Advertisement
Advertisement

Breaking News

মোদির স্বপ্নের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের ধাক্কা, উচ্ছেদে রুটিরুজি বিপন্ন হকারদের

ঝাঁ-চকচকে সেন্ট্রাল ভিস্তার 'মূল্য' চোকাতে হচ্ছে দরিদ্র হকারদের।

Hawkers lose livelihood due to Central Vista project। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 7, 2022 12:46 pm
  • Updated:May 7, 2022 12:46 pm

সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: উপেনের সেই জমি, যার ওপর রাজার নজর সেই কোন কাল থেকে! যে জমি রাজার চাই-ই-চাই। এই সময় দাঁড়িয়ে গরিব উপেনদের জমি দু’ বিঘাও আর নেই। কমতে কমতে যা দাঁড়িয়েছে কয়েক হাতে। তবু, রাজার চাই।

‘রাষ্ট্র নামক যন্ত্র চালাতে অনেক হ্যাপা। শাসক এত হ্যাপা পোহায়। আর দিন এনে দিন খাওয়া মজদুর এটুকু করবে না!’ সামান্য সম্পদ গরিবের। কিন্তু তাতে কী? রাষ্ট্রের কাজে, জনকল্যাণে তা প্রয়োজন। ঝাঁ-চকচকে সেন্ট্রাল ভিস্তা (Central Vista) হবে। উন্নয়ন। দেশের অগ্রগতি। সব কা বিকাশ। রাষ্ট্রের উন্নতিতে নিজের সম্বলটুকু বিসর্জন দিয়ে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষকে অবদান রাখতেই হবে। এটাই সিস্টেম-এর অলিখিত নিয়ম। সেই নিয়মেই বিকাশ হচ্ছে ঠিক, কিন্তু সব কা? থাকছে প্রশ্ন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মধ্যবিত্তের হেঁশেলে আগুন, কলকাতায় ১ হাজার টাকার গণ্ডি পেরল রান্নার গ্যাস]

উত্তর খুঁজতে বেশি খাটার দরকার একেবারেই নেই। শুধু সময় বার করে যেতে হবে সেন্ট্রাল ভিস্তা চত্বরে। সেইমতো চলে যাওয়া ইন্ডিয়া গেট। বছর তিনেক আগেও যাঁরা এই তল্লাটে এসেছেন, আজকের দিনে এলে কোনও মিল পাবেন না। ট্যুরিস্ট তাও কয়েকজন পৌঁছতে পারছেন ইন্ডিয়া গেট (India Gate), ন্যাশনাল ওয়ার মিউজিয়াম, কিন্তু নিরাপত্তার বজ্রআঁটুনিতে ফেঁসে আছেন ভেলপুরি, ফুচকা, চা, বেলুন, পকোড়া বিক্রেতা থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফার, স্কেচ আর্টিস্টরা। শুরুটা হয়েছিল করোনার হাত ধরে। এখন গরিব, প্রান্তিক মানুষগুলোর সামনে ঝুলছে রাষ্ট্রের ব্যারিকেড। ইন্ডিয়া গেট চত্বরে চলছে সেন্ট্রাল ভিস্তার কাজ। মাটির নিচে নতুন সংসদ ভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, বাসভবন-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনে যাতায়াতের নিশ্ছিদ্র পথ। তাই সুরক্ষার খাতিরেই ‘নো এন্ট্রি’।

Advertisement

অযোধ্যা থেকে দিল্লিতে এসে ৫০ বছরের বেশি চিপস, পপকর্ন বিক্রি করা রাম প্রসাদ থেকে শুরু করে যোগী রাজ্যের হিসমপুর জেলার ভেলপুরি বিক্রেতা শামিম আখতার। অথবা বছর বিশেক ইন্ডিয়া গেটের আশপাশে সানগ্লাস বিক্রি করা গাজিয়াবাদের কিষান বা ঠান্ডা জল, কোল্ড ড্রিঙ্ক বিক্রি করা দিল্লির শাহদরার মুন্না। প্রত্যেকের মুখে শোনা গেল একই ধরনের কথা। কীভাবে সেন্ট্রাল ভিস্তার কারণে তাঁদের পেটে টান পড়েছে, কোনওমতে পরিবার নিয়ে দিন গুজরান করছেন, সেই কথা বলতে বলতে গলা ধরে এল কারও। কেউ বা ইন্ডিয়া গেটের দিকশূন্যপুরে তাকিয়ে চোখ মুছলেন। কেউ বা বাপবাপান্ত করলেন বিজেপির। কেউ আবার প্রার্থনা করলেন দ্রুত সেন্ট্রাল ভিস্তার কাজ শেষ হওয়ার।

[আরও পড়ুন: লাউডস্পিকার বাজানোর জের, গুজরাটের মন্দিরে গণপিটুনিতে প্রাণ গেল ব্যক্তির!]

রাম প্রসাদ বলছিলেন, “যেদিন থেকে বিজেপি এসেছে, সেদিন থেকে আমাদের হাল খারাপ হতে শুরু করেছে। চিপস বিক্রি করে পাঁচ ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এখন ওদের বলে দিয়েছি, আমি আর সংসারে কিছু পাঠাতে পারছি না। তোমরা নিজেদের ব্যবস্থা করে নাও।” চশমা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে কিষান বললেন, “আগে কম করে হলেও হাজার তিনেক বিভিন্ন বিক্রেতা ছিল। এখন খুব বেশি হলে শ’ পাঁচেক। তাও ব্যবসা নেই। ইদের মরশুম বলে তাও কিছু লোক দেখতে পাচ্ছেন। অন্য সময় আসবেন, বুঝবেন কী অবস্থা।”

স্ত্রীকে পাশে নিয়ে ওয়ার মেমোরিয়ালের সামনের ফুটপাথে ভেলপুরি বিক্রি করেন শামিম। শুরুতেই হাতজোড় করে বললেন, “ছবি তুলবেন না প্লিজ। আগে ওই ভিতরে বসে বিক্রি করতাম। এখন ফুটপাথে বসে একটু—আধটু কাজ করছি। তাও রোজ পুলিশের ডান্ডা খেতে হয়। হপ্তা নিলেও মাঝেমধ্যেই এসে তুলে দেয়। কত লোকের কত মাল নষ্ট হয়। এসব ছবি ইন্টারনেটে দিয়ে দিলে না খেতে পেয়ে মরব।” মুন্নার বক্তব্য, “সরকার ফ্রিতে রেশন দিচ্ছে বলে এখনও মরে যাইনি। ছাড়ুন, আপনারা আসবেন, ছবি-ভিডিও তুলে চলে যাবেন, আমাদের কোনও সুরাহা হওয়ার নেই। আগে রোজ পাঁচ-সাতশো টাকা রোজগার করতাম, এখন অনেকদিন তো বউনিও হয় না।”

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা হয়েছে, দিল্লিতে তৈরি হচ্ছে সেন্ট্রাল ভিস্তা। বিরোধীরা যার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। বক্তব্য ছিল, আগে করোনার নাগপাশ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াক দেশ। দেশের অর্থনীতি। তারপর না হয়, এসব হবে। কিন্তু কোথায় কী? কিন্তু এ তো রাজার খেয়াল। রাষ্ট্রের বিকাশের প্রশ্ন। তাই প্রজাদের পেটে এইটুকু টান তো লাগতেই পারে!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ