সুব্রত বিশ্বাস: ‘৫০’ হাজার কর্মী রেলের নেতা, কাজের আউটপুট শূন্য। কম আয়ে খরচের বহর বাড়িয়ে রেল ‘লাইনচ্যুত’ হওয়ার মুখে। এই খরচ কমাতে রেলে একাধিক বড় পরিবর্তন আসছে। ক্যাগ (CAG) রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, রেলে ৫০ হাজার কর্মী সংগঠনের নেতা, কিন্তু তাঁদের কাজের আউটপুট ‘০’। এই নেতাদের মধ্যে বহু কর্মী সুপারভাইজার পদে রয়েছেন। যাঁদের অধীনে বহু কর্মী কাজ করেন। এমনকী সেই কর্মীরাও কাজের ব্যাপারে পুরোপুরি উদাসীন।
ফলে ব্যয় সংকোচনের জন্য কর্মী সংখ্যা কমানোর যে প্রস্তাব ক্যাগ দিয়েছে, তাতে আগামী তিন বছরে ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। এরপর আবার ৩০ শতাংশ এবং সর্বমোট ৫০ শতাংশ কর্মী কমিয়ে আনতে চায় রেল। এজন্য একাধিকভাবে স্বেচ্ছাবসরের ফর্মুলা তৈরির ভাবনা রেল মন্ত্রকের। ৫৫ বছর বয়স ও ৩৩ বছর কর্মজীবন অতিবাহিত হয়েছে, এমন কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া কার্যকরী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই সময়ের মধ্যে রেলে যোগ দেওয়া কর্মীদের কর্মদক্ষতা যাচাই শুরু হয়েছে। কর্মজীবনে সক্রিয়তা, ভিজিল্যান্স কেস আছে কি না, ছুটি নেওয়ার রেওয়াজ থেকে শুরু করে একাধিক বিষয় খতিয়ে দেখছেন শীর্ষ আধিকারিকরা।
এই খতিয়ানের নিরিখে যে সব কর্মীকে অদক্ষ মনে হবে, তাঁদের স্বেচ্ছাবসর দেবে রেল। এই ধরনের কর্মীদের তালিকায় কর্মী সংগঠনের নেতারাও থাকতে পারেন বলে রেল সূত্রে খবর। নেতাদের রেলের কাজে সক্রিয়তা শূন্য বলে তাঁদের নিষ্কৃতি দিতে চায় রেল। যদিও কর্মী সংগঠনের নেতারা এই যুক্তিকে একেবারে ভুল বলে জানিয়েছেন। পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিতকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘রেলের খরচ কমাতে একদল নেতাকে ‘অকর্মণ্য’ বলে দেগে দেওয়াটা একেবারে অনৈতিক ও যুক্তিহীন। রেলের কর্মী সংগঠনের নেতারা কম সময়ে নিজেদের কাজ করে চলেছেন। কারণ, আটঘণ্টা করে চক্রাকারে কর্ম বণ্টন হয়। যেখানে একজন কাজ শেষ করেন, অন্যজন সেখান থেকে শুরু করেন। ফলে সেখানে কাজ না করে থাকা যায় না। ক্যাগের এই প্রস্তাব ভিত্তিহীন।’’
পাশাপাশি তিনি এও জানান, প্রতিটি টিকিটে ৭৬ শতাংশ ভরতুকি দেয় রেল। আয় সেখানে বাড়বে কী করে? এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তিনি সড়ক পরিবহণের রেল ভাড়ার তুলনা টেনে রেল যে অনেকটা পিছিয়ে, তাও স্পষ্ট করে দেন। কর্মী সংগঠনের এই নেতার মতে, সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে রেল অনেক কিছুতে ভরতুকি দেয়, ছাড় দেয়। এটাই ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। রেল আধিকারিকদের কথায়, বাজেটে দেখা গিয়েছে, ৬০ শতাংশ খরচ রেল কর্মীদের বেতনের জন্যই বহন করতে হয়। কর্মী সংগঠনের নেতাদের পিছনে যে খরচকে ‘বেহিসাবি’ বলে মনে করেছেন তাঁরা। ফলে দ্রুতই তাতে লাগাম দিতে আগ্রহী রেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.