Advertisement
Advertisement

Breaking News

অপরের অধিকারে হাত নয়, স্বামীজির এই বার্তাই আজ জরুরি

আমরা যেন না ভুলি, এই শিক্ষাটুকু না নিতে পারলে মানবিকতার বৃহত্তর পরিসরটুকুই হাতছাড়া হবে আমাদের৷

 Swami Vivekananda's Sermons still priceless in todays scenario
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 12, 2017 2:54 pm
  • Updated:January 12, 2017 2:54 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কখনও কখনও সময় আসে যখন ধর্মের শাঁখ-ঝাঁঝগুলো ঝনঝনিয়ে বাজে৷ সে আওয়াজ পৌঁছয় সমাজের এ-কোণ সে-কোণে৷ তাতে আপত্তির কিছু নেই৷ কিন্তু মুশকিল হয়, যখন সেই আওয়াজে সমস্ত স্বতন্ত্র স্বরগুলি চাপা পড়তে থাকে৷ স্বাভাবিকতারও একটা নিজস্ব শব্দ আছে৷ ধর্ম যখন নিজেই সমাজের মুরুব্বি সেজে বসে, তখনই তার উচ্চকিত আওয়াজে বাকি সব স্তিমিত হয়ে আসে৷ ঠিক এইখানেই স্বামী বিবেকানন্দকে আশ্রয় করা আমাদের বেশি করে প্রয়োজন হয়ে পড়ে৷

কোনও ধর্মকে যদি সার্থকভাবে ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে হয় তবে তা নিয়ে সর্বোতভাবে মেতে ওঠা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই৷ এ কথা দ্বিধাহীনভাবেই জানিয়েছিলেন স্বামীজি৷ কিন্তু তা হতে গিয়ে যে যে সমস্যা তৈরি হয় তা তাঁর অজানা ছিল না৷ বৈভবের ইতিহাস সত্ত্বেও হিন্দুধর্ম যে সংকীর্ণতার জায়গায় পৌঁছেছিল, তা শঙ্কিত করেছিল স্বামীজিকে৷ যে হিন্দুধর্মের গরিমার কথা তিনি ভিনদেশে বারবার করে শুনিয়ে এসেছেন, তাকে সমালোচনায় বিদ্ধ করতেও তিনি পিছপা হননি৷ সাফ জানিয়েছিলেন, “হিন্দুধর্মের মতো আর কোনও ধর্মই এত উচ্চতানে মানবাত্মার মহিমা প্রচার করে না, আবার হিন্দুধর্ম যেমন পৈশাচিকভাবে গরিব ও পতিতের গলায় পা দেয়, আর জগতে আর কোন ধর্ম এরূপ করে না৷” এই আত্মসমালোচনার পরিসরটুকু আজকেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়৷ ঠিক এইখান থেকেই গণতন্ত্রের ক্ষেত্রটিও প্রস্তুত হয়৷ যে গণতন্ত্র প্রশ্ন করার, সন্দেহ প্রকাশ করার অধিকার দেয়৷ এবং সেখান থেকেই নতুন পথ তৈরি হয়৷ নিজেকে সমালোচনা না করে সর্বোত্তম ভাবার মানসিকতাই মৌলবাদের জন্ম দেয়৷ স্বামীজির দর্শন তাই আগেই তা নস্যাৎ করে৷

Advertisement

(আজও মানুষকে আলোর পথ দেখায় স্বামীজির এই আদর্শগুলি)

Advertisement

বলা বাহুল্য, স্বামীজির আগে ও পরে ধর্ম ও সমাজের সম্পর্কে এই গণতন্ত্রের পরিসর বারবার ক্ষুণ্ণ হয়েছে৷ সামাজিক বিধান আর তার সঙ্গে ধর্ম জড়িয়ে পড়ে-  সমাজের উন্নতি আর ধর্মের প্রসার- দুইই বারবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে৷ সেখান থেকেই নতুন পথ খুলে দেন শ্রীরামকৃষ্ণ৷ যত মত তত পথ- এই বাণীতেই রাখা ছিল গণতন্ত্রের সারসত্যটি৷ সেটিকেই পরে নিজের কাজে সার্বিক প্রতিষ্ঠা দিয়ে গিয়েছেন স্বামীজি৷ ধর্ম ও সমাজের সম্পর্কটি ঠিক কীরকম ভেবেছিলেন স্বামীজি? ১৮৯৪ সালে শিকাগো থেকে লেখা চিঠিতে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছেন৷ তাঁর প্রশ্ন, সমাজের প্রতিটি খুঁটিনাটিতে ধর্মের নাক গলানোক কি দরকার ছিল? কিন্তু যা হওয়ার তা তো হয়ে গিয়েছে৷ এখন কী প্রয়োজন? স্বামীজির কথায়, “এখন দরকার – ধর্ম যেন সমাজ সংস্কার করতে না যান, আমরা  সেজন্যই এ-কথাও বলি, ধর্ম যেন সমাজের বিধানদাতা না হন৷ অপরের অধিকারে হাত দিতে যেও না, আপনার সীমার ভিতরে আপনাকে রাখ, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে৷” আর তাই তাঁর বৈপ্লবিক ভাবনা- ‘অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায়’ হয়ে ওঠা৷ ধর্মের ফলপ্রসূ হতে উঠলে তাকে নিয়ে মেতে উঠতে হবে৷ কিন্তু ধর্ম সেখানে সামাজিক বিধানদাতা নয়৷ অন্যের কণ্ঠস্বর চেপে দেওয়া নয়৷ সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতা নয়৷ ধর্মের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিয়ে তাই তিনি বলেন, ধর্ম হল মানুষের ভিতরে থাকা ব্রহ্মত্বের প্রকাশ৷ তা প্রকাশে তাই সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই৷ দরকার সম্প্রদায়ের৷ যারা ফলের কথা না ভেবে কাজ করে যেতে পারেন৷ আর তাতেই সামাজিক উন্নতি অবশ্যম্ভাবি৷ সামাজিক উন্নতিতে তাঁর তাই মত, ‘ধর্মে একবিন্দু আঘাত না করিয়া জনসাধারণের উন্নতিবিধান৷’ এই সীমারেখাটি যে অত্যন্ত দরকারি তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷

(মোদির নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত বিশ্ব ব্যাঙ্কের)

বস্তুত এই অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায়ের ভাবনার ভিতর যে গণতন্ত্রের পরিসরটুকু উন্মোচন করে দেন তিনি, তাইই পরবর্তী শতকগুলিতে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করেছে৷ বিশ শতকের সবথেকে বড় অর্জন হিসেবে যখন গণতন্ত্রকেই চিহ্নিত করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, তখন আমরা বুঝতে পারি, কোন উদার বিশ্বের ভাবনায় সেদিন ভাবিত করতে চেয়েছিলেন স্বামীজি৷ তাও সময় যত গড়ায় তত ধর্মের গায়ে আবর্জনা জমে৷ ওই সীমারেখা আবার বিলীয়মান হয়ে পড়ে৷ ধর্মে-সামেজ ঠোকাঠুকি লাগে৷ আর শাঁক-ঝাঁজের আওয়াজে সমস্ত স্বর চাপা পড়তে থাকে৷ ঠিক তখনই আমাদের ফিরতে হয় এই আশ্রয়ে৷ ধর্ম ধর্ম নিয়ে মেতে ওঠার আগে আমরা যেন ভুলে না যাই, আমাদের হয়ে ওঠার কথা ওই ‘অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায়’৷  তাঁর ১৫৫ তম জন্মতিথি যেন ফুলের মেলা আর ছোটদের বসে আঁকোয় পর্যবসিত না হয়৷ আমরা যেন না ভুলি, এই শিক্ষাটুকু না নিতে পারলে মানবিকতার বৃহত্তর পরিসরটুকুই হাতছাড়া হবে আমাদের৷

(২১ টাকায় মাছ-ভাতের আস্বাদ দেবে রাজ্য সরকারের ‘একুশে অন্নপূর্ণা’)

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ