নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: ‘অব কি বার ২০০ পার’। এটাই আগামী বছরের বাংলা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির (BJP) অন্যতম স্লোগান। ঠিক যেভাবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) ‘অব কি বার ৩০০ পার’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন, বাংলার ক্ষেত্রেও সেই তাঁরই নির্দেশে এই স্লোগান তোলার সিদ্ধান্ত পাকা।
গতমাসে রাজ্য সফরে এসে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ আসন ঝুলিতে তোলার লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে গিয়েছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই শাহর ঠিক করে দেওয়া এই লক্ষ্যমাত্রাকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নও উঠেছে। কীসের উপর ভিত্তি করে বিজেপি বাংলাতে এই বিপুল সংখ্যক আসন পাওয়ার পরিকল্পনা করছে, তা নিয়ে সকলের মনেই কৌতুহল রয়েছে। বর্তমানে রাজনীতিতে নতুন একটি শব্দের চল হয়েছে– ‘সাইলেন্ট ভোটার’। অর্থাৎ এমন ভোটার যারা কাকে ভোট দেবেন তা জনসমক্ষে প্রকাশিত নয়। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে এই সাইলেন্ট ভোটারদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিস্তর লেখালিখিও হয়েছে।
[আরও পড়ুন: কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে অমিত মালব্যর টুইটকে ‘বিকৃত’ বলে দেগে দিল টুইটার, অস্বস্তিতে বিজেপি]
এমনকী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) দলের সদর দপ্তরে বিহার নির্বাচনের বিজয়োৎসবে বক্তব্য রাখার সময়ে ‘সাইলেন্ট ভোটার’দের ধন্যবাদও দিয়েছেন। বিহারের ক্ষেত্রে সেখানকার মহিলাদেরই ‘সাইলেন্ট ভোটার’ বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে অবশ্য তা পালটেও যেতে পারে। বিহারের মতোই বাংলাতেও এই ‘সাইলেন্ট ভোটার’রাই বিজেপির বৈতরণীকে দু’শো পার করিয়ে দেবে বলে আশা করছেন দেলের কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় বিজেপি সূত্রের খবর, শাহ যে শুধুমাত্র নির্বাচনী প্রচারের হাওয়া তোলার জন্যই ‘অব কি বার ২০০ পার’ স্লোগান ঠিক করেছেন, এমনটা নয়। বেশ কিছু বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই বাংলায় ২০০’র বেশি আসন পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা। শুধু আশাই নয়, ইতিমধ্যে শাহ সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারেও দাবি করেছেন যে বাংলায় তাঁরা এক তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে ক্ষমতা দখল করবেন। সেই সুরেই কথা বলেছেন তাঁর পছন্দের বিজেপির আইটি সেলের প্রধান, বর্তমানে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্যও (Amit Malvya) । দিন কয়েক আগে রাজধানীতে বিজেপির সদর দপ্তরে ঘরোয়া আলোচনায় তিনিও প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেছেন বাংলায় তাঁরা ২০০’র বেশি আসন পাবেন। তবে, কীসের উপর ভিত্তি করে এই দাবি, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তিনি।
ভোটমুখী রাজ্যে লাগাতার নিজস্ব জনসমীক্ষা করানোর উপর জোর দেওয়ার প্রচলন শাহ বহু আগে থেকেই করেছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকেই।
তার পর থেকে রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচন তো বটেই, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে বিজেপি নিজস্ব সমীক্ষা চালিয়েছিল। বাংলার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিজেপির কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর, দুটি সংস্থাকে দিয়ে বাংলায় জনসমীক্ষার কাজ বেশ কিছুদিন আগেই সারা হয়ে গিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে দুই সংস্থা তাদের সমীক্ষার রিপোর্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে জমাও দিয়ে দিয়েছে। জানা গিয়েছে, দুটি রিপোর্টেই বলা হয়েছে রাজ্য বিজেপি ৪০ শতাংশের বেশি (প্রায় ৪২ শতাংশ) ভোট পাবে এবং তাদের আসন সংখ্যা ১৬৫ থেকে ১৭৫-এর মধ্যে থাকবে। এই রিপোর্ট দেখার পরেই তৎপর হয়ে উঠেছেন শাহ।
[আরও পড়ুন: টিকিট বাবদ সংগৃহীত ৫ কোটি টাকা উধাও! বিপাকে ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ কর্তৃপক্ষ]
বাংলা নির্বাচনের দায়িত্ব সামলানোর দায়িত্ব বহু আগে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। বিজেপির ভোট শতাংশ বাড়িয়ে ৪৪ শতাংশের কাছাকাছি করতেই হবে বলে দলের রাজ্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর সেই লক্ষ্যপূরণ করার জন্য ‘সাইলেন্ট ভোটার’দের মন জয়ের পরামর্শ দিয়েছেন শাহ। রাজ্য সফরে দলের নেতা-কর্মীদের পাখি পড়ানোর মতো করে এই মন্ত্রই দিয়েছেন যে মন থেকে সমস্ত রকম ভয় ঝেড়ে ফেলে ময়দানে টিকে থাকলেই ২০০ আসন পাওয়া সম্ভব। উল্লেখ্য, বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার রিপোর্টে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট শতাংশ ৪০-এর নীচে ৩৮ শতাংশ এবং তাদের আসন ৯৫-১০৫-এর মধ্যে থাকবে বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। বাম-কংগ্রেস জোট ১২ শতাংশ ভোট এবং ১৫-২২ টি আসন এবং অন্যান্যরা ৭ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে ৫-৭ টি আসনের মধ্যে থাকার কথা বলা হয়েছে।
Highlights
- গতমাসে রাজ্য সফরে এসে বঙ্গ বিজেপি নেতাদের বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ আসন ঝুলিতে তোলার লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে গিয়েছেন অমিত শাহ।
- বিহারের মতোই বাংলাতেও এই ‘সাইলেন্ট ভোটার’রাই বিজেপির বৈতরণীকে দু'শো পার করিয়ে দেবে বলে আশা করছেন দেলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
- বেশ কিছু বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই বাংলায় ২০০'র বেশি আসন পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা।