সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনীকেন্দ্র গোরক্ষপুরে অক্সিজেনের অভাবে ৩০ জন শিশুর মৃত্যুতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কিন্তু, ঘটনার দায় নিতে অস্বীকার করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। উলটে, গোরক্ষপুরের বি আর ডি হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় ওই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কর্তব্যের গাফিলতির অভিযোগ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে। এই ঘটনার পর, এবার দায়িত্ব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন উত্তরপ্রদেশের তিনটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষরা। মূলত হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামো, কাজের সঠিক পরিবেশ না থাকা ও নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপোষণের কারণেই তাঁরা দায়িত্ব ছাড়তে চাইছেন বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, এরইমধ্যে ঝাঁসির মহারানি লক্ষ্মীবাই মেডিক্যাল কলেজে অক্সিজেন সরবরাহের বেহাল দশা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বকেয়া মেটাতে দেরি করাই শুধু নয়, পাঁচ মাস কেটে গেলেও অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থা বাছাইয়ের জন্য টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি।
[কাশ্মীর সমস্যার সমাধান ২০২২-এর মধ্যেই: রাজনাথ]
উত্তরপ্রদেশে ১৪টি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল রয়েছে। এলাহাবাদ, সাহারানপুর, কানপুর, বদাউন ও ওরাই মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া আরও কোনওটিতেই স্থায়ী অধ্যক্ষ নেই। এই পরিস্থিতিতে বেহাল পরিকাঠামো, কাজের সঠিক পরিবেশ না থাকা ও নিয়োগের স্বজনপোষণের অভিযোগে স্বেচ্ছাবসরের আবেদন জানালেন সাহারনপুর মেডিক্যাল কলেজ, ঝাঁসি মেডিক্যাল কলেজ ও আগ্রা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ। সাহারানপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ আনন্দ স্বরূপ বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছাবসরের জন্য আবেদন করেছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। সবচেয়ে সিনিয়র অধ্যক্ষ হওয়া সত্ত্বেও ডিজি পদে আমাকে নিয়োগ করা হয়নি। অথচ অনেক পরে চাকরিতে যোগ দিয়েছে, এমন অনেককেই নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’ উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রশাসনিক পদে তিনি যে আর কাজ করতে চান না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ঝাঁসি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এন এন সেনগারও। গত মে মাসেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছেন তিনি। লখনউয়ের কে জি মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসকের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা দপ্তরে চূড়ান্ত অরাজকতা চলছে। গত ২৩ বছর ধরে দপ্তরের কোনও ডিরেক্টর জেনারেল বা ডিজি নেই। দপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অস্থায়ী ডিজি।
[ছত্তিশগড়ে বিজেপি নেতার গোশালায় অনাহারে মারা গেল ২০০টি গরু!]
বস্তুত, গোরক্ষপুরের বি আর ডি হাসপাতালের ঘটনায় যে প্রশাসনের হুঁশ ফেরেনি, ঝাঁসির মহারানি লক্ষ্মীবাই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ঘটনায় তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বুন্দেলখণ্ড এলাকায় সাতটি জেলার মানুষ চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। এমনকী, মধ্যপ্রদেশ থেকে অনেকে ঝাঁসির মহারানি লক্ষ্মীবাই মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করাতে আসেন। সাতশো শয্যার এই হাসপাতালে একটিমাত্র সংস্থাই অক্সিজেন সরবরাহ করে। গত বছর ও এ বছর মিলিয়ে অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থার বকেয়া টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩৬ লক্ষ টাকা। গোরক্ষপুরের শিশুমৃত্যুর ঘটনা কয়েকদিন পর তড়িঘড়ি গত জুন মাস পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থার প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে মার্চে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও, এখনও অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থা বাছাইয়ের জন্য টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি।
[সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষিকার অশ্লীল ছবি, অভিযুক্ত ৯ ছাত্র]
প্রসঙ্গত, ঝাঁসির মহারানি লক্ষ্মীবাই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু, হাসপাতালে মজুত থাকে মাত্র ৩০টি সিলিন্ডার। এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, যদি কোনও কারণে হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার না আসে, তাহলে মজুত থাকা সিলিন্ডার ব্যবহার করে বড়জোর ১০ ঘণ্টা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতে পারে।
[বাংলা, অসম, বিহারের বন্যা পরিস্থতির জন্য দায়ী চিন?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.