Advertisement
Advertisement

শেষ ইচ্ছাকে মর্যাদা, শহিদদের পরিবার পেল ভিখারিনির সঞ্চিত অর্থ

মন্দিরে ভিক্ষা করতেন এই ভিখারিনি৷

 Pauper donates life's saving to Pulwama martyrs
Published by: Tanujit Das
  • Posted:February 23, 2019 12:04 pm
  • Updated:February 23, 2019 12:13 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অম্বে মাতার মন্দিরের সিঁড়িতে ভোর থাকতেই এসে বসতেন নন্দিনী। পুজো দিয়ে ভক্তরা বের হলেই এক গাল হেসে জুড়তেন আবদার- ‘ভগবানের এই অভাগা মেয়েটাকে কিছু দিয়ে যা!’ শীত হোক বা গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষাকাল–নন্দিনীর বসার জায়গা বদলাত না। বদলাত না আবদারের সুর এমনকী হাসিটাও। মাস ছ’য়েক হল সিঁড়িটা ফাঁকা। বৃদ্ধা ভিখারিনি মারা গিয়েছেন। তবু বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় শহিদ জওয়ানদের জন্য নন্দিনীর অর্থসাহায্য গিয়ে পৌঁছাল আজমেঢ় প্রশাসনের কাছে। সাহায্যের অঙ্কটাও নেহাৎ ফেলনা নয়। অমিতাভ বচ্চনের মতো সেলিব্রিটিরা যেখানে শহিদদের পরিবার পিছু প্রায় সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা সাহায্য ঘোষণা করেছেন। সেখানে বৃদ্ধা ভিখারিনি নন্দিনীও দিয়েছেন মোট ছ’লক্ষ ৬১ হাজার টাকা। ৪০ জন শহিদ জওয়ানদের পরিজনদের সাহায্যের জন্য।

[জঙ্গি হামলার সময় আদৌ কি শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন মোদি? জানুন সত্যি ঘটনা ]

Advertisement

কিন্তু, কীভাবে? এক, বৃদ্ধা ভিখারিনির কাছে অত টাকা এলো কীভাবে? আর দুই, তাঁর মৃত্যুর পর সেই টাকা শহিদদের পরিবারকে দেওয়ার সিদ্ধান্তই বা নিল কে? “আসলে নন্দিনী মারা গেলেও তাঁর সম্পত্তি গচ্ছিত রাখা ছিল দুই অছির হাতে।” জানিয়েছেন, অম্বে মাতা মন্দিরের পুরোহিত। নন্দিনীর শেষ ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে কাজটি করেছেন তাঁর সম্পত্তির ভারপ্রাপ্ত ওই দুই অছি’ই। সন্দীপ গুর সেই দুই অছির’ই একজন। বৃহস্পতিবার নন্দিনীর টাকা শহিদ পরিবারকে সাহায্যের জন্য প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য, “নন্দিনীর ইচ্ছে ছিল ওই জমানো টাকা, সমাজ বা দেশের কল্যাণে ব্যবহার করা হোক।” কিন্তু গত বছর আগস্ট মাসে নন্দিনীর মৃত্যুর পর সেব্যাপারে ভাবার সময় পাননি দু’জনেই। পুলওয়ামা হামলার পর তাঁদের মনে হয় নন্দিনীর ওই জমানো টাকা শহিদদের পরিবারের সাহায্যার্থে কাজে লাগানো যেতে পারে। আর তা ভাবামাত্রই সম্পত্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন দুই অছি।

Advertisement

[‘গদ্দার সিধু’ পোস্টারে ছয়লাপ জলন্ধর]

খবরটা জানাজানি হতেই হইচই পড়ে যায় মন্দির চত্বরে। সাদা থান পড়া ভালমানুষ চেহারার নন্দিনীর কথা ভোলেননি অনেকেই। নিয়মিত মন্দিরে যাঁরা পুজো করেন, তাঁরা তো নয়ই। এঁদের অনেকেই ছিলেন নন্দিনীর নিয়মিত সাহায্যকারী। রোজ পুজো পাঠের পর অনেকের কাছেই প্রসাদ বাঁধা ছিল নন্দিনীর। তা দিয়েই পেট ভরে যেত। কাপড় ছিঁড়ে গিয়েছে দেখলে কাপড় জোগাতেন মন্দিরের ভক্তরাই। শীতে কম্বল, বর্ষায় ছাতা, গায়ে মুড়িয়ে বসার প্লাস্টিকের চাদরও দিয়ে যেতেন তাঁরাই। তার ওপর দশটা বিশটা টাকা তো মাঝেমধ্যেই জমা হত বৃদ্ধার ভিক্ষাপাত্রে। প্রতিদিন দুপুরে নন্দিনীর কাজ ছিল ওই পাত্র থলিতে ভরে ব্যাংকে যাওয়া। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত পাওয়া টাকার সবটুকুই ব্যাংকে রেখে আসতেন তিনি। এভাবেই অল্প অল্প টাকা নিয়মিত ব্যাংকে রেখে জমিয়ে ফেলেছিলেন ছ’লক্ষ ৬১ হাজার টাকা। নন্দিনীর পুরো নাম নন্দিনী শর্মা। ওই নামেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল তাঁর। যার অছি হিসাবে নন্দিনী নিজেই নিয়োগ করে গিয়েছিলেন তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত দুই ব্যক্তিকে।

[কাশ্মীরের কারাগারে ছড়াচ্ছে জেহাদের বিষ, পাক জঙ্গিদের তিহারে সরানোর আবেদন]

অম্বে মাতা মন্দিরের পুরোহিত জানিয়েছেন, নন্দিনী লুকিয়ে চুরিয়ে বা গোপনে টাকা জমাতেন না। তিনি যে ব্যাংকে টাকা জমান তা মন্দিরে নিয়মিত আসা ভক্তদের অনেকেই জানতেন। তবুও সাদা থান পরা বৃদ্ধার সুরেলা আবদারে ঘায়েল হতেন তাঁরা। ফলে রোজই নন্দিনীর থলি ভরত ভিক্ষার সামগ্রীতে। বৃহস্পতিবার নন্দিনীর ওই টাকা পুলওয়ামার শহিদ পরিবারদের সাহায্যার্থে ব্যবহার হয়েছে শুনে ওই ভক্তরা রীতিমতো খুশি। নন্দিনীর নামে মন্দিরে বিশেষ পুজোও করান তাঁরা। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় রীতিমতো স্মরণসভা বসে নন্দিনীর। ২০১৮-র আগস্টে মৃত্যু হয় এই বৃদ্ধা ভিখারিনির। তবে মৃতু্যর পর তঁার নাম জানল গোটা দেশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ