দীপ দাশগুপ্ত: পরিসংখ্যানে চোখ পড়লেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, শুক্রবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে মূল লড়াইটা কার-কার মধ্যে হওয়ার আমি আশা করছি। হ্যাঁ, কেকেআরের আন্দ্রে রাসেল-সুনীল নারিনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বনাম আরসিবির বিরাট কোহলি-এবি ডে’ভিলিয়ার্সের ব্যাটসম্যানশিপের।
দু’দলের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে, একটু হলেও কেকেআরে ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার, মানে আজকের ম্যাচের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা বেশি। রাসেল আর নারিন তো আছেই। ক্রিস লিন, রবিন উথাপ্পা, নীতিশ রানা, কুলদীপ যাদবদের মধ্যেও কেউ একটা ঝোড়ো ব্যাটিং বা একটা দুর্দান্ত স্পেল করে ম্যাচের রং পালটে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। গতবছরই চিন্নাস্বামীতে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ডিকের (দীনেশ কার্তিকের ক্রিকেট সার্কিটে ডাকনাম) নাইটদের ছয় উইকেটে জেতা ম্যাচে লিন ৫২ বলে অপরাজিত ৬২ রানের একটা ধুঁয়াধার ইনিংস খেলেছিল। তার আগেরবার ২০১৭-এ চিন্নাস্বামীতে লিনের স্কোর ছিল ২২ বলে ৫০!
আসল কথাটা হল, কেকেআর ইনিংসের স্লগে নেমে রাসেল যে ভয়ংকরভাবে ব্যাট চালিয়ে রানের ফোয়ারা তোলে, সেটা সম্ভব হয় তার আগের ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ডকে একটা মোটামুটি জায়গায় নিয়ে যায় বলেই। এবারই কেকেআরের তিনটে ম্যাচে রাসেল যে দুর্দান্ত পাওয়ারহিটিং করেছে, প্রতিটাতেই ও নামার সময় দলের রান মোটামুটি ভদ্রস্থ ছিল। আবার যদি ওই তিনটে ইনিংসে রাসেলের রানগুলো বাদ দিয়ে দিই, তাহলে এটাও দেখা যাবে যে, বাকিরা সেভাবে ব্যাটিং ইম্প্যাক্ট বলতে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেটা বোঝায়, তা পুরোপুরি দেখাতে পারেনি।
[আরও পড়ুন: বিশ্বরেকর্ডের স্বীকৃতি, গিনেস বুকে নাম উঠল বাংলার সত্যরূপের]
কোহলিদের বিরুদ্ধে আবার আইপিএলে কেকেআর টপ অর্ডারে নারিনের দুর্ধর্ষ ব্যাটিং রেকর্ড। যদ্দূর খবরাখবর রয়েছে, নারিন সম্পূর্ণ ফিট এবং আজ চিন্নাস্বামীতে খেলবে। আর নিশ্চয়ই সবার মনে আছে, দু’বছর আগেই এ মাঠেই কেকেআরের ব্যাটিং ওপেন করে নারিন ১৭ বলে ৫৪ করেছিল। আইপিএলের দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি করেছিল! তারপরের বছর ২০১৮-এ আবার ইডেনে নারিনের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৯ বলে ৫০। আর নারিনের বোলিং নিয়ে স্ট্যাটস-ই যা বলার বলে দিচ্ছে। আইপিএলে শুধু আরসিবির বিরুদ্ধেই ৯৮টা ডট বল করেছে। যেখানে এই সেদিনও তাদের টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ে ছিল ক্রিস গেইল-বিরাট-এবিডি!
গেইল-ঝড় আজ চিন্নাস্বামীতে না থাক, বিরাট-এবিডি এই ম্যাচেও কেকেআরের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। বারো বছর আগে চিন্নাস্বামীতেই আরসিবি বনাম কেকেআর দিয়ে আইপিএলের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই প্রথমবারের জয় থেকে ২০১৮ পর্যন্ত চিন্নাস্বামীতে এই দু’দলের ন’বারের মুখোমুখিতে কেকেআর জিতেছে পাঁচবার। আরসিবি একটা কম, চারবার। তবে বেঙ্গালুরুর এই জয়গুলোতে যে কোহলি-এবি’র অবদান বিরাট সেটা পুরোপুরি বলা যাবে না। আসলে আরসিবি দল প্রতিবার এত পালটে যায় যে, গতবারও এই ম্যাচে ভাল করেছে এমন প্লেয়াররা হয়তো এবার ওদের টিমে নেই। তবে গেইলের পরে বিরাটই কেকেআরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সফল আরসিবি ব্যাটসম্যানও। কিন্তু ১৮ ইনিংসে ৪৭১ রান, তিরিশের কম ব্যাটিং গড়, ১২০-র নীচে স্ট্রাইকরেট ঠিক বিরাটোচিত নয়।
[আরও পড়ুন: একসঙ্গে মাঠে নামবেন বিরাট-মিতালি-হরমনপ্রিত! ব্যাপারটা কী?]
এদিকে কেকেআরের বিরুদ্ধে চিন্নাস্বামীতে এবির সর্বোচ্চ স্কোর ২২। সেটাও ছয় বছর আগে, ২০১৩—এ! কিন্তু তবুও বিরাট ছাড়া আমার মতে আরসিবির অপর ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার এবি-ই। কারণ সেই কথাটা, ফর্ম সাময়িক, ক্লাস চিরকালীন। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও এবি ডে’ভিলিয়ার্সের ক্লাস নিয়ে কোনও কথা হবে না! সবশেষে একটা অন্য কথা বলব। চিন্নাস্বামী ছোট মাঠ। ব্যাটিং পিচ। হাই স্কোরিং ম্যাচের সম্ভাবনা আছে আজ। কিন্তু এটাও সত্যি যে, স্পিনারদের চেয়ে পেসাররা বেশি সাহায্য পায় এখানে। আর কেকেআর বোলিং মূলত স্পিন নির্ভর। ফলে আজকের ম্যাচে কলকাতাকে পুরোপুরি ফেভারিট বলতে পারছি না!