নব্যেন্দু হাজরা: করোনায় বন্দিদশায় এক নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে শরীরে। দিনকয়েক ধরেই শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে অনেকের। গায়ে, হাতে, পায়ে ব্যথা। মন মেজাজটাও যেন ভাল নেই। কিন্তু কেন তা হচ্ছে একবারও ভেবে দেখেছেন? দিনে একবারও বাইরে বেরোচ্ছেন না? ঘরের জানলাও বন্ধ? এমনকি করোনার ভয়ে ঘরে ঢুকতে দিচ্ছেন না রোদও? শিগগিরি জানলা খুলুন। ঘরে আলো-হাওয়া ঢুকতে দিন। বাগবাজারের বাসিন্দা বেসরকারি সংস্থার কর্মী রূপচাঁদ চট্টোপাধ্যায়েরও মন মেজাজ ভাল নেই। জ্বর না থাকলেও কয়েকদিন ধরেই তাঁর শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। পরিচিত এক চিকিৎসককে ফোন করতেই তিনি বললেন, মাস্ক পরে ঘরের বাইরে এসে দিনের বেলায় অন্তত কিছুক্ষণ দাঁড়ান। উঠোন থাকলে তার সামনেটায় একটু হাঁটুন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে আপনিও ঠিক থাকবেন।
কিন্তু করোনার ভরা বাজারে এ কি নতুন অসুখ নাকি! জ্বর নেই অথচ শরীর ম্যাজম্যাজ, গা—হাত—পা ব্যথা। চিকিৎসকরা বলছেন, এই অসুখ নির্ভর করছে আপনার বাসস্থানের উপর। ইতিমধ্যেই কুড়ি দিন লকডাউন পার, গৃহবন্দি অধিকাংশই। তবে ফুরোয়নি লকডাউনের মেয়াদ বরং বেরেছে। তাই যারা ঘর থেকে বাইরে বেরোচ্ছেন না তারাই পড়েছেন সমস্যায়। খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, এই সমস্ত রোগীর অধিকাংশের ঘরেই সূর্যের আলো পৌঁছয় না। দিনের বেলাতেও ঘরে লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়, জানালা একটা। কিন্তু গা ঘেঁষেই মাথা তুলেছে অন্য বাড়ি। তাই আলো প্রবেশ করে না সেখানে। ঘরের বাসিন্দারা যখন কাজে—কম্মে বাইরে বেরোন তখনই তাঁদের শরীরে সূর্যের আলো পৌঁছায়, নচেৎ নয়। কিন্তু বাইরে বেরনো বন্ধ হতেই তাঁদের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে। এই বন্দিদশায় আরও কতদিন থাকতে হবে তাও সঠিক জানেন না কেউ। চিকিৎসকদের দাবি, যাঁদের ঘরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না, তাঁদের শরীরে ভিটামিন ডি (Vitamin-D) পৌঁছয় না। আর তার ফলেই শুরু হচ্ছে সমস্যা। ভিটামিন ডি কমে যাওয়ায় শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। তাছাড়া অন্ধকারে থাকতে থাকতে মানুষকে নৈরাশ্য, হতাশা গ্রাস করছে। এমনিতেই এতদিন গৃহবন্দি থাকায় তাঁদের মধ্যে ডিপ্রেশন আসছে। আর সেই গৃহে আলো না ঢোকায় সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে। আলোর সংস্পর্শে এলে মানুষের এই নৈরাশ্য, হতাশা কেটে যায়। এক নতুন উদ্যমতা জাগে শরীরে। ভিটামিন ডি পায় সূর্যের আলো থেকে।
[আরও পড়ুন:করোনায় ফিকে অসমের আকাশে লাগল বিহুর রং, রাস্তায় নাচ পুলিশকর্মীর]
মূলত উত্তর কলকাতার একাধিক পুরনো বাড়িতে এই সমস্যা প্রকট। তবে শুধু উত্তরের বাড়িই নয়। দক্ষিণ কলকাতারও একাধিক জায়গায় বহু ফ্ল্যাট রয়েছে, যা নিয়ম না মেনেই গায়ে গায়ে তৈরি। সেখানেও এই আলো ঢোকার সমস্যা রয়েছে। যে সমস্যা এখন অসুস্থতার কারণ হিসাবে দেখা দিচ্ছে। যেহেতু সাধারণ মানুষ বাড়ির বাইরে বেরতে পারছেন না। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ, বড় রাস্তায় হাঁটার প্রয়োজন নেই, কিন্তু অন্তত ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে একটু সূর্যের আলো গায়ে লাগানো দরকার। তা না হলে ভিটামিন ডি—র অভাব হবে। তাই সুস্থ থাকতে মনের দুয়ারের সঙ্গে খুলে রাখুন ঘরের জানলাও। আলো-হাওয়া এলে তবেই তো শান দেওয়া যাবে মগজাস্ত্রে।