সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বন্যপ্রাণীদের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। তা কীভাবে আটকানো যায় সেদিকে না গিয়ে এবার সরাসরি গণহত্যার পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। বন্যজন্তু সংরক্ষণের নিয়ে এই বিষয়ে একটি খসড়াও তৈরি হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে নীলগাই, হাতি, বন্য বাঁদরদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং খাদ্যশস্যের ক্ষতি এড়াতে এই পরিকল্পনা। যার প্রয়োগ হলে স্বাধীনতার পর প্রথমবার ভারতে এমন পশু নিধনযজ্ঞ চলবে।
[ডিমের পর এবার ছড়াল প্লাস্টিক চালের আতঙ্ক]
বনের অধিকার কার? বন্যপ্রাণী নাকি মানুষের? এ প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। তুলনায় ক্ষমতাধর হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মানুষের হাতে পর্যুদস্ত হয়ে চলেছে বন্যজন্তুরা। কখনও ফাঁদে আটকে যাচ্ছে, কখনও বিদ্যুতের তার ফেলে বন্যজন্তুদের পরলোকে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে নানা প্রান্তে। দেশের একাধিক রাজ্য থেকে বন্যপ্রাণীদের গতিবিধি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে নালিশ জমছিল। বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলির অভিযোগ ছিল বন্যপ্রাণীদের জন্য চাষের বারোটা বাজছে। ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। এই যুক্তি মেনে গত বছর তিনটি রাজ্যকে নির্দিষ্ট কয়েকটি পশু নিধনের অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্রের পরিবেশমন্ত্রক। যা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হলেও কেন্দ্র পিছু হটেনি। সেই বিতর্কের মধ্যে আরও একটি সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে পরিবেশমন্ত্রক। যার জন্য একটি খসড়াও তৈরি হয়েছে। যেখানে নীলগাই, বন্য শুয়োর এবং বন্য বাঁদর নিধনের প্রস্তাব রয়েছে। মন্ত্রকের যুক্তি, এই তিনটি পশুর সংখ্যা দ্রুতহারে বাড়ছে। তাদের বংশবৃদ্ধি রোধ এবং ভারসাম্য রাখতেই এই পরিকল্পনা। পরিবেশমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘পশু নিধন নিয়ে একটি আইনি এবং বাস্তবসম্মতভাবে পথে হাঁটা হবে।’ পরিবেশমন্ত্রকের এই তোড়জোড় জানতে পেরে ক্ষুব্ধ একাধিক পশুপ্রেমীদের সংগঠন। ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার কর্তা বেলিন্ডা রাইট জানিয়েছেন, ‘বন্যজন্তু নিধনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত যুক্তি না পেলে তারা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।’ এই সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান জে সি কালা বলেন, ‘বাস্তুতন্ত্র এবং বন্য জন্তুদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত’।
[নিয়ম ভাঙায় বাধা, পুলিশকেই চড় বিজেপি বিধায়কের]
ব্যাপক হারে পশু নিধনের নজির দুনিয়ায় নেহাত কম নয়। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে বাইসন, ব্রিটেনে ব্যাডগার, অস্ট্রেলিয়ায় ক্যাঙারু এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় অজস্র হাতি হত্যা করা হয়। উন্নত দেশগুলিতে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে এই কর্মকাণ্ড চলে। কিন্তু ভারতে এধরনের কাজ মূলত সামাজিক চাহিদা থেকে করা হয় বলে অভিযোগ একাধিক পশুপ্রেমী সংগঠনের। ভারতে বেশ কিছু পশু হিন্দু দেবদেবীদের বাহন হিসাবে পরিচিত। সেই আবেগের মধ্যে কাজটা কতদূর এগোবে তা নিয়ে সন্দিহান পরিবেশমন্ত্রকের কেউ কেউ। এই দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যেও এই পরিকল্পনায় গতি বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র।