Advertisement
Advertisement
Durgapur Doctor

দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত, ৩ মাস পর ঘুম ভাঙল চিকিৎসকের, জানেন না মা-বাবার মৃত্যুর খবর!

গত জুলাই মাসে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন দুর্গাপুরের চিকিৎসক।

After 3 months Doctor from Durgapur wakes up from coma in kolkata Hospital | Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:November 12, 2021 1:07 pm
  • Updated:November 12, 2021 1:27 pm

অভিরূপ দাস: মাস তিনেক আগে পথদুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন মা-বাবা। জানেন না অবন্তিকা। একই দুর্ঘটনা যে তাঁকেও ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। এক—দুই নয়। টানা ৬২ দিন। মাথায় আঘাত লেগে পড়ে ছিল দেহটা। বুকটাই যা ওঠানামা করছিল।

সব ঠিক থাকলে আজই তাঁকে জানানো হবে নির্মম সত্যটা। চলচ্চিত্রের গল্প নয়। দিনের আলোর মতো সত্য। মাথায় আঘাত পেয়ে টানা ৬২ দিন ঘুমের দেশে ছিলেন এম আর বাঙুর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অবন্তিকা পাল। ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে ‘কোমার’ ঘোর কাটিয়ে আপাতত অনেকটাই স্বাভাবিক এম আর বাঙুর হাসপাতালের ডাক্তার।

Advertisement

গত জুলাই মাসের ঘটনা। দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীনের বাসিন্দা ডা. অবন্তিকা পাল দুর্গাপুরে মামাবাড়ি গিয়েছিলেন। সেখান থেকে গাড়িতে ফেরার পথেই মারাত্মক দুর্ঘটনা। মামা শিবশঙ্কর দত্ত জানিয়েছেন, গলসির কাছে জাতীয় সড়কের উপর মারাত্মক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গাড়ি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মা মণিদীপা পাল , বাবা সুমন্ত পালের। মাথায় গুরুতর চোট পান অবন্তিকা। প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। সেখান থেকে আরও এক নার্সিংহোম ঘুরে কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে। তারপর? হাসপাতালের রিহ্যাবের ডিরেক্টর চিকিৎসক সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোমায় চলে গিয়েছিলেন অবন্তিকা। গ্লাসগো কোমা স্কেল সূচক ছিল থ্রি-টি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ফের শহরে অ্যাপ ক্যাবের দৌরাত্ম্য, গাড়ির চালকের হাতে নিগ্রহের শিকার মহিলা সংবাদকর্মী]

মাথায় আঘাত লাগার পরে রোগী কতটা চেতনায় রয়েছে? তা বোঝা যায় গ্লাসগো কোমা স্কেলের সূচক দেখলে। এই স্কেলে সূচক ৩-এর নিচে নেমে গেলে রোগীর ব্রেন ডেথ হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, অবন্তিকার জিসিএস স্কেলই বলে দিচ্ছিল, রোগীর হাল কেমন।
ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে ডা. অবন্তিকাকে যখন আনা হয়, মুখের চোয়াল ছিল টুকরো টুকরো। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় ম্যান্ডিবুলার ফ্র‌্যাকচার। কোমরের বাঁ দিকের হাড় ভাঙা। ডা. দীপেন্দ্র প্রধানের অধীনে প্রথম ভর্তি হন রোগী। চিকিৎসকরা বলেন, অপারেশন করে কী হবে? কতদিনই বা বাঁচবে। চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন ডা. সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়। অবন্তিকাকে নিয়ে আসেন নিউরো রিহ্যাবে। মুখের চোয়ালে অস্ত্রোপচারে না হলে রোগী মুখ খুলতে পারছিলেন না। শুরু করা যাচ্ছিল না কোমা স্টিমুলেশন প্রোগ্রাম। চোয়াল মেরামতের পর চিকিৎসকের নজর ছিল, কীভাবে দ্রুত রোগীর ঘুম ভাঙানো যায়। এ কাজে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডা. সুচেতা সাহা, ডা. মধুশ্রী সেনগুপ্ত। সেপ্টেম্বরের শেষে প্রথমে একটা চোখ খোলেন। হালকা নাড়ান ডান হাতটা। ডা. সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখে তখন যুদ্ধজয়ের আনন্দ। ধীরে ধীরে বের করা হয় ট্র‌্যাকিওস্টমি । তা—ও বড় সহজ ছিল না। মানসিকভাবে ট্র‌্যাকিওস্টমির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। চলে একাধিক থেরাপি। যার মধ্যে ছিল, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, ল্যাঙ্গোয়েজ থেরাপি। আস্তে আস্তে কথা বলছেন অবন্তিকা।

[আরও পড়ুন: BSF’এর কাজের পরিসর বৃদ্ধি নিয়ে জরুরি বৈঠক, নবান্নে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব]

“আমার বাবা কোথায়? ওরা তো ভয়ঙ্কর বিপদে।” মাঝেমধ্যেই বলে উঠছেন অবন্তিকা। ডা. সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “এই মূহূর্তে পোস্ট ট্রমাটিক অ্যামনেশিয়া ফেজে রয়েছে ও। আগামী ৮ মাসের মধ্যেই স্টেথো কানে হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে পারবে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ