দেবেন কিনা জানতে চাওয়াতে সম্মতি জানালেন। তারপর ‘বাবুজি সে বাত কিজিয়ে’ বলে শ্বশুরমশাই জগদীশ প্রজাপতিকে দেখিয়ে দিলেন।

ছেলে শহিদ হওয়ায় গর্বিত জগদীশবাবু। জানালেন, তাদের গ্রাম থেকে বহুজন বহুদিন ধরেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে আসছেন। এমকী, ছোট ছেলে অমিতও সেনাবাহিনীতেই ছিল। কিন্তু প্রদীপের জন্যই তিনি বেশি গর্ববোধ করছেন বলতে এতটুকুও গলা কাঁপল না তাঁর। বললাম, আর ক’দিন পরেই তো আপনাদের এখানে ভোট! উনি মনে হল এই প্রশ্নটারই অপেক্ষায় ছিলেন। উৎসাহ নিয়ে বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ। ভোট তো দেবই। মোদিজিকে ভোট দেব। এমন প্রধানমন্ত্রী ভারতে আগে কখনও আসেননি। আমাদের সৌভাগ্য, দেশের মানুষের সৌভাগ্য যে মোদিজির মতো প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি। আগে কেউ ফৌজের জন্য এত ভাবেননি। যা এই সরকার ভেবেছে। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগীজি ভেবেছেন। লখনউয়ে ডেকে আমাদের সম্মান জানিয়েছেন। চাকরির আশ্বাস দিয়েছেন। আর কী করবে বলুন তো! আমরা চাই মোদিজিই আবার প্রধানমন্ত্রী থাকুন।” কথাবার্তার শেষে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে যাওয়ার সময় জগদীশবাবু আরও একবার মোদি বন্দনা করতে ভুললেন না।

[আরও পড়ুন: ইউপিএ জমানায় ১১ বার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল, দাবি কেসিআরের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ